মৌসুমী
বাংলাদেশের মতো সবুজ কোনো দেশ কি হতে পারে? এমন কোনো প্রশ্ন আগে মাথায় আসেনি। গত জুন মাসে গিয়েছিলাম স্কটল্যান্ডে। সেখানে পা রাখার পর প্রশ্নটির উত্তর পেয়ে গিয়েছি। স্কটল্যান্ডও সবুজ। এমন সবুজ যে চোখ দুটোকে প্রশান্তি এনে দেয়! প্রকৃতির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ বন্ধ করলেও চোখে সবুজাভ আবেশ থেকে যায়!
আমি তো অভিনয়শিল্পী। শুটিং ছাড়া কোথাও যাওয়া বেশ কঠিন। অতএব শুটিংয়ের জন্যই গিয়েছিলাম স্কটল্যান্ডে। ছিলাম মোটে চার দিন। বলা বাহুল্য, এটাই ছিল আমার প্রথম স্কটল্যান্ড-দর্শন।
ওই যে বললাম, স্কটল্যান্ড সবুজ। ওখানকার সবুজের ব্যাপারটাই অন্য রকম। ওই সবুজ প্রকৃতিই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। মনে হয়েছে, স্কটল্যান্ডের মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষায় খুব তৎপর। আর সেখানকার ঘোড়াগুলোও নজরকাড়া। অনেক বড় বড় ঘোড়া, বিচিত্র রং, বিচিত্র আচার-আচরণ।
আমাদের বান্দরবানের দিকে গেলে দেখা যায় সবুজ পাহাড়ের সঙ্গে ঝরনার অপূর্ব মেলবন্ধন। সমুদ্রের কথা বলতেই হয়। তবে একটা বড় সমস্যা হলো যোগাযোগব্যবস্থা। আর নিরাপত্তার বিষয়টিও বেশ খানিকটা চিন্তার কারণ। তাই ইচ্ছা থাকলেও সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে পারি না। দূর থেকে দেখে শান্তি পেতে হয়। কিন্তু স্কটল্যান্ডে যোগাযোগব্যবস্থা কিংবা নিরাপত্তা সবই খুব ভালো। তাই যেটাই দেখতে চাই না কেন, ঠিকই মন ভরে দেখতে পেরেছি। কাছে যেতে পেরেছি।

স্কটল্যান্ডের ব্রাইটনসে মৌসুমী। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
স্কটল্যান্ডবাসী প্রকৃতিকে নষ্ট করে কোনো কিছুই করে না। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি, দুর্গ, স্থাপনা সবই একই রকম আছে যুগ যুগ ধরে। আমরা উঠেছিলাম ব্রাইটনস নামের একটি এলাকায়। সেটা আসলে একটা গ্রাম, মূল শহর থেকে অনেকটা দূরে। খুব নিরিবিলি একটা বাংলো বাড়ি ছিল আমাদের চার দিনের ঠিকানা। অনেকটা জায়গা নিয়ে এই বাংলো। এই বাংলোয় রাতের সৌন্দর্য যে কেমন, তা সেখানে বসে উপলব্ধি না করলে বোঝানো মুশকিল! সময়ের অভাবে সব জায়গায় যেতে পারিনি। তবে এডিনবার্গ, স্টোনহ্যাভেন সমুদ্রসৈকত ও গ্লেনকো একনজর ঢুঁ মারার সুযোগ হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী শহর বলতে যা বোঝায়, তার দারুণ উদাহরণ এডিনবার্গ। পুরোনো দুর্গ আর ঘরবাড়িগুলো এখনো সবল আর সতেজ মনে হয়। দেখে সমীহভাব জাগে। আমি আবার ভূতটুতে ভয় পাই। শুনেছি, প্রাচীন বাড়িগুলোতে ভূত থাকে। তাই সেসব বাড়ির ভেতরে ঢোকার কোনো রকম দুঃসাহস দেখাইনি!
আমাদের কক্সবাজার এক রকম, ওদের স্টোনহ্যাভেন সমুদ্রসৈকত আবার আরেক রকম। পাথুরে সৈকত সেটা। একেবারেই অন্য রকম দৃশ্য। আর কো নদীর দুই পাশের গ্লেনকো পার্বত্য এলাকা সত্যিই নয়নাভিরাম। নদীর দুই পাশে সুউচ্চ সবুজ পাহাড়। মাঝখানে নদীর ওপর পেজা তুলার মতো মেঘ জমে থাকার দৃশ্য দেখে আবার বান্দরবানের কথাই মনে পড়ে গিয়েছিল।
খাবারদাবারের কথাও বলতে হয়। একদমই তরতাজা খাবার। থাই, ইন্ডিয়ান, মেক্সিকান, ইতালিয়ান, চায়নিজ, জাপানিজ সব ধরনের খাবারের সমাহার সেখানে। ইউরোপিয়ান খাবার তো ছিলই। চাইলে বাঙালি খাবারও পাওয়া যায় স্কটল্যান্ডে।
আমি আগেও বলেছি, স্কটল্যান্ডে খুব বেশি দিন থাকা হয়নি। খুব তাড়াহুড়ো করে গিয়েছি, আবার তাড়াহুড়ো করে ফিরেও এসেছি। চার দিনের মাথায় ঢাকার প্লেন ধরেছি। তবে মনে রাখার মতো একটি ঘটনা আছে। আমরা একবার একটা রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিলাম! বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। শুটিং শেষ, ফলে সবাই খুব ক্লান্তও ছিলাম। ঘুরেফিরে একই জায়গায় ফিরে আসছিলাম বারবার। যেন এক গোলকধাঁধা। শুনেছি মরুভূমিতে তেমনটা হয়! অনেক কষ্ট করে শেষমেশ অবশ্য রাস্তাটা খুঁজে পেয়েছিলাম সে রাতে! অনুলিখন: মনজুর কাদের। সৌজন্যে : প্রথম আলো