হংকং গণচীনের দুটি প্রশাসনিক অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম। ২৬০টিরও বেশি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। হংকংয়ের পূর্বে পার্ল রিভার ডেল্টা, উত্তরে চীনের কুয়াংতুং আর দক্ষিণে চীন সাগর। এক সময় হংকং ব্রিটিশদের প্রাচীন উপনিবেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। দেশটি পৃথিবীর অন্যতম পর্যটন দেশ, যেখানে প্রতি বছর প্রায় ৭ লাখ ভ্রমণপিপাসুর আগমন ঘটে। জানাচ্ছেন- আবদুল কাদের
কেন যাবেন : ব্রিটিশদের প্রাচীন উপনিবেশ হংকং মূলত একটি দ্বীপ নগরী। প্রকৃতি আর প্রযুক্তির সমন্বয়ে হঠিত হংকং সারা বিশ্বের মানুষের কাছে অপরূপ সৌন্দর্যের দেশ হিসেবে পরিচিত। এটি পৃথিবীর অন্যতম দেশ, যার রাজধানী নেই। হংকংয়ের রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়বে বিশাল অট্টালিকা। চীন অধ্যুষিত এই অঞ্চলে দ্বীপটি দুটি ভাগে বিভক্ত- হংকং ও কাউলুন। হংকংয়ের চারপাশেই রয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় পাহাড় ও পাশেই চীন সাগরের নীল জলরাশি। পুরো দ্বীপটি পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত সবুজের মিলনমেলা। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি অসংখ্য বিনোদন কেন্দ্র ও পর্যটন স্থান রয়েছে।
কীভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে হংকং সরাসরি বিমানে যেতে হবে। ঢাকা থেকে ড্রাগন এয়ার সার্ভিসে করে সরাসরি হংকং যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে রাত ১২টায় ছেড়ে ভোর ৪টার মধ্যেই হংকং পৌঁছে যাবেন। হংকং বিমানবন্দরে নেমে আপনি সেখানে ক্যাব পাবেন। এ ছাড়া বাস বা ট্রেনে করেও যে কোনো জায়গায় যেতে পারবেন।
ভিসা প্রসেসিং : হংকং পর্যটন দেশ হওয়াতে ভিসা প্রসেসিংয়ে তেমন কোনো জটিলতা নেই। তবে আমাদের দেশে হংকং অ্যাম্বাসি বাংলাদেশ সব ধরনের ভিসা প্রসেসিং করে থাকে। অনলাইনে নিজেই ভিসা ফরম এন্ট্রি করতে পারবেন। ওয়েব : http://bd.chineseembassy.org/eng/. ঠিকানা : হংকং অ্যাম্বাসি বাংলাদেশ, প্লট নম্বর- ২ ও ৪, অ্যাম্বাসি রোড, ব্লক-১, বারিধারা, ঢাকা। ফোন : +০২ ৯৮৫৬০৬০ ফ্যাক্স : +০২ ৮৮২৩০০৪।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র : সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি। পাসপোর্টের ফটোকপি, ফিরতি বিমান টিকিটের কপি। জাতীয় পরিচয়পত্রের দুই কপি ফটোকপি এবং আবেদনকারী পেশার পরিবর্তন করতে চাইলে চাকরিরত প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক প্রদত্ত পত্র। তিন মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সঙ্গে ব্যাংক সলভেন্সি স্টেটমেন্ট। প্রতি সিঙ্গেল ভিসায় ২ হাজার ৬৫০ টাকা ও ডাবল এন্ট্রি ভিসায় ৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।
থাকা-খাওয়া : হংকং-এ প্রতি বছরই লাখো পর্যটকের দেখা মেলে। হংকং-এর ৩৪৯টিরও বেশি হোটেলের মধ্যে আপনার পছন্দের হোটেলটি নিজেই বাছাই করে নিন। এখানে হোটেলে রুমপ্রতি খরচ করতে হবে ৫০ থেকে ৮০ হংকং ডলার অর্থাৎ (১ হংকং ডলারে বাংলাদেশি ১০ টাকা)। মাঝারি খরচে থাকা-খাওয়াসহ দিনে এক হাজার টাকা হলেই হংকং ভালোভাবে ঘুরে দেখতে পারবেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা : হংকংয়ে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে রয়েছে বাস, ট্রেন, মেট্রো রেল, ট্রাম ও ট্যাক্সি। লাল, নীল ও সবুজ রঙের বাহারি ট্যাক্সি রয়েছে এখানে। লাল ট্যাক্সি সবখানেই যেতে পারে। কিন্তু নীল ট্যাক্সি চলে গ্রামের পথে আর সবুজ ট্যাক্সি শুধু ল্যান্টাও দ্বীপে চলাচল করতে পারে।
দর্শনীয় স্থান : হংকংকে পর্যটন নগরী বলা চলে। প্রাচীন উপনিবেশ হওয়াতে প্রাচীন স্থাপত্য হংকংয়ের ঐতিহ্য। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনেক প্রাচীন মন্দির রয়েছে। রাতের হংকং নিজেকে অপরূপ সাজে তুলে ধরে। আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে আলোকসজ্জার নগরী। পরতে পরতে রং-বেরঙের বাহারি রঙিন আলো হংহংকে নান্দনিক রূপ দেয়। নগরীর ক্লক টাওয়ারটি রাতের হংকংকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। হংকংয়ের ডিজনিল্যান্ড আধুনিকতার অন্যতম উদাহরণ। আধুনিক এই বিনোদনকেন্দ্রটি পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। এ ছাড়া পিক টাওয়ার হলো এখানকার উঁচু পাহাড়ের শৃঙ্গ। সর্বোচ্চ স্থান থেকে নিচে সমুদ্রের ভাসমান জাহাজ, নীল জলরাশি পরিবেশকে মনোহারিণী করে তোলে। আকাশ-সমুদ্র, বৃক্ষ লতাগুল্ম আবৃত ছায়াময় পাহাড়। আর এখানে মাদাম তুসোর জাদুঘর বিশ্বব্যাপী আলোচিত। প্রায় ১০০টি মোমের প্রতিকৃতি সংবলিত জাদুঘরটি অনেক সুন্দর। হলিউড রোডের পাশে মন্দিরের নাম মান মো টেম্পল। টিয়েনত্যান বুদ্ধ, যা বিগ বুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। অত্যন্ত জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ এই মন্দির। বৌদ্ধ আর তার অনুসারীদের মিলনস্থল এই মন্দির। সামনে তুলি হাতে বিদ্যার দেবতা ‘মান চেওং’ আর তরবারি হাতে ‘মো’ যুদ্ধের দেবতার মূর্তি রয়েছে। এখানে পাহাড়ি পথ ধরে চলে চীন সাগর আর তার পাশেই বন। একসময় প্রচুর চন্দনগাছ জন্মাতো, এ জন্য হংকংকে বলা হতো চন্দনের দ্বীপ। স্ট্যানলি বীচে সৌখিন মাছ ধরা অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ ছাড়া পর্যটকদের আকর্ষণ নোং পিং ৩৬০ গন্ডোলা লিফট (ক্যাবল কার)। এই ক্যাবল কারে করে উপর থেকে পুরো হংকং দেখতে পারবেন। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন