
পুতুলের মাথায় খোঁপা করে রাজধানীর রাস্তা, স্কুল ও কলেজের সামনে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেন সোহেল রানা।
মানসুরা হোসাইন
চায়না ম্যাজিক ব্যান্ড। একটি কিলিপে (ক্লিপ) ২২ ডিজাইন। সবকিছুর ক্যাটালগ আছে। স্কুল খোঁপা, কলেজ খোঁপা, গায়েহলুদ খোঁপা, রান্নাঘরের খোঁপা, মৌসুমি খোঁপা, কোয়েল মল্লিকের ডিজাইন, রানী মুখার্জির খোঁপা। অন্যের মাথায় দেখতে হবে না। নিজের বউয়ের মাথায় দেখতে পাবেন…মুখে কথা বলছেন, আর পুতুলের কৃত্রিম চুলে ক্লিপ দিয়ে একটার পর একটা খোঁপা করছেন সোহেল রানা। চারপাশে বিভিন্ন বয়সী পুরুষের ভিড়। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন খোঁপা করা।
নেত্রকোনার সোহেল রানার পেশা এটি। এভাবে ঘুরে ঘুরে পুতুলের মাথায় খোঁপা করে সোহেল রানা দুই বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা, স্কুল ও কলেজের সামনে ক্লিপ বিক্রি করেন। এ দিয়েই চলে তাঁর সংসার।
গতকাল সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে সোহেল রানাকে ঘিরে জটলা লেগে যায়। সোহেল রানার কানে প্লাস্টিকের একটি লাল ও সবুজ রঙের ফুল। একেকটা খোঁপা শেষ করে খোঁপায় ফুল গুঁজে দিয়ে দর্শকদের দেখাচ্ছিলেন। একটি লোহার স্ট্যান্ডের ওপরে লাল-সবুজ জামা গায়ে পুতুলটি বসানো। পুতুলের কোমর পর্যন্ত চুল। ক্লিপ দিয়েই চুলগুলো কৌশলে আঁচড়ে খোঁপা করতে হয়।
দর্শকদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জের আবদুল আউয়াল। তিনি প্রাইভেট ট্যাক্সি চালান। দেখতে দেখতে একসময় একটি ক্লিপ ২০ টাকা দিয়ে কিনলেন। কার জন্য কিনলেন জানতে চাইলে দাড়িতে সাদার ছোপ লাগা আবদুল আউয়াল এক গাল হেসে জানালেন, বউ মাজেদা বেগমের জন্য ক্লিপটি কিনলেন। এভাবেই অনেকেই স্ত্রী বা মেয়ের জন্য ক্লিপ কিনছিলেন। কেউ কেউ অনেকক্ষণ দেখে চলে গেলেন। সোহেল রানা জানালেন, তাঁর স্ত্রী রোখসানা আক্তার ও ১০ মাস বয়সী একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। আগে বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করতেন। একদিন রাজধানীর কমলাপুরে গোপালগঞ্জের এক ভদ্রলোককে এই ব্যবসা করতে দেখে উৎসাহ জাগে। শিখতে চাইলে তিনি শেখান। তারপর ব্যবসায় নামা।
সোহেল রানা দুই বছর আগে পুতুলটি কেনেন ৬ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে। তারপর প্রতিদিনই পায়ে হেঁটে বিভিন্ন স্থানে যান। দিনে দুই-তিন হাজার টাকা করে আয়। সৌজন্যে : প্রথম আলো