সিয়াম মাহমুদ আবদুল্লাহ
তিনজন মিলে যাওয়ার কথা ছিলো ইন্ডিয়াতে। কিন্তু, একজনের ভিসা হয় নাই, আরেকজন আমার সাথে অভিমান করে পেপারস জমা দেন নাই। রিপন, লিটন আর আমার বন্ধুত্বটা হটাত করেই হয়ে যাওয়া। আমাদের বন্ধুত্বটাও পাগলামীর সীমানা ছাড়িয়ে।
একবার শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়ে ২টায় মসজিদ থেকে বের হয়েছি। হটাত রিপন প্রস্তাব দিলো চলো ঘুরে আসি কোথাও থেকে। কই যাবো? লিটনের প্রশ্ন? আমি বললাম রাজশাহী যাই নাই কখনো। ব্যাস বিল পাশ, আর জৈষ্ঠ্যের শেষদিকে রাজশাহীর আমের গন্ধটা গোপনে সবার নাকের সামনে।
সেই রাতেই আমার গািড় নিয়ে বের হয়ে গেলাম, তিনজন। রাতে বগুড়া গিয়ে আকবরিয়া হোটেলে ভাত খেলাম। সকালে রাজশাহী। আমের শহর। ভার্সিটি, আমের বাজার সব ঘুরে বিকালে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা। পথে চলনবিলে বৃস্টি স্নান আর পানকৌড়িদের খেলা, কখনো ভুলবার নয়।
যাক, ৩ পাগলের মধ্যে ২ পাগল ছাড়া যাচ্ছি ভারত মুল্লুকে। যদিও এবার রুট হরিদাশপুর না, এবার হলো বুড়িমাড়ি-চ্যাংগড়াবান্ধা।
আমাদের ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজ ভাই আমার একার যাত্রা শুনে যেতে চাইলেও অফিস এবং আনুসঙ্গিক কারণে যেতে পারেন নি। তবে মজা করে বললেন “রাজকন্যাকে উদ্ধার করতে রাজপুত্রকে একাই যেতে হবে, প্রথমে এই পাড়ে বুড়িকে মেরে বর্ডার ক্রস করে অইপাড়ে চ্যাংড়াকে বেধে যেতে হবে ভারত মুল্লুকে”।
তার কথার কোনো আগা মাথা তখন না বুঝলেও পরে ঠিকই বুঝেছিলাম।
আসলে এপাড়ের শেষ গ্রামের নাম বুড়িমারি আর ওপাড়ের সীমানা শুরুর গ্রামের নাম চ্যাংড়াবান্ধা।
মন খারাপ করে অবশেষে যাচ্ছি ভারতে।
এদিকে আমার নুয়া (৪র্থ) মামার ছেলে শিলীগুড়িতে পড়ে বলে দীর্ঘ ৮ বছর যাওয়া আসা করে। আম্মার কাছে জানতে পেরে আমাকে ফোনে অনেকের সাথে পরিচিত করে দিলেন।
যাক, রাত ৯টায় রওয়ানা দিলাম বাসা থেকে। গন্তব্য কল্যাণপুর এস,আর ট্রাভেলস। এসি গাড়িতে করে যাবো বুড়িমাড়ি। কাউন্টারে গিয়ে দেখি আমার নামে টিকেট কাটা আছে, মামা কেটে দিয়েছে। ৮৫০ টাকা বেঁচে গেলো সেই আনন্দের চেয়ে এসি গাড়িতে যাচ্ছি সেই আনন্দটাই বেশি মনে হলো। তার সাথে ম্যানেজার থেকে শুরু করে সবার এক কথা “মামা কি খাবে? রাতে খেয়েছো নাকি?” মনে হচ্ছে আসলেই রাজপুত্র যাচ্ছি। একটা প্যারোিড গান মনের মধ্যে গুন গুন করছিলো-“মামু, খালু, দুলাভাই থাকিলে আর চিন্তা নাই…”
মনে এমন আরো কিছু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো, ঠিক সেই সময় দেখি আমাকে বিদায় দেয়ার জন্য সারাদিন অফিস করেও মতিঝিল থেকে ছুটে এসেছেন ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আমার খুব পছন্দের মোস্তাফিজ ভাই। খুশিতে আমার চোখে পানি এসে পড়েছিলো। তিনি বললেন, তোমাকে বিদায় দিতে আসবো না, তা কি হয়? যাক গািড় ছাড়ার আগ পর্যন্ত ছিলেন তিনি। (চলবে)