Skip to content

চা বাগান আর সবুজের সমারোহে ঠাকুরগাঁও

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের এই বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য সৌন্দর্যের নিদর্শন। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে রংপুর বিভাগের এমনই একটি এলাকা ঠাকুরগাঁও। আজ জানব সমভূমিতে নান্দনিক চা বাগানসহ এই এলাকার পর্যটন সম্ভাবনার গল্প।

প্রাকৃতিক লীলাভূমি ঠাকুরগাঁও ছোট জেলা হলেও প্রাচীন ঐতিহ্যসমৃদ্ধ একটি জনপদ। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এখানে যেমন রয়েছে আদিবাসী জনগোষ্ঠী (সাঁওতাল ও উরাও) তেমনি রয়েছে বৌদ্ধ, হিন্দু, মুসলমান জাতি। হাজার হাজার বছর ধরে এরা ভাষা ও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছে। আবার বিভিন্ন শাসকের শাসনামলে বিভিন্নমুখী পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে এ জেলায়। এ জেলার নেকমরদ, রাণীশংকৈল স্থানে সুপ্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন বিদ্যমান। ঠাকুরগাঁও জেলার উত্তরে পঞ্চগড় জেলা, পূর্বে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা, পশ্চিম ও দক্ষিণে ভারতের পশ্চিম বাংলা। এ জেলার মোট আয়তন ১৮০৯.৫২ বর্গ কিলোমিটার।

Thakurgoan

যাতায়াত পদ্ধতি

ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও সড়ক ও রেল উভয় পথেই যাতায়াত করা যায়। ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও জেলায় যে কয়েকটি বাস চলাচল করে কর্ণফুলী পরিবহন তার মধ্যে অন্যতম। কল্যাণপুর, গাবতলী এবং আবদুল্লাহপুর থেকে কর্ণফুলী পরিবহনের যাত্রীরা সরাসরি আন্তজেলা বাসে উঠতে পারেন। ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচল করে ৭৫২/৭৫১ নম্বর লালমনি আন্তনগর ট্রেনটি।

ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড় টি-গার্ডেন

পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা ঠাকুরগাঁওয়ের পাড়িয়া সীমান্তের চা বাগান। চোখ জুড়ানো এই চা বাগান যে কারোরই মন ভালো করে দিতে পারে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পাড়িয়া সীমান্তে নতুন চা বাগান গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সর্ব উত্তরে হিমালয়কন্যা খ্যাত চার-তৃতীয়াংশ ভারত বেষ্টিত জেলা পঞ্চগড়। এখানে রয়েছে সমতল ভূমিতে চা-চাষের দৃশ্যমান বাস্তব উদাহরণ। প্রায় ১২০ একর জমিতে চা বাগান গড়ে ওঠায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিস্তৃতি হয়েছে অনন্য রূপে। দেশের তৃতীয় চা অঞ্চল নামে খ্যাত ঠাকুরগাঁও পঞ্চগড়। এ ছাড়া পঞ্চগড় ঠাকুরগাঁও লালমনিরহাট জেলায় চা চাষের জন্য উপযোগী জমি থাকায় এই চা বাগান আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখানে রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার একর জমি। বর্তমানে সেখানে আবাদ হচ্ছে ৩ হাজার একর জমি। ২০০০ সালে উত্তর জনপদের সীমান্তঘেঁষা জেলা পঞ্চগড় সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিচ্ছিন্ন গোচারণ ভূমিতে চায়ের সবুজ পাতা ভরে রয়েছে। পঞ্চগড় আলোকিত হয়ে উঠেছে চায়ের সবুজ আভায়। ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা এখানে বেড়িয়ে আসতে পারেন হাতে একটু সময় পেলেই। এ ছাড়াও ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। চলুন জেনে নিই।

জমিদারবাড়ী জামে মসজিদ

ঠাকুরগাঁও শহর থেকে পীরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিমানবন্দর পেরিয়ে শিবগঞ্জহাট। হাটের তিন কিলোমিটার পশ্চিমে জামালপুর জমিদারবাড়ী জামে মসজিদ।

সূর্যপুরী আমগাছ

প্রায় ২০০ বছরের পুরনো সূর্যপুরী আমগাছটি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ভারতের সীমান্তবর্তী হরিণমারি গ্রামে অবস্থিত। গাছটি প্রায় ২.৫ বিঘা জমির ওপর বিস্তৃত। গাছটির শাখা-প্রশাখা মাটির দিকে ঝুঁকে গেছে। এটিকে এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ আমগাছ বলা হয়।

ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক

ফান সিটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক অ্যান্ড ট্যুরিজম লি., পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও-এর পৌরভবনের বিপরীতে।

রাজভিটা

পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট ইউনিয়নের হাটপাড়া নামক স্থানে টাঙন নদীর বাঁকে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে যে রাজবাড়ীটির অস্তিত্ব অনুভব করা যায় তা রাজভিটা নামে পরিচিত।

রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী

রাণীশংকৈল উপজেলার পূর্বপ্রান্তে কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ার জমিদার রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী।

হরিপুর রাজবাড়ী

হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে হরিপুর রাজবাড়ী। এই রাজবাড়ী ঘনশ্যাম কুণ্ডুর বংশধরদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।

জগদল রাজবাড়ী

রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পশ্চিমে জগদল নামক স্থানে নাগর ও তীরনই নদীর মিলনস্থলে ছোট একটি রাজবাড়ী রয়েছে।

নেকমরদ মাজার

রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরে নেকমরদ স্থানটি। এলাকাটির মূল নাম হচ্ছে ভবানন্দপুর। আজও নেকমরদকে মৌজা হিসেবে ভবানন্দপুর লেখা হয়। শেখ নাসির-উদ-দীন নামক এক পুণ্যবান ব্যক্তি ধর্ম প্রচারের উদ্দেশে ভবানন্দপুর আসেন। তিনিই পীর শাহ নেকমরদ নামে খ্যাতিমান এবং তারই নামানুসারে ভবানন্দপুর পরবর্তীকালে নেকমরদ নামে পরিচিতি লাভ করে।

মহেশপুর মহালবাড়ী, মাজার ও মসজিদস্থল

ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে উত্তরে মীরডাঙ্গী থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে মহেশপুর গ্রামে মহালবাড়ী মসজিদটি অবস্থিত।

শালবাড়ী মসজিদের ইমামবাড়ী

ঠাকুরগাঁও উপজেলার পশ্চিমে ভাউলারহাটের কাছে শালবনে শালবাড়ী মসজিদটি অবস্থিত।

সনগাঁ মসজিদ

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার কালমেঘ হাট থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে সনগাঁ নামক গ্রামে সনগাঁ মসজিদটি নির্মিত।

ফতেহপুর মসজিদ

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার পশ্চিমে মোড়লহাটের সনি্নকটে ফতেহপুর মসজিদ।

মেদিনীসাগর মসজিদ ও মসজিদের মেহরাব

হরিপুর উপজেলার উত্তরে মেদিনীসাগর গ্রামে মেদিনীসাগর জামে মসজিদটি অবস্থিত।

ধ্বংসপ্রাপ্ত গেদুড়া মসজিদ

হরিপুর উপজেলার গেদুড়া ইউনিয়নে গেদুড়া মসজিদটি প্রায় আড়াইশ বছর আগে স্থাপিত হয়। বর্তমানে পুরনো মসজিদটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। একইস্থানে নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে। এখানে আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত গোলাকার একটি শিলালিপি পাওয়া যায়।

দিঘি

ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখযোগ্য দিঘিগুলো হলো- গড়েয়াহাট দিঘি,লস্করা দিঘি, টুপুলী দিঘি, শাসলা ও পেয়ালা দিঘি, ঠাকুর দিঘি (দানারহাট), আঠারোগাণ্ডি পোখর-ঠাকুরগাঁও উপজেলায়। আধার দিঘি, হরিণমারী দিঘি, রতন দিঘি, দুওসুও দিঘি বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়। রামরাই দিঘি, খুনিয়া দিঘি, রাণীসাগর-রাণীশংকৈল উপজেলায়। মেদিনীসাগর দিঘি হরিপুর উপজেলায়। রাণীশংকৈলের রামরাই দিঘি ঠাকুরগাঁও জেলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বৃহৎ । দিঘিটি পাঁচশ থেকে হাজার বছরের পুরনো হতে পারে। এর সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *