Skip to content

জনপ্রিয় শহরের লুকোনো পরিচিতি

প্যারিস, লন্ডন কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরগুলো পর্যটকের জন্য খুব পরিচিত জায়গা, কিন্তু এই শহরগুলোর রয়েছে বেশকিছু লুকোনো পরিচিতি। চলুন জেনে আসা যাক শহরগুলোর অন্য পরিচিতি— লিখেছেন দেবব্রত ভৌমিক

Dublin

ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড

ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড
সাহিত্যের জন্য ডাবলিন একেবারে অন্যরকম। দারুণ উত্সবমুখর আয়ারল্যান্ডের এটি রাজধানী শহর। এ শহরে কোনো লেখাকে রীতিমতো গ্রিনেসবুকে রেকর্ডভুক্ত হওয়ার মতো করে উদযাপন করা হয়। একেকটি সাহিত্যের আসর এখানে তুমুলভাবে জমে ওঠে। যেন এখানকার সাহিত্য আসরগুলো শুড়িখানার মতো। সাহিত্য আর সুরায় এক অনবদ্য মিল যেখানে উপভোগ করার মতো। ‘ডাবলিন লিটারেরি পাব ক্রলে’ আপনি ঢুকে যেতে পারেন। পানশালা আর সাহিত্য এখানে একাকার। একেবারে আনন্দের মধ্য দিয়ে সাহিত্য। এই ডাবলিন শহরেই আসতেন জেমস জয়েসের মতো বিখ্যাত আইরিশ ঔপন্যাসিক ও কবি সাহিত্যিকরা। এখানেই তারা খুঁজে পেতেন তাদের পরম স্বাদ, মর্ম, অধিবিদ্যিক প্রেরণা। যে কারণে ডাবলিনে গড়ে উঠেছে সুপ্রাচীন সমৃদ্ধ এক বিশাল লাইব্রেরি ‘দ্য ডাবলিন রাইটার্স মিউজিয়াম’। আইরিশদের কাব্য এবং অ্যাংলো-সেক্সন যুগেরও আগের কেলটিকদের ভাষা, গল্প ও কাহিনির শেকড়সহ দেশটির সাহিত্য-ঐতিহ্য গেঁথে আছে এখানে। এই শহরেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘দ্য আবে থিয়েটার’। যেটি ১৯০৩ সালে বিশ্ববিখ্যাত কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটস প্রতিষ্ঠা করেন। এখনও এ প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয় শক্তিশালী সাহিত্যকর্ম। তার সাথে আছে ক্ল্যাসিক ও সমকালীন নাট্যকারদের সৃজনশীল কাজ। এই সাহিত্যের শহরেই আছে মধ্যযুগের প্রাচীন লাইব্রেরি। এখানে আপনি ঘুরে ঘুরে সবই দেখছেন হয়তো, কিন্তু যদি ‘বুক অব কেলস’ না দেখেন তাহলে দারুণ মিস করবেন। এটি একটি আলোকিত প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। যেটি ট্রিনিটি কলেজের লাইব্রেরিতেই সংরক্ষিত আছে।

Edinburg

স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ

এডিনবার্গ, স্কটল্যান্ড
এডিনবার্গে ঢুকতেই অন্যরকম আবেশে যেন সবকিছু ছুঁয়ে যায়। আর দশটা শহরের মতো এর পরিবেশ এক রকম নয়। একটা গম্ভীর ভাব সবখানে অনুভব হবে। এর সাথে নিরিবিলি এই শহরটিতে ঢোকার ব্যাপারটিও একদমই আলাদা। বই ছাড়া তাতে ঢোকার কথা যেন কল্পনাই করা যায় না। আপনি ঘুরতে চান তাতে কি, এমন ভাব মেজাজের ছোট্ট এই পাঁচশ’রও বেশি উপন্যাস আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও অন্য জগতে নিয়ে যাবে। আঠারো শতকের রবার্ট বার্নস থেকে শুরু করে আধুনিক কাল পর্যন্ত বিখ্যাত সবার বই পাওয়া যায়। আয়ান রাঙ্কিন, আলেকজান্ডার ম্যাককল স্মিথসহ অনেকের লেখা বই আছে। এডিনবার্গ বইমেলা অবশ্য ঘুরে বেড়াবার মতো, যদি আপনার যথেষ্ট সময় না থাকে তবে সোজা ঢুকে পড়েন সতেরো শতকের রাইটার মিউজিয়ামে। বিপুল পরিমাণ বইয়ের সমাহার এডিনবার্গের তিনপাণ্ডব রবার্ট বার্নস, স্যার ওয়াল্টার স্কট, রবার্ট লুইস স্টিভেনসনের মতো বড় বড় কবি-সাহিত্যিক জ্ঞান গুণীদের উত্সর্গ করা হয়েছে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের একটি চার্চ

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের একটি চার্চ

সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া
রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সেন্ট পিটার্সবার্গ। খুবই প্রাণবন্ত, জাঁকজমকপূর্ণ আর নিও-ক্ল্যাসিক্যাল মানের এই শহর। এর সাহিত্যের ইতিহাসের একটি অন্ধকার দিকও আছে। মানে অপরাধ আর বিচারের উপাদান দিয়ে পিটার্সবার্গের যে সাহিত্য গড়ে উঠেছে সেটিই তার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। ফিওদর দস্তয়ভস্কি’র বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ‘ক্রাইম এন্ড পানিসমেন্ট’-এর মুখ্য চরিত্র চরম ভয়ঙ্কর রাসকলনিকভের তত্পরতায় তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে। পিটার্সবার্গের সাহিত্যে দস্তয়ভস্কির এই মহাকাব্যিক উপন্যাসের কন্টেন্টই পরবর্তীতে শক্তিশালী ধারা হয়ে ওঠে। দস্তয়ভস্কির বসবাসও এই পিটার্সবার্গেই। এখানেই তিনি তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন। দ্য ব্রাদার্স কারমাজোভ এখানেই তিনি রচনা করেছেন। শিল্পীর তুলিতে হাল-চাষ করছেন রাশিয়ান সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ লিও তলস্তয়, একই শতকে জন্ম নেওয়া দস্তয়ভস্কি, তলস্তয় ও গোর্কির কারণে রাশিয়া বিশ্বসাহিত্যের এক চিরন্তন বিস্ময় আলেকজান্ডার পুশকিন পিটার্সবার্গের অন্যতম প্রধান সাহিত্য ব্যক্তিত্ব। মাত্র ৩৭ বছর বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। অল্প সময়ে তিনি খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ইউজেন ওনেজিন তার বিখ্যাত সাহিত্য কর্ম। দ্য আলেকজান্ডার পুশকিন মেমোরিয়াল অ্যাপার্টমেন্ট মিউজিয়াম তারই স্মৃতিতে গড়ে উঠেছে। ‘লিটারেরি ক্যাফে’ এই শহরের সাহিত্যিকদের অন্যতম আড্ডা ও আসরের জায়গা। জীবনের শেষ ডিনারটি এই লিটারেরি ক্যাফেই করেছিলেন পুশকিন। শেষ আসরটিও এখানেই করেন এবং তার জীবনের মর্মান্তিক বিদায়ও এই ক্যাফেতেই। দুই পক্ষের এক সংঘাতের সময় তিনি গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন

টাওয়ার ব্রিজ, লন্ডন

লন্ডন, ইংল্যান্ড
লন্ডন বা বিলেতের নাম জানে না এমন মানুষ আজকাল খুব কমই পাওয়া যাবে। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে পুরোনো এবং আধুনিক এ শহর নানা কারণে বিখ্যাত। কিন্তু পড়াশোনা, জ্ঞান চর্চা ও সাহিত্যের জন্য এ শহরের নাম-ডাক অনেক প্রাচীন। লন্ডনে সাহিত্যের অনেক এলাকা আছে, জায়গা আছে, যেটার তালিকাও বেশ লম্বা হতে পারে। প্রাচীন থেকে আধুনিক নানা সাহিত্যের জন্য পরিভ্রমণটাও সে কারণে প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। লন্ডনের আগের দিনের সাহিত্য যেমন—গল্প উপাখ্যান, যা হ্যারি পটারের সাতটি দুঃসাহসিক কাহিনির চেয়েও অনেক দীর্ঘ হতে পারে। লন্ডন শহর এখনও শেকসপিয়রের রোমিও জুলিয়েটে মগ্ন এক সপ্তাহে শেষ করার জন্য কম করে হলেও একশ’টি বইয়ের তালিকা বলা যাবে। তার মধ্যে তো অবশ্যই শেকসপিয়র আর চার্লস ডিকেন্সের নাম থাকবেই। যারা শার্লক হোমসের ভক্ত তারাও ভ্রমণ করতে পারেন গুপ্ত পায়ে এ শহরে। আর আপনি যদি অন্য রকম হন তবে আপনি জেমস বন্ডের কাছেও নত হতে পারেন। ডিউক বারের কাছে এসে আপনি চাইলে আপনার সাহিত্য রুচি কিছুটা বদলে নিতে পারেন। আর ব্রিটিশ লাইব্রেরির কথা তো বলাই বাহুল্য। তবে আপনার মন মতো সাহিত্য-রত্নগুলো আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ এখানে আপনার প্রত্যাশার বইটি একবারে সামনেই সাজিয়ে রাখা হয়েছে, এমনটা নাও হতে পারে।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ওয়াশিংটন ডিসি

লাইব্রেরি অব কংগ্রেস, ওয়াশিংটন ডিসি

ওয়াশিংটন ডি.সি.
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। শহরটিতে বইপোকাদের সবচেয়ে বড় ভিড় জমে ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এ। ১৮ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরিটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বৃহত্তম লাইব্রেরি। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের সুরম্য অট্টালিকাই এর সাহিত্য ও গঠনগত তাত্পর্য বলে দেয়। ভবনটি দেখলে এটির প্রধান পাঠকক্ষও দেখতে ইচ্ছে করবে, যা অত্যন্ত বিলাসবহুল। পাঠকক্ষের সৌন্দর্য বর্ধনে ব্যবহার করা হয়েছে নকশা খঁচিত কাঁচ, মার্বেল এবং কক্ষের দেওয়ালেও ঘটেছে অঙ্কন শিল্পের অসাধারণ প্রকাশ। ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় বইমেলা ওয়াশিংটনের সাহিত্যপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ওয়াল্ট ওয়াইটম্যান, ল্যাংসটন হিউজ এবং আরও অনেক চারণ কবি। শহরের ‘পলিটিক্স অ্যান্ড প্রোজ’ নামক বইয়ের দোকানে নিয়মিত লেখকদের আড্ডাও বসে। এছাড়া নতুন নতুন সাহিত্য আলোচনা নিয়েও মুখর থাকে দোকানটি। কেবল মাত্র সাহিত্য আড্ডার জন্য ‘ক্যাফে অ্যান্ড গ্রিল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান শুক্র ও শনিবার ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সৌজন্যে : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *