Skip to content

ঘুরে আসুন হাতিরঝিল

:: কাজী ইশরাত জাহান ::
ঢাকায় নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা কাটিয়ে অবকাশের জন্য সবসময় দূরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই রাজধানীবাসীদের জন্য হাতিরঝিল হয়ে উঠেছে মনোরম এক বিনোদন কেন্দ্র। রামপুরার পরে বিটিভি ভবনের বিপরীত থেকে হাতিরঝিল মেগা প্রোজেক্ট এসে শেষ হয়েছে সোনারগাঁ হোটেলের পাশে।

জায়গার নাম হাতিরঝিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকে। ভাওয়ালের রাজাদের পোষা হাতি রাখা হতো পিলখানায়। সেই সময় গোসল করার জন্য এসব হাতি ঝিলে নিয়ে যাওয়া হতো এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল এলাকা থেকে। আর হাতি গোসল করানোর কারণে ঝিলের নাম হয় হাতিরঝিল।

২০১৩ সালে উদ্বোধন করা হয় এই প্রকল্পটি। বর্তমানে এটি ঢাকার একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, জলাবদ্ধতা ও বন্যা প্রতিরোধ, ময়লা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজধানীর যানজট নিরসন এবং শ্রীবৃদ্ধি করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পাঁচ বছর কাজ করার পর হাতিরঝিলকে গড়ে তোলা হয় বিনোদনের স্থান হিসেবে। সেখানে অনেককিছুই আছে বিনোদনের জন্য।

নৌকা ভ্রমণ
হাতিরঝিলের টলটলে সবুজ পানিতে ভাড়া করতে পারবেন ওয়াটারবাস। আপনি যানজটহীন গুলশান থেকে কারওয়ান বাজারের দূরত্ব অতিক্রম করতে পারবেন এই ওয়াটারবাস ব্যবহার করে, আর পাবেন সুন্দর এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। বর্তমানে ৫টি ওয়াটারবাস চলছে। এক একটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৪৫ জন। নিয়মিত যাত্রীদের সাথে প্রতিদিন বেড়াতে আসে ট্যুরিস্ট। লেকে ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে। টার্মিনাল আছে তিনটা- এফডিসি, গুলশান এবং রামপুরা এলাকায়। ট্যাক্সির ভেতরে আবার একটি মিনি ক্যান্টিনও রয়েছে।

মিউজিকের সাথে ওয়াটার শো
খোলা আকাশের নিচে মনোরম পরিবেশের হাতিরঝিলে সম্প্রতি যোগ হয়েছে রঙ-বেরঙের আলোর সাথে পানির ফোয়ারা। মিউজিকের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে থাকে এসব ফোয়ারাগুলো। সাথে চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন। এর ফোয়ারার পানি ১০ মিটার থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত ওপরে উঠতে পারে। মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন এবং অ্যাম্পিথিয়েটারের বাড়তি বিনোদন উপভোগ করার সুযোগ মিলে বিভিন্ন উৎসবে। এ ছাড়া মাঝে মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা এবং রাত সাড়ে ৯টায় চালু করা হয় এ বর্ণিল ফোয়ারা। ফোয়ারা চালু থাকে ১৫ মিনিটের মতো সময় ধরে। এটি উপভোগ করতে চাইলে তাই সময় মতো যেতে হবে।

লেকের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে গ্রিক ও রোমান সভ্যতার আদলে অ্যাম্পিথিয়েটার। এই অ্যাম্পিথিয়েটারে একসাথে দুই হাজার দর্শক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। আম্পিথিয়েটারের ডিজাইনটি দেখতে পানির ওপর পাপড়ি মেলে থাকা ফুলের মতো। এ উন্মুক্ত থিয়েটারটি রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি নগরবাসীর সাংস্কৃতিক চাহিদা মেটাতে কাজ করবে। আর বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বছরব্যাপী ঐতিহ্যকে তুলে ধরবে ওয়াটার ফাউন্টেন। হাতিরঝিলের আশপাশের গুলশান, পুলিশ প্লাজা, মেরুল বাড্ডা, মধুবাগ ও মহানগর প্রজেক্ট এলাকা থেকে দেখা যায় ১ হাজার ৯৮০ বর্গমিটারের এই রঙিন ফোয়ারা। হাতিরঝিলের গুলশান আড়ং ও পুলিশ প্লাজার মাঝামাঝি অংশে গোলাকার উন্মুক্ত মঞ্চ অ্যাম্পিথিয়েটার থেকেও তা উপভোগ করতে পারবেন।

খাওয়া-দাওয়া
হাতিরঝিলে বেড়াতে যায় এখন অনেক মানুষ। এই শহুরে পর্যটকদের স্বাদ মেটাতেই হাতিরঝিলের নানা স্থানে ফুড কার্ট রয়েছে। ফাস্টফুড ছাড়াও নানাপদ পাওয়া যায় এসব দোকানে। তা ছাড়া, হাতিরঝিল পার করে গুলশানে গেলেই বেশ কাছেই রয়েছে অনেক খাওয়ার দোকান। ওয়াটার বাস কিংবা গাড়িতে করে গেলেই এসব খাওয়ার দোকানের সন্ধান পাবেন। বসার জায়গা নিয়ে চিন্তা নেই কেননা পুরো হাতিরঝিলজুড়েই বসার বেঞ্চ, টুল, সিড়ি ইত্যাদি রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সর্বদা পুলিশ মোতায়েন করা থাকে হাতিরঝিলের বিভিন্ন পয়েন্টে।
ছবি: আলভী, সৌজন্যে: অনন্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *