Skip to content

জ্যৈষ্ঠে ঈশ্বরদী

Pabna

মুস্তাফিজ মামুন
জ্যৈষ্ঠ মাস। পাক ধরেছে ঈশ্বরদীর লিচু বাগানে। যে দিকেই চোখ যায় ডাল ভরা লাল লিচু চোখে পড়ে ঈশ্বরদীর সর্বত্র। মাইলের পর মাইল লিচু বাগান এখানে। স্বাদে আকারে বেশ ভালো হওয়ায় এখানকার লিচুর সুনাম দেশজুড়ে। লিচু বাগান ছাড়াও ঈশ্বরদীর আশপাশে ভ্রমণের জন্য অনেক জায়গা আছে। জ্যৈষ্ঠের এই সময়ে ঘুরে আসতে পারেন জায়গাটি থেকে।

নাটোরের বনপাড়া ছেড়ে পাবনার মহাসড়কে প্রবেশ করলেই চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। সড়কের দুইপাশে শত শত লিচু গাছ। ডালে শোভা পাচ্ছে থোকা থোকা পাকা লিচু। এ দৃশ্য ঈশ্বরদীর অন্যান্য জায়গায়ও। ঈশ্বরদীর লিচু চাষের প্রধান এলাকা হলো জয়নগর, মিরকামারী, চরমিরকামারী, মানিকনগর, ছলিমপুর, সাহাপুর, ভাড়ইমারী, জগন্নাথপুর, বক্তারপুর বড়ইচড়া, শিমুলচড়া ইত্যাদি। এসব এলাকার তিন হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয় বাণিজ্যিকভাবে। ঈশ্বরদীতে বেদানা, বোম্বাই, চায়না-১, মোজাফফরপুরী, বারী -১ সহ বিভিন্ন জাতের লিচুর আবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় বোম্বাই জাতের লিচু। ঈশ্বরদীতে এখন বাগানে বাগানে লিচু পাড়ার ধুম। পরিবারের সবাই ব্যস্ত গাছ থেকে লিচু পেড়ে তা বাজারের জন্য প্রস্তুত করতে। পাইকাররাই বাগানে এসে লিচু কিনে নিয়ে যান। এখানে লিচু বাগানে বেড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পছন্দসই লিচু কিনে খেতে পারবেন কিংবা সাথেও নিয়ে আসতে পারবেন।

ঈশ্বরদীর লিচু বাগান বেড়ানো শেষে বেড়াতে পারেন এখানকার দর্শনীয় কিছু জায়গায়। ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশীতে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রধান কার্যালয়। এখানে দেখা যাবে প্রাচীন রেল ইঞ্জিনসহ আরও রেলওয়ের আরও অনেক পুরোনো নিদর্শন। এ ছাড়া পাকশীতে আছে ব্রডগেজ রেল স্টেশন। পাকশীতে আছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। অবস্থিত পদ্মা নদীর ওপরে নির্মিত এ সেতুর নাম হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। ১৯১০ সালে শুরু করে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯১২ সালে। ১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সর্বপ্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এ সেতুতে রেল চলে। পরে ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ লর্ড হার্ডিঞ্জ সেতুটির উদ্বোধন করেন। প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইস্পাত নির্মিত এ ব্রিজটি তৈরিতে তত্কালীন প্রায় ৩ কোটি ৫১ লক্ষ ৩২ হাজার ১শত ৬৫ টাকা ব্যয় হয়। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর মর্টারের আঘাতে এর বারোতম স্প্যানটি ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সেটি আবার সংস্কার করা হয়। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশাপাশি প্রায় তিনশ মিটার সমান্তরাল দূরত্বে পদ্মা নদীর ওপরে অবস্থিত লালনশাহ সেতু। প্রায় ১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১ মিটার প্রশস্ত এ সেতুটি ২০০৪ সালে চালু হয়। এ অঞ্চলের বাউল সম্রাট ফকির লালনের নামে এর নামকরণ করা হয়। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে শীতে এ সেতুর নিচে থাকে ধূ ধূ বালচর। বর্ষায় প্রমত্তা পদ্মা। বর্ষা কাছাকাছি হওয়ায় এ সময়ে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করেছে।

Pabna2

কীভাবে যাবেন
ঈশ্বরদী ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো কয়েকজন মিলে একটি গাড়ি নিয়ে যাওয়া। ঢাকার যে কোনো রেন্ট এ কার সার্ভিসে সারাদিনের জন্য একটি মাইক্রোবাস পাওয়া যাবে ৩০০০-৪০০০ টাকায়। এর বাইরে লাগবে তেল, কিংবা গ্যাস, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল খরচ। এ ছাড়া ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী থেকে ঈশ্বরদীর বাস সার্ভিস আছে। এ পথে চলাচলকারী সবচেয়ে ভালো বাস হলো ঈশ্বরদী এক্সপ্রেস, পাবনা এক্সপ্রেস ও সনি এক্সপ্রেস। এসব বাসে ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রাজশাহী থেকে কপোতাক্ষ ও মধুমতি এক্সপ্রেস, খুলনা থেকে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস এবং সৈয়দপুর থেকে রূপসা এক্সপ্রেসে ঈশ্বরদী আসতে পারেন। ঢাকা থেকে ঈশ্বরদীর ট্রেনের ভাড়া হলো তাপানুকূল বার্থ ৮০৫ টাকা, তাপানুকূল সিট ৫৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণি বার্থ ৫৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণি সিট ৩৬০ টাকা, স্নিগ্ধা শ্রেণি (এসি চেয়ার) ৪৫০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৭০ টাকা, শোভন ২২৫ টাকা।

কোথায় থাকবেন
ঈশ্বরদীতে থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে আছে হোটেল ফয়সাল, ঈশ্বরদী ও উত্তরা। এ শহরে তৃপ্তি ও আল-আমীন রেস্তোরাঁর খাবার অপেক্ষাকৃত ভালো। এ ছাড়া বেশি খরচ করে থাকতে চাইলে পাকশী রিসোর্টে থাকতে পারেন। জায়গাটিতে থাকা এবং খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পাকশীতে অফিসার্স রেস্টহাউস বা ভিআইপি রেস্টহাউসেও থাকতে পারবেন। সৌজন্যে: ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *