Skip to content

ঘুরে আসুন স্যার সৈয়দ শামসুল হুদার বাড়ি

Hudaব্রাহ্মণবাড়িয়ার যেকজন ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদ উপমহাদেশে বিখ্যাত ও স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নওয়াব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে উপমহাদেশের এই বিখ্যাত রাজনীতিবিদের বাড়িটি। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো এই বাড়িটিকে দেখতে প্রতি বছরই আসেন দেশে বিদেশের বহু পর্যটক।

তবে এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা কেউ এই বাড়ির সঠিক ইতিহাস জনেন না। কেউ বলেন ১৫০ বছর, কেউবা ২০০ বছর, কেউ আবার বলেন তারও আগে নির্মিত হয়েছে বাড়িটি। কালের বিবর্তনেইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা বাড়িটি এখন প্রায় ধ্বংসের পথে। বাড়িটির বাইরের অংশের ২য় তলার ছাদ খসে পরেছে। ভিতরের কাঠের পাটাতন কোথাও কোথাও ভেঙ্গে গেছে। বাড়িটির পলেস্তারা খসে পরছে যখন তখন। তারপরও বাড়িটি একটি অদ্ভুত আকর্ষণ সৃষ্টি করে পর্যটকদের মনে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা বাড়িটি দেখতে আসেন।

বাড়িটির প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ শামসুল হুদার জন্ম হয়েছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার গোর্কণ গ্রামের বিখ্যাত সৈয়দ বাড়িতে ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দে। তার পিতার নাম সৈয়দ রিয়াজত উল্লাহ, আরবি ও ফারসি ভাষার পণ্ডিত ছিলেন। সৈয়দ শামসুল হুদা কলকাতা মাদ্রাসায় অধ্যাপক রূপে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ওকালতি পাশ করার পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের দ্বিতীয় মুসলিম বিচারপতি। আইনশাস্ত্রে তাঁর ব্যাপক পড়াশুনা থাকায় কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ১৯০২ সালে ‘টেগোর প্রফেসর অব ল’পদ প্রদান করেন। টেগোর প্রফেসর হিসাবে তিনি Principles of Crimes in British India’ধারাবাহিক বক্তৃতা প্রদান করেন। ১৯০৮ সালে পূর্ববঙ্গ ও আসাম আইন পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯০৯ সালে ইমপেরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯১২ সালে গভর্নর লর্ড কারমাইকেল কর্তৃক তিন সদস্যবিশিষ্ট যে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল গঠন করা হয়েছিল স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ছিলেন এর সর্বপ্রথম ভারতীয় সদস্য। ১৯১২ সালে তিনি সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সভাপতির পদ অলংকৃত করেন। এছাড়া ১৯২১ সালে প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঐ বছরই শামসুল হুদাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে যে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেখানেও শামসুল হুদা ছিলেন একমাত্র ভারতীয় সদস্য।

এভাবে শামসুল হুদা তৎকালীন সময়ের নানা সম্মানজনক পদে নিয়োজিত হয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নবাব স্যার সৈয়দ শামসুল হুদা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিক্ষা বিস্তারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার নিজ গ্রামে একটি উচ্চ বিদ্যালয় এবং অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সৈয়দ শামসুল হুদাকে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৩ সালে নবাব এবং ১৯১৬ সালে ‘Knight Commander of Indian Empire’ উপাধি প্রদান করেন। ১৯২২ সালের ৭ অক্টোবর এই বিখ্যাত রাজনীতিবিদ মৃত্যুবরণ করেন।

বাড়িটির অবস্থান:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর হতে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে চৈয়ারকুড়ি বাজার। চৈয়ারকুড়ি বাজার হতে ২কিলোমিটার পশ্চিমে গোকর্ণ হাই স্কুল। হাই স্কুল সংলগ্ন নবাব স্যার সৈয়দ শামছুল হুদার বাড়িটি অবস্থিত।

কিভাবে যাবেন:
দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যায়। বাসে গেলে মাধবপুর বাস স্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি অথবা অটোরিকশায় যাওয়া যায়।
সূত্র : সময় টেলিভিশন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *