Skip to content

চশমাপরা হনুমান

আ ন ম আমিনুর রহমান
একুশ বছর আগে কাপ্তাই গিয়ে প্রথম দেখি চশমাপরা একদল গেছো ভদ্রলোক। প্রথম দর্শনে অবাক হয়েছিলাম।

এরপর অনেক বছর পেরিয়ে গেছে। নানা ব্যস্ততায় ওদের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ২০১৩ সালে আবার ওদের দেখা পেলাম লাউয়াছড়া, রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে। সর্বশেষ গত মার্চে ওদের ছবি তুললাম লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে।

Hanumanচশমাপরা যে ভদ্রলোকদের কথা এতক্ষণ বললাম, ওরা এ দেশের মহাবিপন্ন প্রাণী, চশমাপরা হনুমান (Spectacles’ Langur, Phayre’s Langur বা Phayre’s Leaf Monkey)। কালো হনুমান বা কালা বান্দর নামেও পরিচিত। কালো মুখমণ্ডলে শুধু চোখের চারদিকে সাদা, দেখলে মনে হয় যেন চশমা পরে আছে। Cercopithecidae গোত্রভুক্ত এই প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম trachypithecus phayrei। এ দেশের তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে আকারে এরাই ছোট। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা এরা।

স্ত্রী-পুরুষনির্বিশেষে মাথা থেকে লেজের গোড়া পর্যন্ত লম্বায় ৫৫-৬৫ সেন্টিমিটার। লেজ ৬৫-৮০ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষগুলো সাত থেকে নয় ও স্ত্রীগুলো পাঁচ থেকে সাড়ে সাত কেজি। চোখের চশমা ছাড়া দেহের বাকি অংশের চামড়া কালো। ঠোঁটের চামড়ার ওপরও সাদার ছোপ রয়েছে। লোমবিহীন মুখমণ্ডল, কান, হাত ও পায়ের পাতা কুচকুচে কালো। পিঠ, দেহের পাশ ও লেজ কালচে ধূসর। বুক, পেট ও দেহের নিচটা সাদাটে ধূসর। নবজাতকের পুরো দেহের লোম কমলা, যা মাস খানেক পর থেকেই ধূসর হতে থাকে।

এরা বৃক্ষবাসী, কখনোই মাটিতে নামে না। ঘুম, চলাফেরা, খাবার সংগ্রহ, খেলাধুলা, গা চুলকানো, বিশ্রাম সবকিছু গাছেই সম্পন্ন করে। সচরাচর একটি শক্তিশালী পুরুষের নেতৃত্বে ১০-১৫টি একটি দলে বিচরণ করে। তবে কোনো কোনো বড় দলে ২-৩টি শক্তপোক্ত পুরুষও থাকতে পারে। প্রতিটি দলের নির্দিষ্ট বিচরণ এলাকা রয়েছে, যেখানে অন্যরা প্রবেশ করে না। একই এলাকায় মুখপোড়া হনুমান ও অন্যান্য বানর প্রজাতির সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ছাড়াই খাবার-দাবার খেয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করে।

এরা গাছের ডালে ডালে ঘুরে পাতা, পাতার বোঁটা, ফুল, ফল ও কুঁড়ি খায়। উদ্ভিদের পরাগায়ন ও বংশবৃদ্ধিতে বেশ সাহায্য করে। বাচ্চারা দীর্ঘ সময় ধরে খেলাধুলা করে। মা বাচ্চাকে বুকে নিয়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যখন লাফিয়ে পড়ে দেখতে বেশ লাগে। পাতা ও গাছে জমে থাকা পানি ও শিশির পান করে তৃষ্ণা মেটায়। ‘চেং কং’ শব্দে ডাকে। অন্যকে ভয় দেখাতে মুখে ভেংচি কাটে।

জানুয়ারি থেকে এপ্রিল প্রজননকাল। স্ত্রী ১৫০-২০০ দিন গর্ভধারণের পর একটি বাচ্চা প্রসব করে। গড়ে প্রতি দুবছরে একবার বাচ্চা দেয়। বাচ্চারা ৪-৫ মাস বয়স থেকেই শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করে। পুরুষ ৫-৬ ও স্ত্রী ৩-৪ বছর বয়সে প্রজননক্ষম হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় ২০ বছর। যেহেতু বর্তমানে এরা মহাবিপন্ন, তাই অতি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই নিরীহ এই প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আর তা আমাদের প্রকৃতির ভারসাম্য কিছুটা হলেও নষ্ট করবে। সৌজন্যে : প্রথম আলো

Sundarban-Website

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *