Skip to content

ঢাকার পাশে দোহার-নবাবগঞ্জে একদিনের ট্যুর

branding2

ছবিতে ক্লিক করে জেনে নিন বিস্তারিত।

রাজধানীর একেবারে পাশের উপজেলা নবাবগঞ্জ। আয়তন ২৪৪ দশমিক ৮০ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে সিঙ্গাইর উপজেলা, দক্ষিণে দোহার উপজেলা, পূর্বে কেরানীগঞ্জ, সিরাজদিখান ও শ্রীনগর উপজেলা, পশ্চিমে হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা। প্রধান নদী দুটি। ইছামতি ও কালীগঙ্গা। এছাড়া আওনার খাল ও ভাঙাভিটা খাল উল্লেখযোগ্য। নবাবগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

রাজধানীর পাশের আর এক উপজেলা দোহার। আয়তন ১৬১ দশমিক ৪৯ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে নবাবগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে পদ্মা নদী ও সদরপুর উপজেলা, পূর্বে শ্রীনগর এবং নবাবগঞ্জ (ঢাকা) উপজেলা, পশ্চিমে হরিরামপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা এবং পদ্মা নদী। প্রধান নদী: পদ্মা। দোহার থানা গঠিত হয় ১৯২৬ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।

কী আছে এই দুই উপজেলায় দেখার মতো?

judge-bari-kolakopa-bandura

ঐতিহ্যবাহী জজ বাড়ি
এটি নবাবগঞ্জের কলাকোপা নামক স্থানে অবস্থিত। একটি সুন্দর বাগান ঘেরা এবং বিশালাকৃতির এই জমিদার বাড়িটি মূলত জজ বাড়ি নামে পরিচিত। বাড়ির পাশেই রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর। রয়েছে পোষা হরিনের একটি খামার। বাগানের হাজারো রকমের ফুল আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে অনায়াসে। জমিদার বাড়িটি অতি প্রাচীন কালের ঐতিহ্যবাহী নকশায় তৈরি। যা আপনাকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিবে। এই বাড়িটি প্রায়ই নাটক এবং চলচিত্রের শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি
এই জমিদার বাড়িটি জজ বাড়ির ঠিক পাশেই অবস্থিত। বলা যেতে পারে এটি জজ বাড়ির ওল্ড ভারসন। জজ বাড়ি বিভিন্ন সময়ে সংস্কার করা হলেও এটি রয়ে গেছে সেই আগে যেমনটি ছিল। এই জমিদার বাড়িতেও রয়েছে শত শত দৃষ্টিনন্দন ফুলের গাছ আর বাড়ির ঠিক সামনে রয়েছে বিশালাকৃতির স্বচ্ছ পানির পুকুর। রয়েছে বিশালাকৃতির পুকুর ঘাট। ঘাটে বসে ইচ্ছা করলে পানিতে পা ভিজিয়ে আড্ডাও দিতে পারবেন অনায়াসে। হয়তো কিছু ছোট ছোট মাছ আপনার পায়ে কামর দিয়ে ছুটে পালাবে।

বৌদ্ধ মন্দির
এই বৌদ্ধ মন্দিরটি কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ির ঠিক বাইরে অবস্থিত। মন্দিরটির ভেতরে একটি ভাঙা মুর্তি আছে। কথিত আছে ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী এই মুর্তিটি ভেঙে রেখে গিয়েছিল। সংস্কারের অভাবে মন্দিরটির দেয়াল খসে খসে পড়ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কারো কোনো হস্তক্ষেপ আজ পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায়নি।

খেলালামদার বাড়ি (আন্ধার কোঠা)
এটি এক সময় সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। কিন্তু সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। এখনো মাটির উপর দুইতলা একটি জড়াকীর্ণ ভবন দেখতে পাবেন। কথিত আছে এই পাঁচতলা ভবনটি এক রাতে তিনতলা পর্যন্ত মাটির নিচে চলে গিয়েছিল। ভবনটির উপরের তলাতে একটি বড় চৌবাচ্চা আছে। কথিত আছে জমিদার খেলালামদা এর মা একদিন তার সন্তানের কাছে দুধ খেতে চাইলে সে তার মায়ের জন্য এই চৌবাচ্চা বানানোর নির্দেশ দেন। পড়ে সেই বিরাট চৌবাচ্চায় দুধ এবং কলা দিয়ে পূর্ণ করে তার মাকে সেই চৌবাচ্চায় নামিয়ে দেন। তার মা সাতার কেঁটে কেঁটে মনের সাধ মিটিয়ে দুধ খেয়েছিলেন। এই বাড়িটির পাশেও একটি বিরাট পুকুর আছে। কথিত আছে এই পুকুরের পাশে এসে কেউ কিছু চাইলে তার পর দিন তাই মিলে যেত। তবে এসব কাহিনীর সত্যতা কতটুকু তা নিয়ে কোনো সদুত্তর বা প্রমাণ নেই। এক সময় এই ভবনের নিচের তলাগুলোতে সিঁড়ি বেয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু সিড়িগুলো ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় এখন এর প্রবেশমুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই ভবনের ভেতরে অন্ধকার এতই ঘন যে অতি উজ্জল আলোও এখানে স্তিমিত হয়ে যায়। এর জন্যই এই ভবনকে আন্ধার কোঠা বলা হয়ে থাকে।

কলাকোপা আনসার ক্যাম্প
জজ বাড়ির কাছেই কলাকোপা আনসার ক্যাম্প অবস্থিত। এটিও একটি দৃষ্টিনন্দন স্থান। ছায়া সুনিবিড় সুন্দর একটি পরিবেশ। পিকনিক স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আনসারদের বসবাসের জন্য অনেক বড় একটি এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নয়নাভিরাম ক্যাম্পটি।

ইছামতি নদী
প্রাকৃতিক সৌদর্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এই নদীটিকে ঘিরে সেই আগের মত প্রাণ চাঞ্চল্য না থাকলেও সূর্যাস্তের সময় আপনি মুগ্ধ হয়ে এর রুপ অবলকন করতে সক্ষম হবেন।

vanga-mosque

বান্দুরা ভাঙা মসজিদ
কথিত আছে এই মসজিদটি এক রাতে গায়েবীভাবে সৃষ্টি হয়েছিল। যে রাতে এটি সৃষ্টি হয়েছিল সেদিন ভোরে কোনো এক লোক এই মসজিদটি প্রথম আবিষ্কার করেন। কিন্তু তখনও পর্যন্ত এটি সম্পূর্ণ সৃষ্টি হতে পারেনি। মানুষের চোখে পড়ে যাওয়ায় এটি সেরকম অসম্পূর্ণই থেকে যায়। এর একটি অংশ ভাঙা থাকার কারণে এটি ভাঙা মসজিদ নামেই পরিচিত। মসজিদটি দেখতে দারুন। অনেকে এখানে এসে নিজের মনবাসনা মহান সৃষ্টিকর্তাকে জানান। কেউ কেউ তাদের মনবাসনা পূরণ হয়েছে বলেও দাবি করেন।

সাত মাথার মুর্তি
এটি মাঝির কান্দা নামক স্থানের অদূরে অবস্থিত। একটি বিরাট বটগাছের নিচে এই মুর্তিটি নির্মাণ করা করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। প্রতি বছর এই মুর্তিকে ঘিরে পূজা এবং মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

বান্দুরা গির্জা
অনেক বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে এই গির্জাটি। গির্জার ভেতরের দিকটা বেশি আকর্ষণীয় এবং সামনে একটি বিশাল খোলা মাঠ এর সৌন্দর্য হাজারগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। গির্জাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে কিছু খৃষ্টান মিশনারী ক্যাম্প।

মৈনট ঘাট
দোহারের কার্তিকপুরের যে জায়গাটি পদ্মাপাড়ে গিয়ে মিশেছে তার নাম মৈনট ঘাট। ডানে-বাঁয়ে বালু চিকচিক করা স্থলভূমি। সামনে রুপোর মতো চকচকে পানি। এটা পদ্মা, আমাদের প্রিয় পদ্মা নদী। মৈনট পদ্মাপাড়ের একটি খেয়াঘাট। এখান থেকে প্রতিদিন ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। খেয়া পারাপারের জন্য জায়গাটির পরিচিতি আগে থেকেই ছিল। তবে এখন সেটা জনপ্রিয় বেড়ানোর জায়গা হিসেবেও। এত দিন অনেকটা আড়ালে থাকলেও ঢাকার কাছে বেড়ানোর ‘হটস্পট’ এখন এই মৈনট ঘাট।
মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়া মৈনট ঘাটের নতুন নাম হলো—মিনি কক্সবাজার!
বিশাল পদ্মার রূপ মৈনট ঘাট এলাকায় বিস্ময়-জাগানিয়া। একটু পরপর পদ্মার ঢেউ কূলে এসে আঁছড়ে পড়ে। খানিক পরপর মাছ ধরার ট্রলার ছুটে চলে যাচ্ছে। তীরে সব ভ্রমণপিপাসুদের ভিড়। তাঁদের কেউ কেউ মাছ ধরার নৌকা দেখে মাছ কেনার জন্য এগোচ্ছেন। দরদাম ঠিক থাকলে অনেক পর্যটক মাছ কিনে নিচ্ছেন।
পুরো নদীর তীর ও তার আশপাশের এলাকা সমুদ্রসৈকতের মতো করে সাজানো।
এখানে সকালবেলাটা খুব ভালো কাটে, দুপুর কিছুটা মন্থর, তবে বিকেলবেলা অনেক বেশি জমজমাট।
সোনা রোদের গোধূলিবেলার তো কোনো তুলনাই চলে না।
বর্ষাকালে এটি তার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। পদ্মানদী যখন কূলকিনারা ভরে প্রবাহিত হয় তখন এই মৌনট ঘাট লাভ করে এক অপরুপ রূপ বৈচিত্র। প্রতিদিন এখানে ভিড় করে হাজার হাজার দর্শনার্থী।

পদ্মার চর
মুলত যখন পদ্মার পানি কমতে থাকে তখন পদ্মার বুকে এসব চর পরতে শুরু করে। মূল ভুমি থেকে ভাড়া নৌকায় করে এসব চরে যেতে হয়। এসব চর হতে সূর্যাস্ত দেখাটা এক চরম অনুভুতি।

মহাকবি কায়কোবাদের জন্মভুমি
নবাবগঞ্জের আগলা নামক স্থানে মহাকবি কায়কোবাদ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই স্থানটিও ঘুরে দেখার মত। বিশেষ করে যারা মহাকবি সম্পর্কে জানতে চান তারা বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন আগলায় আসলে।

মরিচা এবং তুলসীখালী সেতু
পর পর দুটি বিরাট সেতু পড়বে মরিচা এবং তুলসীখালী নামক স্থানে। গাড়ি থামিয়ে কিছু সময় এই সেতু দুটিতে পার করে দিলে লাভই হবে বলে মনে হয়। কেননা সেতুর উপর থেকে চোখে পড়বে সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ইছামতির রুপ লাবন্য। সাথে বোনাস পাবেন পাশের দিগন্ত বিস্মৃত ফসলের মাঠ। শীতকালে যখন মাঠে রবি শস্য থাকে তখন আপনার চোখ জুড়াবে তার রুপ অবলকন করে।

দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ, শহীদ মিনার এবং আরো অনেক প্রাচীন স্থাপনা
উপরের বর্ণিত স্থান সমূহ ছাড়াও একটু পড়ে পড়েই নানান রকম স্থাপনা আপনাদের চোখে পড়বে। যেগুলো বর্ণনা দিতে অনেক সময়ের ব্যাপার। সবগুলো স্থান এবং স্থাপনাই কোনো না কোনো ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের স্বাক্ষী।

কিভাবে যাবেন
ঢাকার গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজার থেকে বান্দুরাগামী এবং জয়পাড়াগামী বাস পাওয়া যায়। আপনি বেশি উপকৃত হবেন যদি বান্দুরাগামী কোনো বাসে চেপে বসেন। সেক্ষেত্রে আপনি প্রথমেই নবাবগঞ্জ এবং পরে সেখান থেকে সহজেই দোহার যেতে পারবেন। আর নিজস্ব গাড়ি থাকলেও তো কথাই নেই। দল ধরে গেলে গাড়ি ভাড়া করে নেওয়াই উত্তম হবে। নবাবগঞ্জ হয়ে প্লান করলে যে স্থানসমূহ পর্যায়ক্রমে পড়বে তা হলো: মরিচা এবং তুলসীখালী সেতু > আগলা > নবাবগঞ্জ (শহীদ মিনার, দোহার নবাবগঞ্জ কলেজ) > কলাকোপা (আন্ধার কোঠা, বৌদ্ধ মন্দির, কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি, জজ বাড়ি, আনসার ক্যাম্প, ইছামতি নদী) > মাজিরকান্দা (সাত মাথার মুর্তি) > বান্দুরা (ভাঙা মসজিদ, হাসনাবাদ গির্জা)। বান্দুরা থেকে চলে যাবেন কার্তিকপুরের মৈনট ঘাটে। সেখান থেকে জয়পাড়া হয়ে নারিসা পদ্মার চরে। নারিসার কিছু দূরেই যেতে পারেন সাইনপুকুর এলাকায়। এই এলাকাটাও ঘুরে দেখার মত। পদ্মার তীরে সুন্দর একটি লোকালয়। এছাড়া আসার পথে জয়পাড়ায় দেখতে পাবেন নব্য নির্মিত স্বাধীনতার ভাস্কর্যটি। এছাড়াও ঘুরে দেখার মত আরো অনেক জায়গা আছে। কিন্তু সবকিছু ঘুরে দেখার জন্য আপনাকে দুই দিনের ভ্রমণ প্লান করতে হবে। একদিনে বর্ণিত স্থানগুলোই দেখতে পারেন। তারপরেও সময়ের অনেক টানাটানি লেগে যাবে। বান্দুরা গেলে মিষ্টি খেতে ভুলবেন না। সাথে রসমালাই। সূত্র: বাংলাপিডিয়া, সামহোয়্যারইনব্লগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *