Skip to content

ট্রিপ টু বাংলাদেশ

প্রায় ১২ বছর আগের কথা। সে সময় মাহমুদ হাসান খান একটি ইমেইল পান এক অস্ট্রেলিয়ানের কাছ থেকে। তিনি জানান বাংলাদেশ নিয়ে ইন্টারনেট জগতে খুব একটা আপডেটেড তথ্য নেই। তাই মাহমুদ যেন ‘লোনলি প্লানেটের ট্র্যাভেল ফোরাম’-এ গিয়ে হবু ট্র্যাভেলারদের তথ্য দেন। সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে করা ট্র্যাভেলারদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। এসব ট্র্যাভেলাররা ঢাকা এসেই তার সাথেই যোগাযোগ করে। একসাথে চা খান, বাসায় মাঝে মাঝে ডিনার করান, তাদের ট্রিপ প্ল্যান করে দেন, ট্রেন বা প্লেনের টিকেট করে দেন এমনকি মাঝে মাঝে গ্রামীণ ব্যাংকে গিয়ে তাদের ইন্টার্নশিপ রিকোয়েস্টের কী অবস্থা সেটারও খোঁজ নিয়ে দেন। আর কাপল বা শুধু ফিমেল ট্র্যাভেলার হলে তার বাসায় ৩-৪ দিন ফ্রি রাখেন। একটি রুম আলাদা রাখা আছে এদের জন্য। এতে কোনো প্রকার টাকা নিতেন না, নিজের চাকরির ফাঁকে ফাঁকে এটা করতেন।

Mahmud

এভাবে গত ১২ বছরে প্রায় ৫০০০ বিদেশি ট্র্যাভেলারদের সাথে মিশেছেন, তাদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন।

২০০৮ সালের কথা। অস্ট্রেলিয়ান এক ট্র্যাভেলারের ফোন পেয়ে হোটেল ভিক্টোরিতে গেলেন দেখা করতে। সে নাকি পুরো ১ মাস বাংলাদেশ ঘুরবে। তিনি ১ মাসে পুরো বাংলাদেশ ঘোরার একটা ডিটেইল প্ল্যান করে দিলেন এই বিদেশিকে এবং কিছুদিন পর তার কথা ভুলেও গেলেন।

মাস ছয়েক পর দেখেন ডাকযোগে তার নামে ‘লোনলি প্লানেট’-এর বাংলাদেশ গাইড বইটির নতুন এডিশনের একটি কপি এবং সাথে নোট—‘মাহমুদ, তুমি তোমার দেশের জন্য যা করছ তার কোনো প্রতিদান নেই।’ তবে সামান্য একটু কৃতজ্ঞতা বইটির ১৬৬ নম্বর পাতায়।

পাতা খুলে দেখেন সেখানে তাকে নিয়ে একটা বক্স করে বেশ কিছু কথা লেখা আছে।

মাহমুদ বললেন, ‘দেশের জন্য আমি কী করেছি জানি না, তবে লেখাটা পড়ে আমার মনটা ভরে গেল।’

‘লোনলি প্লানেট’ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্র্যাভেল গাইড প্রকাশনা সংস্থা। বিবিসির মালিকানাধীন এ সংস্থাটি ৮টি ভাষায় প্রায় ৫ শতাধিক বই প্রকাশ করেছে, যার অধিকাংশই বিভিন্ন দেশ আর শহরের ট্র্যাভেল গাইড এবং ম্যাপ।

বাংলাদেশ নিয়েও লোনলি প্লানেটের একটি গাইড বই আছে, নাম— ‘লোনলি প্লানেট :বাংলাদেশ’। এই কদিন আগ পর্যন্ত এটিই ছিল বাংলাদেশ নিয়ে ইংরেজিতে লেখা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ট্র্যাভেল গাইড।

২০১২ সালের দিকে কজন ট্র্যাভেলার মাহমুদকে জানালেন, ‘আমরা তো অনেক ট্যুর কোম্পানির কাছ থেকেই প্যাকেজ কিনি। তুমিও একটা ট্যুর কোম্পানি দাও।’

মাহমুদ তখন ‘ট্রিপ টু বাংলাদেশ’ নামে তার কোম্পানিটা গঠন করেন। এরপর ট্যুরিস্ট পাঠাবার হার আরও বেড়ে যায়। এ সময়ই ভাগ্যক্রমে বরিশালে একজন ভালো গাইড পেয়ে যান।

ট্যুরিস্টদের আকৃষ্ট করার জন্য একটা গাল ভরা নাম দিয়ে দিলেন ট্যুরটার। কেরালার ব্যাকওয়াটারের আদলে ‘বরিশাল ব্যাকওয়াটার অ্যান্ড ভিলেজ ট্যুর’। এরপর প্রতিমাসেই ৭-৮ জন করে ট্যুরিস্ট পাঠাতে থাকলেন যে ধারা এখনো আছে।

২০১৪ সাল থেকে আরও ৭-৮টি ট্যুর কোম্পানি বরিশালে এই ট্যুর শুরু করেছে এবং আরও মজার ব্যাপার হলো তারাও তাদের সাইটে বরিশাল ব্যাকওয়াটার ট্যুর কনসেপ্টটি ব্যবহার করছে।

গত বছর ‘গ্রামীণ ফোন চলো বাংলাদেশ’ নামে একটি ৫ পর্বের সিরিজ করেছে তাকে নিয়ে যা ইনডেপেন্ডন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।

‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’-এর পক্ষ থেকে নতুন ধরনের উদ্যোগের জন্য ‘নুরুল কাদের সম্মাননা ২০১৪’ লাভ করেন তিনি।

বিদেশিদের সাহায্য করার ফলে অনেক মজার মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে মাহমুদের।

নবীন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলতে গিয়ে মাহমুদ বলেন, ‘কারো দিকে না তাকিয়ে, কে কী দিলো, সরকার কী দিলো সেদিকে না দেখে নিজের কাজ নিজের মতো করে যেতে হবে, সাফল্য নিজেই ধরা দেবে।’ সূত্র : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *