থাইল্যান্ডে গভীর জঙ্গল থেকে মানবপাচারকারীদের ‘মূল হোতা’কে গ্রেফতারের দাবি করেছে থাই পুলিশ। পুলিশ বলছে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
গ্রেফতারকুত ব্যাক্তির নাম সু নাইং, তবে তিনি আনোয়ার নামেই বেশি পরিচিত। নাখোন সি থামারাট প্রদেশের পুলিশের ডেপুটি কমিশনার অনুচন চামসাট রয়টার্সকে বলেছেন, জঙ্গলের গভীরে বেশ কিছু পাচারকারী ক্যাম্প পুলিশ উচ্ছেদ করেছে যেগুলোতে প্রায় ৪০০ অভিবাসীকে মুক্তিপণের জন্য আটকে রাখা হয়েছিলো। মুক্তিপণ পাওয়ার পরও মুক্তি না দেয়ার অপরাধে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মানব পাচারের শিকার অবৈধ অভিবাসীদের জীবনের ভয়াবহ বাস্তবতার কথা।
পুলিশের এ কর্মকর্তার দাবি, আনোয়ারকে গ্রেফতারের ফলে জঙ্গলে ২৬ ব্যাক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে, তার কুলকিনারা করা যাবে। আনোয়ারকে শীর্ষ পাচারকারী বলেও দাবি করেন তিনি।এছাড়া থাই পুলিশ বলছে, ক্যাম্প থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাংক রিসিটে অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত এক মাসেই এ চক্রটি প্রায় ১০ মিলিয়ন বাট (থাই মুদ্রা) অর্থ আদায় করেছে।
তবে আনোয়ারের দাবি, মানবপাচারের সাথে সে কোনভাবেই জড়িত নয়। তাকে কেউ ফাঁসাচ্ছে। পুলিশ স্টেশনে সাংবাদিকদের সে বলেছে, পাউরুটি বিক্রি করে কোনরকমে সে জীবন চালায়। তিনি বলেন, পুলিশ এক আনোয়ারকে খুঁতে গিয়ে আরেক আনোয়ারকে ধরে এনছে। অনেকের নামই আনোয়ার । আমার নামও। কিন্তু সত্যিই কোন আনোয়ার অপরাধী সেটাতো বের করতে হবে। আমি এসবের সাথে জড়িত নই।
জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মানবপাচারের অভিযোগে চারজনকে আটক করা হয়েছে। ফোন রেকর্ড বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড থেকেই এ মানবপাচার চক্রটি নিয়ন্ত্রিত হয়।
আনচন বলেন, খুন, মানব পাচার, অবৈভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার বিষয়ে রোহঙ্গা মুসলিম আনোয়ারের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছে পুলিশ। জঙ্গলে পাওয়া গণকবরের আশপাশ থেকে ডিএনএ ও সংগ্রহ করছে পুলিশ, যাতে সেখানে আনোয়ারের উপস্থিতির বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়।
ডেইলি মেইল অনলাইন তাদের নিজস্ব অনুসন্ধানের বরাতে বলছে, ২০১২ সালে থেকে এখন পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রথমে মিয়ানমার থেকে থাইল্যান্ড এবং পরে মালয়েশিয়া যায়। এ যাত্রায় তারা সমুদ্রপথ ব্যাবহার করে এবং অনেক সময় মাসের পর মাস বিভিন্ন জঙ্গলে ক্যাম্প করে থাকতে হয়।
মানবাধিকার সংগঠন ফরটিফাই গ্রুপের একিসকিউটিভ ডিরেক্টরেএমি স্মিথ বলেন, এই শুক্রবারে ঙ্গলে যে ক্যাম্পটির সন্ধান পাওয় গেছে, সেটি এ অঞ্চলে বহু ক্যাম্পের মধ্যে মাত্র একটি। এরকম আরো বহু ক্যাম্প দক্ষিণ থাইল্যান্ডের জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জঙ্গলে এই ধরনের কোন ক্যাম্পের সন্ধান এটাই প্রথম। থাই কর্তৃপক্ষের উচিত হবে, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে এসব উচ্ছেদ করা।
শুক্রবার মালয়েশিয়া সীমান্ত থেকে কয়েকশ মিটার ভেতরের এই ক্যাম্পটিতে পুলিশের সাথে গিয়েছিলেন রয়টার্সের একজন রিপোর্টার। তিনি দেখেছেন, ক্যাম্পটিতে প্রচুর পরিমাণে বাশের লাঠি এবং পাইপ আছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এগুলো ফেলে রেখেই পাচারকারিরা পালিয়ে যায়। এসব দেখে ধারণা করা যায়, পাচারকারিরা অভিবাসীদের এসব লাঠি দিয়ে নিয়মিত মারধর করতো। ক্যাম্পে যেসব মরদেহ পাওয়া গেছে তাদের শরীরেও লাঠি দিয়ে পেটানোর চিহ্ন দেখেছেন এ রিপোর্টর। এছাড়া উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া আরো দুজন পুলিশ সদস্য ও রয়টার্সকে একই ধরনের কথা বলেছেন।
সাবেক এক মানবপাচারকারী, যে পুলিশকে ক্যাম্পটি চেনাতে সাহায্য করেছে, তিনি বলেছেন, ফোনে পরিবারের কাছে টাকা চাওয়ার জন্য অভিবাসীদের নিয়মিত মারধর করা হয়। আর যারা পালিয়ে যেতে চায়, তাদেরকে তো হত্যা করা হয়।
এ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসা একজন (তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে আছেন) বলেছেন, গত ১০ মাসে ক্যাম্পে থাকাকালীন সময়ে অন্তত ১৭ জনকে হত্যা করতে দেখেছেন তিনি। এমনকি মাত্র দুই ঘন্টার ব্যাবধানে চারজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে দেখেছেন তিনি।
তবে পুলিশ বলছে, মরদেহে নির্যাতনের চিহ্ন তারা পায়নি।
এ ক্যাম্পেই ২৫ বছর বয়সী কাজিম নামে এক যুবকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাকে মুক্তির জন্য মুক্তিপণও দিয়েছিলো পরিবার। কিন্তু তারপরও মুক্তি না দেয়ায় পুলিশের দ্বারস্থ হয় তার পরিবার। পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ায় কাজিমকে পিটিয়ে হত্যা করে পাচারকারিরা। হত্যার সময় কাজিমের একত আত্নীয়কে ফোন করে ফোনটি কাজিমের মুখের সামে ধরে তারা। কাজিমের সে আত্মীয় রয়টার্সকে বলেছেন, ফোনে কাজিম বলছিলো, তারা আমাকে মেরে ফেলছে। আপনারা কি করলেন আমার জন্য?
কাজিমের আত্মীয়ের এ অভিযোগের ব্যাপারে থাই পুলিশ বলছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে। সূত্র : প্রিয়.কম