Skip to content

চর কুকরি-মুকরির পথে

:: খায়রুল বাশার আশিক ::

ছায়াঘেরা মেঠোপথ, বিশাল ম্যানগ্রোভ বন, পাকা ধানের মাঠ হয়তো দেখা যাবে এ দেশের একাধিক অঞ্চলেই। কিন্তু এ জনপদের দৃশ্যগুলো যেন একটু বেশিই সুন্দর। এ যেন আর্টপেপারে নরম তুলিতে আঁকা কোনো দক্ষ শিল্পীর ছবি। সবুজ রঙে আঁকা সেই দৃশ্যের মাঝেই নীলাভ রঙে বয়ে চলেছে একাধিক নদী-খাল। খালগুলোই সে ছবিটিকে করে তুলেছে আরো প্রাণবন্ত। ছবির জনপদের বাস্তব বাতায়ন দেখতে চাইলে হাঁটতে হবে চর কুকরি-মুকরির পথে।

ছোট্ট এক দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি। চর কুকরি-মুকরির অবস্থান ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায়। যেখানে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদী মিলেছে বঙ্গোপসাগরে, সেখানেই চর কুকরি-মুকরির অবস্থান। চর কুকরি-মুকরি যেতেই চোখ জুড়িয়ে যায়। দৃষ্টিসীমার পুরোটা জুড়ে সবুজ আর সবুজ। শান্ত  প্রকৃতির বুকে নিজেকে বিলীন করে দিতে চাইলে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন এ দ্বীপে।

ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরের এ অঞ্চলটি পরিচিত বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে। সত্যিই, প্রাণ-প্রকৃতির অবাধ বিচরণ দৃষ্টি কাড়ে পুরো দ্বীপ জুড়ে। বন্যপ্রাণীর মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, শিয়াল, উদবিড়াল, বন্য মহিষ-গরু, বনমোরগ, বনবিড়াল প্রভৃতি। শিয়ালের দল, হরিণের পাল আর বন্য মহিষের বিশাল বাহিনী অনায়াসে চোখের আঙিনায় চলে আসবে। এ ছাড়া রয়েছে বক, শঙ্খচিল, কাঠঠোকরা, নীলকান্ত, মাছরাঙা, কোকিল, টিয়া, ঘুঘু, চ্যাগা, গাঙচিল, ঈগল, শকুন, পানকৌড়ি, শামুকখোলা ইত্যাদি নানান প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ। শীতকালে এখানে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। পাখির অবাধ স্বাধীনতা দেখে মুগ্ধ হতেই হয়।

রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন-বনানী। দেখা যায় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, কেওড়া, নারিকেল, বাঁশ ও বেতসহ বৃক্ষের সমাহার। জানা যায়, নব্বই দশকে প্রথম সংরক্ষিত শ্বাসমূলীয় ম্যানগ্রোভ বৃক্ষের বনায়ন শুরু করে বন বিভাগ। সে বনের পর্যায়বর্তন ধারা ও বংশবিস্তার আজ চর কুকরি-মুকরিকে দিয়েছে সবুজ সমারোহ।

এ জনপদের মাঝে বয়ে গেছে একাধিক ছোট খাল। খালের দুধারে ঘন সবুজ গাছের বসতি। খালগুলো যেন আরো একধাপ এগিয়ে দিয়েছে কুকরি-মুকরির সৌন্দর্য। পটলচেরা চোখে মায়াবি কাজল লাগালে যেমন ভালো লাগে, ঠিক তেমন লাগে সবুজের মাঝে বয়ে চলা এই খালগুলো। তুমুল বৃষ্টিতেও খালের বুকে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছোটে গন্তব্যে, আর কণ্ঠে থাকে ভাওয়াইয়া গান। শুনলে মনে হবে, এ কণ্ঠ মাঝির নয়, স্বয়ং প্রকৃতির। এ ছাড়া কুকরি-মুকরি চরের সৈকত নিরিবিলি ও পরিছন্ন। চরের বালিয়াড়ি ধরে ঢাল অতিক্রম করে সামনে এগোলেই বঙ্গোপসাগর। যা যেকোনো পর্যটকের মন ভরিয়ে তোলে সহজেই।

মাছ ধরা ও কৃষিকাজ চর কুকরি-মুকরিতে বসবাসরত মানুষের প্রধান পেশা। তাই এ জনপদ ঘুরে দেখে বোঝা যাবে জীবিকা ও জীবনের জন্য জেলেদের যুদ্ধ।

এককথায় বলা চলে, সাগরের কোলঘেঁষা এ জনপদে রয়েছে ভ্রমণ আনন্দ কুড়ানোর সুখ। বর্ষাকালে কর্দমাক্ত আর গ্রীষ্মকালের ধুলোমাখা পথে হেঁটে হেঁটে পুরো জনপদ ঘুরে দেখতে পারা যেকোনো পর্যটকের ডায়েরিতে স্মৃতিময় অধ্যায় যোগ করে। তাই তো প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকেরা ইদানীং ছুটে যাচ্ছে চর কুকরি-মুকরির পথে।

যাতায়াত

চর কুকরি-মুকরি যেতে নদীপথ সবচেয়ে সহজ উপায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলাগামী লঞ্চে চড়ে ঘোষের হাট টার্মিনালে নামতে হবে। এরপর স্থানীয় যানবাহনে চর কচ্ছপিয়া ঘাট যেতে হবে। চর কচ্ছপিয়া থেকে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ভাড়ায় ট্রলারে চেপে পৌঁছাতে হবে চর কুকরি-মুকরি। প্রতিদিন সকাল ৯টা এবং দুপুর ১২টায় লোকাল ট্রলার চর কুকরি-মুকরির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তাই ঝামেলা এড়াতে নির্দিষ্ট সময়ে চর কচ্ছপিয়া ঘাটে অবস্থান করুন। এ ছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।

থাকা-খাওয়া

চর কুকরি-মুকরিতে ক্যাম্পিং করার জন্য শীতকাল উপযুক্ত সময়। এ ছাড়া বন বিভাগ, কোস্ট ট্রাস্ট এবং ইউনিয়ন পরিষদের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। অবাসিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা খাবারের ব্যবস্থা করে থাকে। সৌজন্যে: এনটিভি। ছবি: লেখক ও সংগ্রহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *