মুক্তবাজার অর্থনীতির কল্যাণে এখন আমরা ঘরে বসেই বিশ্বের ও প্রান্তের খবর পেয়ে যাই। এই যেমন ধরা যাক, থাইল্যান্ডের ভাসমান বাজার কিংবা ভিয়েতনামের ভূগর্ভস্থ বাড়ির কথাই। প্রাকৃতিক কারণেই একেক অঞ্চলের মানুষ তাদের নিজেদের সুবিধার্থে বেঁচে থাকার নিজস্ব কায়দা আবিষ্কার করে নেয়। এজন্যই দেশ-কাল-পাত্র ভেদে মানুষের জীবনযাপন প্রণালী ভিন্ন হয়। পাকিস্তানের মাঞ্চার লেক হলো তেমনই এক স্থান যেখানকার মানুষ প্রাকৃতিক কারণেই ভিন্ন কায়দায় বেঁচে থাকার তরীকা আবিষ্কার করে ফেলেছে। ইন্দুশ হাইওয়ে থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমেই অবস্থিত পাকিস্তানের ভাসমান গ্রাম ওই মাঞ্চার লেক।
প্রায় ২৩৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুরে ওই লেকটি বিস্তারলাভ করে আছে। ইন্দুশ নদী এবং কিরথার পর্বত হয়ে এই লেকে মিঠা পানি আসে। এই লেকেই মাছ ধরে যারা জীবনযাপন করে তাদের স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘মীরবাহার’ অথবা ‘মহান’। ধারণা করা হয় কয়েক শতক ধরেই এই জনগোষ্ঠি এখানে বাস করছেন এবং মাছ ধরাই তাদের একমাত্র পেশা। তবে মাঞ্চার গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে মূল বাজারের সঙ্গে আরও অনেক মৎসজীবি থাকে। তাদের জীবনযাত্রা আর মহানদের জীবনযাত্রা এক নয়। মূল বাজারের মৎসজীবিরা শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত এবং ভিন্ন প্রদেশের সঙ্গে ব্যবসা করে।
মাঞ্চার লেকের একজন মহানের নাম আল্লাহ ওয়াসায়ো। তার সঙ্গে আলোকচিত্রী দানিয়েল শাহের কথা হলে জানা যায়, ‘আমাদের কোনো ভূমি নেই কিন্তু নৌকা আছে। আমরা নৌকাতেই জীবনযাপন করি। আর এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে আসছে। এই লেকে আরও কয়েকটা ভাসমান গ্রাম আছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের ভালো সময় কেটেছে এখানে। তারা স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানি এবং অনেক মাছ পেত। একারণে। তারা আমাদের জন্য এই নৌকাঘর বানাতে পেরেছিল। কিন্তু এখন লেকের পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে অনেক মাছ মারা যাচ্ছে। আমি এখন আমার পরিবারের সকল খরচ মেটাতে পারি না।’ ওয়াসায়োর মতো অনেক গ্রামবাসীকেই এখানে পাওয়া যাবে যারা দূর থেকে আসা পর্যটকদের সহায়তা করে থাকে। কেউ যদি নৌকায় রাত কাটাতেও চায় তাহলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে সেই ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়।
কাঞ্চার লেকের মানুষদের জীবনযাপনের জন্য দরকার হয়না কোনো বিদ্যুৎ। নাগরিক অনেক অধিকার তাদের চিন্তার মধ্যেও নেই। তাদের জন্য ভরসা শুধু এই প্রকৃতি আর এর মানুষ। স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার জের তাদের পোহাতে হয় অথচ যে সমস্যাগুলোর সঙ্গে তাদের নেই কোনো সম্পৃক্ততা। এই গ্রামে এমনও অনেক বয়স্ক ব্যক্তিকে পাওয়া যায় যারা জীবনে একবারও নৌকার কাঠ আর পানির বাইরে মাটিতে পা রাখেনি। হয়তো একটা সময় এই মানুষগুলো ইতিহাসের অতলে হারিয়ে যাবে, পাশাপাশি হারিয়ে যাবে অনেক সাংস্কৃতিক উপাখ্যান ও উপাদান। সূত্র : বাংলামেইল