Skip to content

থাইল্যান্ডের রহস্যময় ট্যাটু

Tatu সে অনেকদিন আগের কথা। কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনী তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহদাংশ শাসন করতো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভয়ংকর সব ট্যাটু সমৃদ্ধ সৈন্যরা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল বর্তমান থাইল্যান্ড-লাউস-মিয়ানমারসহ আরও পূর্বের অঞ্চলগুলোতে। কম্বোডিয়ার এই যোদ্ধাদের বলা হতো খামের, আর তাদের শরীরে অঙ্কিত ট্যাটুগুলোকে বলা হতো ‘ইয়ান্ত্রা’। পৃথিবীতে যত শক্তিশালী প্রাণী আছে, খামের যোদ্ধারা তাদের শরীরে ওই প্রাণীদের প্রতিকৃত্তি সম্বলিত ট্যাটু আঁকতো। বর্তমানেও কম্বোডিয়ার সেনাবাহিনীর মধ্যে এই ট্যাটুর প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। যদিও ট্যাটু খুবই প্রাচীন এবং উন্নত শিল্প হওয়া স্বত্ত্বেও কম্বোডিয়াতে খামের পরবর্তী সময়ে আর ট্যাটু শিল্প বিকাশ লাভ করেনি, যতটা করেছে থাইল্যান্ডে।

থাইল্যান্ডে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেই ট্যাটু আঁকা শেখানো হয়। এজন্য ব্যাংককে আছে বেশ কিছু স্কুল যেখানে গোটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা দক্ষ ট্যাটু শিল্পীরা শিক্ষাদান করেন। ‘ব্যাংকক ইঙ্ক’ হলো থাইল্যান্ডের তেমনই একটি স্কুল যেখানে প্রাচীন এবং বর্তমান ট্যাটু শিল্প সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। দেশটির নিজস্ব ভাষায় এই শিল্পকে বলা হয় ‘স্যাক ইয়ান্ত’। মূলত সাধারণ থাই জনগণ তাদের শরীরে যে ট্যাটু আঁকায় তাতে বুদ্ধের অনেক বানী লিখিত থাকে। তবে তরুণদের মধ্যে গ্যাঙ ট্যাটু সবচেয়ে জনপ্রিয়। থাই সাধারণ আজও বিশ্বাস করে যে, ট্যাটুর রয়েছে অতিপ্রাকৃতিক ক্ষমতা এবং যাদের মাথায় ট্যাটু আঁকা থাকে তাদের রয়েছে বিশেষ ক্ষমতা।

ব্যাংকক ইঙ্কে কর্মরত একজন শিল্পী ভী। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি প্রাচীন ট্যাটু আর্ট নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি তরুণ শিক্ষার্থীদের সেবিষয়ে শেখানোর চেষ্টা করছেন। তবে ভীয়ের স্কুলে শুধু যে থাইল্যান্ডের জনগণই আর্ট শিখতে আসেন তা কিন্তু নয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকেই আসেন এই আর্ট শিখতে। তারা এই স্কুলে অনেক সময় তিন মাসের একটি খণ্ডকালীন কোর্সও করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রথমদিকে শূকরের চামড়ার উপর ট্যাটু আঁকার চর্চা করেন। যখন তারা মানুষের শরীরে ট্যাটু আঁকার মতো ধৈর্য্য ও দক্ষতা অর্জন করেন তখন তাদের সামনে কিছু স্বেচ্ছাসেবকদের আনা হয়, যাদের শরীরে ওই শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা ফুটিয়ে তোলেন। অবশ্য এজন্য ওই স্বেচ্ছাসেবকদের কোনো অর্থ দিতে হয় না। বরংচ এই প্রথম ট্যাটুকে স্বেচ্ছাসেবকদের উপহার হিসেবে দেয়া হয়।

Tatu2স্যাক ইয়ান্তের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন আর জনপ্রিয় হলো ‘হেই থো’ বা ‘পঞ্চ সুর’। এই ট্যাটু আঁকার সময় মোট ১০৮বার মানবশরীরে সূক্ষ্ণ ধারালো ব্লোড দিয়ে আচর কাটা হয়। আর প্রতিবার মন্ত্র উচ্চারণ করে ট্যাটু আঁকার সময়ের রক্তপাতকে শুদ্ধ করে নেয়া হয়। তবে যেকেউ ইচ্ছে করলেই এই ট্যাটু ধারণ করতে পারে না। যারা ধ্যানের উচ্চশিখরে পৌছুঁতে পারে তারাই এই ট্যাটু ধারণ করার অধিকারী হন। বিশেষত বয়স্ক বুদ্ধ সন্যাসীদের মধ্যে এই ট্যাটু দেখা যায়। পঞ্চ সুর মানে ওই বিশেষ ট্যাটুর পাঁচটি গুন। এই ট্যাটু ধারণ করলে গৃহকে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা, মন্দভাগ্য এবং রাশিচক্র ঠিক রাখা, অভিশাপ এবং কালোজাদু থেকে মুক্ত থাকা, রোগব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ এবং বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়।

সব ট্যাটুই কিন্তু চিরস্থায়ীভাবে মানবশরীরে থাকে না। বেশিরভাগ ট্যাটুই একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর ফিকে হয়ে যায় এবং একটা সময় বিলীন হয়ে যায়। এই ট্যাটুর প্রচলনই সবচেয়ে বেশি। কারণ তরুণরা কয়েক মাস পরপর শরীরে নতুন নতুন ট্যাটু আঁকাতে পছন্দ করে। কিন্তু কেউ কেউ আছেন যারা তাদের ব্যাক্তিত্ব এবং বিশেষ কোনো রীতিকে সমুন্নত রাখতে শরীরে চিরস্থায়ী ট্যাটু ধারণ করে। এই ট্যাটু আঁকার কাজে বিশেষ কাঠ, কার্বণ গুড়ো মিশিয়ে কালো রং প্রস্তুত করা হয়। এরপর সূক্ষ্ণ সূচ দিয়ে একটু একটু করে খোদাই করে সৃষ্টি করা হয় স্থায়ী ট্যাটু।
শরীরে ট্যাটু আঁকায় ইসলাম ধর্মে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *