:: অমর্ত্য গালিব চৌধুরী ::
ইতালির রাজধানী রোমের ৯০ কিলোমিটার উত্তরে আছে এক ছোট্ট শহর, বোমারজো। বোমারজো শহরের কাছেই আছে একটা ছোট্ট বাগান।
আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক করুণ ইতিহাস। কী ছিল সেই ইতিহাস?
বহু বছর আগে বোমারজো শহরে বাস করতেন পিয়ের ফ্রান্সিসকো ওরসিনি নামের এক ডিউক। ভিচিনো নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। ভিচিনো ভীষণ ভালোবাসতেন তাঁর স্ত্রী গুইলিয়া ফারনেসেকে। ১৫৬০ সালে গুইলিয়ার মৃত্যুর পরে ভিচিনো শোকে-দুঃখে এক রকম স্থবির হয়ে যান। প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য গড়ে তোলেন এক চমত্কার বনবাগান। স্যাক্রো ব্রস্কো নামের এই বনবাগানের নামের অর্থ হচ্ছে ‘পবিত্র উদ্যান’।
এই উদ্যান আপনার আর দশটা মামুলি উদ্যানের মতো নয়। আর নামে পবিত্র বাগান হলেও উদ্যানজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যত সব বিদ্ঘুটে আর ভয়ংকর চেহারার ভাস্কর্য।
এসব ভাস্কর্যের নকশা করেছিলেন ভিচিনো নিজেই। এই যেমন প্রকাণ্ড হাতির পায়ের তলায় পিষ্ট হচ্ছে কোনো এক হতভাগ্য মানুষ কিংবা বিরাট এক দানব—একজন মানুষকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে কিংবা বিশাল এক মুখ গিলে ফেলছে এক লোককে। পর্যটকদের আনন্দ নয়, বরং ভীতি আর অস্বস্তিতে ফেলে দিত এসব ভাস্কর্য। পাহাড়ের ওপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এই উদ্যানের সব ভাস্কর্যই প্রাকৃতিক পাথর খুঁদে বানানো। বেশির ভাগ ভাস্কর্যেরই কোনো উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ব্যতিক্রমও আছে। এই যেমন উদ্যানের সব থেকে বিরাট ভাস্কর্যটি হলো এক হাতির। হাতির শুঁড়ে প্যাঁচানো রয়েছে এক অজ্ঞান রোমান সৈন্য। অনেকের ধারণা এই ভাস্কর্য হানিবলকে উদ্দেশ্য করে। কার্থেজীয় এই সেনাপতি খ্রিস্টপূর্ব ২১৮ শতাব্দীতে রোম আক্রমণ করেছিলেন এক পাল হাতি নিয়ে। আবার অনেকের ধারণা, এই ভাস্কর্য নির্দেশ করে এলিজার নামের এক কাল্পনিক চরিত্রকে, যে কি না রাজার হাতিকে হত্যা করতে গিয়ে নিজেই ওই হাতির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল।
ভিচিনো মারা গিয়েছিলেন ১৫৮৪ সালে। তাঁর মৃত্যুর পরে এই উদ্যান অবহেলা আর অযত্নে বিস্মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। আশপাশের গ্রামের লোকেরা এর ভেতরে ঢুকতে ভয় পেত। বিকট সব ভাস্কর্য আর আগাছার জঙ্গলে ঢাকা পড়ে গোটা এলাকা একটা ভূতুড়ে রূপ ধারণ করে। লোকে জায়গাটাকে ‘দানবদের উদ্যান’ বলে ডাকতে শুরু করে।
বিখ্যাত স্প্যানিশ শিল্পী সালভাদর দালি ১৯৪৬ সালে এই উদ্যান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এঁকেছিলেন ‘দ্য টেম্পটেশন অব সেন্ট অ্যান্থনি’ নামের এক বহুল সমাদৃত চিত্র। বহু পরে ১৯৭০ সালের দিকে উদ্যানটিকে এর বেহাল দশা থেকে উদ্ধার করে সংস্কার করে নগর কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এটি জনপ্রিয় এক পর্যটনকেন্দ্র। সৌজন্যে : কালের কন্ঠ