ভারতের রাজধানী দিল্লি। ভ্রমণবিশ্বে উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন নগরী। ভারতে ভ্রমণীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান। ‘দিল্লি’ শব্দের অর্থ মধ্যযুগীয় শহর। সৌন্দর্য ও স্থাপনার দিক থেকে ভারতের রাজধানী দিল্লি অনেক প্রাচীন। ঐতিহ্যবাহী সব প্রাচীন মোগল স্থাপত্য আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় দিল্লি বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পর্যটন স্থান। মহাভারতের রূপকথার রাজ্য দিল্লি ভ্রমণের আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন আবদুল কাদের
কেন যাবেন
দিল্লির অস্তিত্ব ও প্রাচীন ইতিহাস অনেক পুরনো। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় ও চতুর্থ শতকের। ছোট শহর পুরান কিল্লার ইতিহাস থেকে জানা যায় দিল্লির প্রাচীন শহুরে জীবনযাপনের কথা। প্রাচীন পুরনো দুর্গ, মসজিদ এবং বিভিন্ন রকমের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য আর স্মৃতিসৌধ রয়েছে এই প্রাচীন শহরটিতে। ব্রিটিশ শাসন দিল্লিকে নতুন অবয়ব দিয়েছে। আধুনিক ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রাচীন দিল্লি বর্তমানে ভারত ভ্রমণের কেন্দ্রবিন্দু।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লি যাওয়ার কোনো বাস কিংবা ট্রেন নেই। তাই আপনাকে ভারতের কলকাতা হয়ে দিল্লি যেতে হবে। তবে বিমানে করে সরাসরি প্রাচীন রাজধানী শহরে যেতে পারবেন। এ ছাড়া শ্যামলী পরিবহন বা কলকাতাগামী ট্রেনে করে কলকাতা যেতে হবে। কলকাতা থেকে সরাসরি দিল্লিগামী ট্রেনে করে দিল্লি যেতে পারেন।
ভিসা প্রসেসিং
অনলাইনের মাধ্যমে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভারতীয় ওয়েব অ্যাড্রেস-http://www.ivacbd.com.ভিসা হতে বেশি সময় নেয় না। শুধু ই-টোকেন পেতে একটু সময় নেয়। ঠিকানা : ভারতীয় ভিসা প্রসেসিং সেন্টার, গুলশান-১ ঢাকা। ফোন : ৯৮৯৩০০৬, ৮৮৩৩৬৩২। সাধারণ বীমা ভবন, ২৪-২৫ দিলকুশা রোড, মতিঝিল, ঢাকা। ফোন : ৯৫৫৩৩৭১।
কখন যাবেন
ভ্রমণের জন্য সব সময়ই শীতকাল ভালো। খুব গরমে বা বৃষ্টির দিনের ভ্রমণ সুবিধার হয় না। তবে অক্টোবর থেকে মার্চ মাস হলো দিল্লি ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময়।
দিল্লি ভ্রমণ সুবিধা
দিল্লিতে ভ্রমণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যসব শহরের তুলনায় সহজ। রাস্তাগুলো প্রশস্ত এবং যানজট বিরল। দিল্লিতে বাস ও ট্রেন সার্ভিস ছাড়াও ট্যাক্সি ক্যাব ও অটোরিকশার ব্যবস্থাও রয়েছে।
থাকা-খাওয়া
প্রাচীন নগরী দিল্লি ভারতের অন্যতম পর্যটন স্থান হওয়ায় এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে সব সুব্যবস্থা। পর্যটকদের জন্য নামিদামি হোটেলের পাশাপাশি রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের হোটেল-রেস্টুরেন্ট। এখানকার খাবারের মান যেমন ভালো খ্যাতিও ব্যাপক। এছাড়া রাস্তার পাশের দোকানে লোভনীয় খাবারের কমতি নেই।
দর্শনীয় স্থান
বিশাল আয়তনের দিল্লি শহর দুই ভাগে বিভক্ত। পুরনো ও নতুনের সমন্বয়ে দিল্লির ইতিহাস অনেক পুরনো। মসজিদ, মন্দির, চার্চ কি নেই এখানে! নান্দনিক বাগানসহ প্রতিটি স্থাপনাতেই রয়েছে প্রাচীন সাম্রাজ্যের স্বাদ। পব্ম মন্দির, হনুমান মন্দির, কালকা দেবী মন্দির, লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। এই মন্দিরগুলো শুধু প্রাচীন ও বিখ্যাতই নয়, এর নির্মাণশৈলী এ পর্যন্ত স্থাপত্য শিল্পের আইকন। একইভাবে মসজিদগুলোও মোগল আমলের। বেগমপুরী মসজিদ, জুমা মসজিদ, গুমবড় মসজিদ ও ফতেহপুরী মসজিদ- এখানকার বিখ্যাত স্থাপনা। দিল্লি জামে মসজিদটি অনেক পুরনো কিন্তু বিশাল। মসজিদটির তিনটি বিশাল আকারের প্রবেশদ্বার। মসজিদের মাঝখানেই আছে একট বিশাল মাঠের মতো নামাজ পড়ার স্থান। যেটা নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় ট্যুরিস্ট আর জালালি কবুতরে ভর্তি থাকে। এছাড়া প্রাচীন চার্চের মধ্যে রয়েছে ক্যাথলিক চার্চ, প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চসহ আরও অনেক। প্রাচীন দিল্লির প্রধান আকর্ষণ হলো দুর্গ। ছোট ও বড় সবমিলিয়ে প্রচুর দুর্গ রয়েছে এখানে। দুর্গগুলো অতীতের জীবনযাপনের ধরন ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে।
দুর্গগুলোতে অনেক ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। দিল্লির সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়া গেট অন্যতম। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যেসব ভারতীয় ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছিল তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই গেট তৈরি করা হয় ১৯২১ সালে। দিল্লির অন্য বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো হলো : অভিষেক দরবার সাইট, রাজঘাট, জন্তর-মন্তর, কুতুব মিনার, সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং, রাষ্ট্রপতি ভবন, পার্লামেন্ট ভবন, জাতীয় জাদুঘর, ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্ট, নেহেরু জাদুঘর, রেলযোগাযোগ মিউজিয়াম, আন্তর্জাতিক ডল্স জাদুঘর, ক্রাফ্টস মিউজিয়াম, গান্ধী দর্শন, পুরানা কিল্লা, চিড়িয়াখানা, সফদার জংয়ের সমাধি এবং বাহাই হাউস অব ওয়োরশিপ। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন