Skip to content

ঘুরে আসুন ‘সিলেটের সুন্দরবন’

সুন্দরবন কোথায়? এক কথায় উত্তর ‘খুলনায়’। তবে যদি প্রশ্ন করা হয়, সিলেটের সুন্দরবনের নাম কি? পাঠকের কপালে একটু ভাজ পড়াটা স্বাভাবিক বৈকি। পাঠকদের জন্য সিলেটের সুন্দরবনের আদ্যোপান্ত নিয়ে এই আয়োজন। লিখেছেন মাহফুজুল ইসলাম

বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন যা কিনা রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট নামে পরিচিত। বছরে ৪ থেকে ৫ মাস পানির নিচে ডুবে থাকে এই বন। বর্ষায় এর সৌন্দর্য চোখে পরার মতো। এসময়ই দেশি বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে বনটি। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম ছাড়া বাকি সময়টুকুতে কোমর জলে ডুবে থাকা বনটির সৌন্দর্যও নেহাত কম নয়।

বনে ঘোরার একমাত্র মাধ্যম ডিঙ্গি নৌকা। তবে বর্ষা এবং ‘কোমর পানির’ মৌসুমে ঘোরার মধ্যে পার্থক্যটা এই দুই সময়ে এখানে না আসলে বোঝা মুশকিল। ডিঙিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এ বনটি মূলত সাপের জন্য বিখ্যাত। ডিঙ্গিতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই চোখে পরে যেতে পারে গাছে পেঁচিয়ে থাকা কোনো সাপ। আবার কপাল ভালো থাকলে দেখা হয়ে ডেতে পারে একদল বানরের সাথে। তাছাড়াতো টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ির মতো নানান প্রজাতির পাখি বনের ভেতরে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকছেই।

Ratargul

কোথায় এই ‘সিলেটের সুন্দরবন’

সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে, গুয়াইন নদীর দক্ষিণে এই বন অবস্থিত। প্রথমে গাড়ির পথ। তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে বনের কাছাকাছি গিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে বনে ঢুকতে হবে।

যাবেন যেভাবে

রাতারগুল যাওয়ার দুটি পথ আছে। সিলেট এয়ারপোর্টের পেছনের বাইপাস রোডে ফতেহপুর হয়ে হরিপুর দিয়ে যাওয়া যায়। আবার জাফলং দিয়েও যাওয়া যায়। জাফলং দিয়ে যেতে হলে গোয়াইনঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে যাওয়া যায়। ভাড়া নেবে ১২০০-১৫০০ টাকা। সেখান থেকে ডিঙ্গি নৌকায় রাতারগুল। ভাড়া নিবে ৫০০-৮০০ টাকা। এই পথের বিশেষত্ব হলো, নৌকায় যেতে যেতে আপনার সঙ্গী হবে দূরের মেঘালয়ের পাহাড়। আর চারিপাশের ছিমছাম মনোরম পরিবেশ।

তাছাড়াও আরেকটি তুলনামূলক সহজ পথ রয়েছে। সিলেটের আম্বরখানা মোড় থেকে সিএনজি বা অটোরিকশা করে মোটরঘাট যাওয়া যায়। যেতে সময় লাগবে প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা । সেখান থেকে নৌকা রিজার্ভ করেও রাতারগুল যেতে পারবেন। তবে যেদিক দিয়েই যান না কেন, আপনাকে সিলেট হয়েই যেতে হবে।

যে বিষয়গুলো জেনে রাখা জরুরি

রাতারগুল যেতে হলে আপনাকে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ সঙ্গী থাকলে তাকেও।
এই বনে বর্ষায় জোঁক আর সাপের প্রকোপ খুব বেশি থাকে। তাই সতর্ক থাকাটা জরুরি।
যারা সাঁতার জানেন না, তারা সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন।
বনে ঢুকে পানিতে হাত না দেওয়াই ভালো। কারণ বিষাক্ত সব সাপ এখানে ঘুরে বেড়ায়! নৌকায় বসে কোন গাছের ডালে হাত দিতেও সতর্ক থাকুন।
বনে পশু পাখিদের বিরক্ত করা উচিৎ নয়।
ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে জলপথ ছেড়ে বনের ভেতরে প্রবেশের সময় সতর্ক থাকুন।
রাতারগুলে থাকা-খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যাওয়ার সময় হালকা পাতলা কিছু খাবার সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন। আর থাকার জন্য সিলেটেই ফিরে আসতে হবে।

আরো কিছু অল্প কথা

দুপুর টাইমে বনে না যাওয়াই ভালো। যদি যাওয়া হয়, তবে রোদের জন্য ছাতা নিতে পারেন। এক্ষেত্রে খুব সকালে গেলে অনেক পাখি দেখতে পাওয়া যায়। পাখির কিচিরমিচির শব্দে পরিবেশটাই মনে হবে প্রাণবন্ত। আর সকালে আবহাওয়াটাও ঠাণ্ডা থাকে। তাছাড়া শেষ বিকেলের দিকেও যাওয়া যেতে পারে। যখন সন্ধ্যা হয় তখন গাঁ ছমছমানী ভাব আসে।

পরিবহন

রাজধানীর সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ, শ্যামলীসহ বিভিন্ন কোম্পানির এসি-নন এসি বাস ছাড়ে। ভাড়া ৪০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়াও উত্তরা থেকেও এনা পরিবহনের বাসে সরাসরি সিলেট যাওয়া যায়। সূত্র : সময় টিভি

রাতারগুল নিয়ে আরো একটি প্রবন্ধ : বাংলার অ্যামাজন রাতারগুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *