Skip to content

চোখ জুড়ানো সুন্দর তেরাং তৈ কালাই

Bandarban9ফেরদৌস জামান
বিয়ের অনষ্ঠানে এসে কি আর প্রকৃতির স্বাদ গ্রহণের বাসনা পূরণ হয়? তবুও ইচ্ছা যদি দৃঢ় ও পোক্ত হয়ে থাকে তাহলে কিছু একটা করা তো অবশ্যই সম্ভব। ইতিমধ্যেই দুই দিন পেরিয়ে গেছে, হাতে আছে মাত্র এক দিন। খাগড়াছড়ি গিয়ে তেরাং তৈ কালাই না দেখে ফিরে আসা মানে ভ্রমণ অর্থহীন- ঢাকা থেকে বন্ধুদের এমন সব কথা শুনে আর বসে থাকতে পারলাম না।

ব্যাস্ততা যতই থাক, সেখানে না গিয়ে ঢাকা ফিরছি না- সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। বিয়েবাড়ির কেউ তেরাং তৈ কালাই সম্বন্ধে ভালোভাবে জানে না। অথচ একেকজনের মুখ থেকে বেরুচ্ছে নানান সব নিরুৎসাহের উপদেশবাণী। ওদিকে বৃষ্টিও যেন বেরসিক হয়ে উঠল। হোক গে আমার ছিচকাদুনে বৃষ্টি, থাক গে পড়ে বিয়েবাড়ি। আমি চললাম ঝরনা দেখতে। শহর পেরিয়ে গাড়ি এগিয়ে চললো মাটিরাঙ্গা উপজেলার দিকে। উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ, গাড়ির পেছন দিয়ে গরম বাতাস যা বেরুনোর তা তো বেরুলোই, এক সময় মনে হলো গাড়ি বুঝি এবার পেছন দিকে চলা শুরু করবে! হেলপারকে আগে থেকেই ভালোভাবে বুঝিয়ে বলা ছিল। কথা অনুযায়ী নামিয়ে দিল একেবারে জায়গা মত। বৃষ্টি ঝরছেই, হাঁটতে হবে দুই দশমিক এক শূন্য কি.মি.।

ব্যাগে ছাতা বা পলিথিন জাতীয় কিছুই আনা হয়নি। ইট বিছানো উঁচু-নিচু পথ, অল্প খানিকটা হাঁটার পর টিপরাদের পাড়া (ত্রিপুরা), ছোট্ট ছাউনির নিচে আশ্রয় নিয়ে ভাবছি, কী করা যায়? দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যেই কোত্থেক এক মাইক্রোবাস এসে হাজির। ব্রেক কষে বলল, ঝরনা কতদূর, কতক্ষণ লাগবে, গাড়ি নিয়ে কতটা পথ যাওয়া সম্ভব? ইত্যাদি। এই তো সুযোগ! যে করেই হোক কাজে লাগাতে হবে। আমিও যে একই গন্তব্যের পথিক, বুঝিয়ে দেয়ার পর স্বসম্মান আহ্বানে উঠে পড়ি গাড়িতে। আমেরিকা অধ্যায়নরত ভাগিনাকে ঝরনা দেখাতে নিয়ে এসেছে অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য মামা। মূহূর্তেই আমাকে তারা আপন করে নিলেন। আলাপ হলো ভাগিনা শাওন ও অন্যান্যদের সাথে। নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত গিয়ে ঢালু পথের আগেই গাড়ি রেখে পায়ে হেঁটে চললাম।

Bandarban10

পথের সর্বশেষ এবং একমাত্র ঘড়ে কড়া নাড়তেই বেরিয়ে এলেন খর্বাকৃতির রবীন্দ্র ত্রিপুরা। অল্প কথার এক পর্যায়ে নিজ থেকেই তিনি আমাদের গাইড হলেন। খানিক এগিয়েই ঝরনার ছরছর শব্দ কানে ধরা দিল। রবীন্দ্র ত্রিপুরা জানান, তেরাং তৈ কালাই ত্রিপুরা শব্দ, যার অর্থ ‘উঁচু পাহাড় আর জল পড়া’ এমন কিছু একটা হয়ে থাকবে। ঝরনার অপর নাম রিসাং। মারমা শব্দ রিসাং। এর অর্থ buy non prescription viagra online পাহাড় থেকে পানি পড়া। অর্থ যাই হোক, সে নিয়ে আমাদের মাথা ব্যথা নেই, কারণ জল পড়া বা পানি পড়া এমন কিছুর বাইরে অন্য কোনো কিছু যে হবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত। শুরু হল পাহাড় আর জঙ্গল। চোখ জুড়ানো সুন্দর! পাহাড় চূড়ায় জুমঘর, জুমের কচি ফসলে ভরে রয়েছে পাহাড়ের সারা শরীর। মেঘ এসে ক্ষণে ক্ষণে কোমল পরশে সিক্ত করে যাচ্ছে জুমক্ষেত। এ দিকে নিজেদের শরীরের সমস্ত ক্লান্তি যেন নিমিষেই বিদায় নিল।

পার্বত্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নির্মিত পথের শেষ প্রান্ত থেকে মজবুত সিঁড়ি নামিয়ে দেয়া হয়েছে ঝরনাধারায় সৃষ্ট ছড়ার গোড়ালি পর্যন্ত। সিঁড়ির ওপর থেকেই চোখে পড়ে ঘন সবুজের ফাঁক গলিয়ে পাহাড় থেকে নেমে আসা রূপবতী তেরাং তৈ কালাই। যেন দীর্ঘ থান থেকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে সাদা ধবধবে কাপড়। আহা, ঠান্ডা পানি! ঝরনার নেমে আসা পানিতে পা ডুবিয়ে পাথরে পাথরে কদম ফেলে পেরিয়ে গেলাম ছড়া। প্রায় ৪৫ ডিগ্রী কোণ করে নেমে আসা কালো মসৃণ পাথরের মেঝে, একেবারে তার মাথায় ঝড়ে পরছে ওপর থেকে ছেরে দেয়া পানি। পিচ্ছিল মেঝে মাড়িয়ে উঠে যাই ওপরে। শাওনের ইচ্ছা- ঝরনার পানিতে সরাসরি গা ভেজাই। শ্যাওলা পড়া অতি পিচ্ছিল মেঝেতে খুব সাবধানে পা ফেলে এক পা, দুই পা করে হাজির হতে সক্ষম হলাম ঝরনার নিচে।

Bandarban11

এবার আমার ইচ্ছা- বসে পড়ে শরীরটা ছেড়ে দেই যতক্ষণ না ছড়ায় গিয়ে পরি। সাহসী শাওনের সে বাসনা যে ছিল না, তা নয়। ওদিকে আমাদের গতিবিধি সুবিধাজনক না ঠেকায় মামা চিৎকার করে বারণ করতে থাকলেন এবং তাড়াতাড়ি উঠে আসার জন্য বললেন। পানি পতনের শব্দে তার কথা না শুনতে পারলেও বুঝে নিতে সমস্যা হল না তিনি কি বলছেন। অমন পরিস্থিতিতে কে শোনে কার কথা! অমনি বসে পড়ে শরীরটা দিলাম ছেড়ে। কয়েক সেকেন্ডে এসে মিশে গেলাম ছড়ার স্রোতে। অর্জনের উল্লাসে প্রকম্পিত হল চারদিক। অন্যরা উৎসাহ জোগাল- আর একবার করো না প্লিজ! সাহস তো হয়েই গেছে অতএব, চললো কিছুক্ষণ। অতঃপর মামার ধমকানিতে এবার সত্যি সত্যিই উঠে পড়তে হল।

ঝরনায় আসবার সময় পথের অনেকটাজুড়ে বিশেষ করে ছড়ার পাশে পড়ে থাকতে দেখেছিলাম অসংখ্য হাফপ্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার ও ফুলপ্যান্ট। নানা রঙের একেকটা প্যান্ট। হেতুটা বুঝে উঠতে পারিনি! ফেরার সময় সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার এক পর্যায়ে পেছন থেকে কানে আসে খিল খিল হাসির শব্দ। হাসতে হাসতে গলে পড়ছে শাওনের ছোট্ট মামাতো ভাইটা। পেছনে হাত দিয়ে দেখি প্যান্ট তো গেছে, সাথে ভেতরেরটাও! খাবলা ধরে উঠে যাওয়ার মত। শুধু আমরা নই, যারাই উপরুল্লেখিত কর্মটা করে, তাদের সকলের ক্ষেত্রে একই পরিণতি হয়ে থাকে। অতঃপর খুলে ফেলে রেখে যায় সেখানেই।

Bandarban12

ভাবলাম সবকিছু বাদ দিয়ে তেরাং তৈ কালাই- এর নিচে প্যান্টের দোকান দিয়ে বসলে মন্দ হয় না। রবীন্দ্র ত্রিপুরার ঘড়ে এসে শরীর শুকিয়ে নিতে নিতেই পরিবেশিত হল ধোঁয়া তোলা বঙিন চা। ঘড়ের সাথে তার ছোট্ট একটা দোকান, স্বামী-স্ত্রী মিলে চলান। মেঘ মাখা আকাশে থেকে থেকে বিদ্যুতের ঝলক, ওদিকে সূর্যাস্তের আবির রং ছড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের পেছনে। রাস্তার মোড়ে এসে আমাকে তারা নামিয়ে দিয়ে চললো চট্টগ্রামের দিকে। গাড়ির জন্য অপেক্ষা না করে সবুজের মাঝে এঁকেবেঁকে চলা কালো পথ ধরে হাঁটতে থাকলাম। সন্ধ্যা নেমে পড়ছে দ্রুত, পেয়ে গেলাম বিকট শব্দে আসা ভাঙ্গাচোড়া এক চান্দের গাড়ি। চন্দ্রবাহনে সওয়ার করে পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে দু-একটা সন্ধ্যাতারার উঁকিঝুকি দেখতে দেখতে কখন যে প্রবেশ করলাম আলো ঝলমলে বিয়ে বাড়ির সামনে বুঝতেই পারলাম না। সৌজন্যে : রাইজিংবিডি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *