নানা দেশের মানুষ নানা পদের খাবার খায়। এসব খাবারের স্বাদও যেমন নানা রকম, তেমনি রেসিপিও নানা ধরনের। দিল্লি ঘুরে এমনই কিছু খাবারের স্বাদ নিয়ে লিখেছেন গাজী মুনছুর আজিজ
প্রবাদ আছে- দিল্লির লাড্ডু খাইলে পস্তাতে হয়, না খাইলেও পস্তাতে হয়। তবে কেন এ প্রবাদ প্রচলিত তার সঠিক কারণ এখনও কারও কাছ থেকে জানতে পাইনি। তাই এবার দিল্লি গিয়ে হাজির হই এখানকার পাহাড়গঞ্জের এক মিষ্টির দোকানে। সফরসঙ্গী সাইক্লিস্ট আসাদ ভাই ছাড়াও সঙ্গে আরও আছেন চট্টগ্রামের তৈয়ব ও সানজানা দম্পতি। তাদের সঙ্গে পরিচয় ট্রেনে।
দোকানের শোকেসে দেখি অন্য মিষ্টির সঙ্গে দুই পদের লাড্ডুও সাজানো। হলুদ রঙের লাড্ডুটির নাম- মতিচুর। প্রতি কেজির দাম ১৮০ রুপি। আর কমলা রঙের লাড্ডুটির নাম- কেসার। প্রতি কেজির দাম ২৪০ রুপি। কিন্তু মতিচুর নামে লাড্ডু তো আমাদের দেশেও আছে। তাহলে দিল্লির এ মতিচুরের বিশেষত্ব কি স্বাদের জন্য, নাকি নামেই দিল্লির লাড্ডুঙ্ঘ আমরা আধা কেজি কিনি। চারজনের ভাগে দুই পিস করে পড়েছে। খেয়ে মনে হলো আমাদের দেশীয় লাড্ডুর মতোই স্বাদ। অন্যরাও তাই বলল। তবু আমরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি; শত হলেও দিল্লির লাড্ডু বলে কথা।
দুপুরের দিকে দিল্লি পৌঁছে প্রথমে আসি দিল্লি জামে মসজিদের কাছে উর্দু বাজার রোডে। দুপুরের খাবার খাই এখানকার একটি মুসলিম রেস্টুরেন্টে। ডাল দিয়ে গরুর মাংস রাম্না। এটাকে ডাল-মাংস বলে। সঙ্গে বাসমতি চালের সাদা ভাত। অনেকটা আমাদের দেশি খাবারের স্বাদ। খেয়ে অটোতে আসি পাহাড়গঞ্জ। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হই দিল্লির রাস্তায়।
রাতের খাবার খাই পাহাড়গঞ্জেরই এক রেস্টুরেন্টে। আসাদ ভাই দিল্লি এসেছেন একাধিকবার। তাই কোন এলাকায় কোন খাবারের দোকান, তার সব চেনা-জানা। তিনিই অর্ডার করেন থালি প্যাকেজ দেওয়ার জন্য। এক থালিতে সব আছে। সাদা ভাত, ডাল, সালাদ ও কয়েক পদের সবজি। আলু, গাজর, কুমড়া, পটোল- এসব দিয়েই সবজি। পুরোটা বাঙালি খাবারই বটে। তৃপ্তি নিয়ে খাই। স্বাদ ভালোই। সকালের নাশতা সারি ছোলা বাটোরা দিয়ে। রাম্না করা ছোলা আর সঙ্গে বাটোরা। বাটোরা অনেকটা পুরি বা পরোটার মতো। ভেতরে মসলা আছে। ছোলা বাটোরার সঙ্গে কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ আছে সালাদ হিসেবে। এর স্বাদটা আসলেই দারুণ।
বেশ গরম পড়ছে দিল্লিতে। তাই এখানকার ফুটপাতে মোসাস্বি লেবু ও কাগজি লেবুর শরবত বিক্রি বেশ চলছে। মোসাম্বি লেবু অনেকটা কমলা লেবু প্রজাতির। প্রথমে এটাকে ছুলে মেশিনে দেওয়া হয়। তারপর হাত দিয়ে ঘোরালে এক পাশ দিয়ে রস পড়ে, আর অন্যপাশ দিয়ে পড়ে ছোবলা। অনেকটা আমাদের তেলকলের ছোট ভার্সনের মতো। প্রতি জ্ঞ্নাস ২০ রুপি। তবে কাগজি লেবুর শরবত আমরা যেমন দুই কাঠের মাঝখানে চিপে রস জ্ঞ্নাসে ফেলি, এখানেও তেমন। দুই পদের শরবতই খাই আমরা।
দুপুরের খাবার খাই আরেক রেস্টুরেন্টে। এবার ডিম ভাজা আর ডাল দিয়ে। ডিম ভাজাটা অন্যরকম করে। মামলেট বা পোচ নয়। কাঁচামরিচ আর পেঁয়াজ বেশি দিয়ে ভাজাটা হয় একেবারে গুঁড়ো গুঁড়ো করে। স্বাদ মন্দ না।
রাতের খাবারের স্বাদ নিতে এবার আসি আরেক এলাকার রেস্টুরেন্টে। আসলে আসাদ ভাই এখানকার প্রায় সব অলিগলি চেনেন। কোন রেস্টুরেন্টে কোন খাবার ভালো, তা তার মুখস্থ। এবারও থালি প্যাকেজ। তবে ডাল-সবজিটা আগের রেস্টুরেন্টের চেয়ে একটু আলাদা। সঙ্গে বেগুন ভাজাও আছে। থালি প্যাকেজের বাইরে এ সফরে ডিম ভাজা দিয়ে খিচুড়িও খাই। মাটন বিরিয়ানির স্বাদও নিই। তবে এখানকার ভাত, বিরিয়ানি বা খিচুড়ি অধিকাংশ রেস্টুরেন্টেই রাম্না হয় বাসমতি চাল দিয়ে। এ চালের গন্ধটা বেশ।
কোথাও গেলে সেখানকার স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া সফরের অন্যতম বিষয় বলেই মনে করি। আর সে কারণে দিল্লির এ সফরেও নিই এখানকার বিভিম্ন খাবারের স্বাদ। তবে এ সফরে অন্য খাবারের চেয়ে ছোলা বাটোরার স্বাদ কেন যেন জিহ্বায় একটু বেশিই লেগে আছে। ছবি : লেখক। সৌজন্যে: সমকাল।