সামছুর রহমান
যানজট, ভাঙা রাস্তা আর জলাবদ্ধতায় বিরক্ত রাজধানীবাসীর অনেকেই এখন আসছেন উত্তরার দিয়াবাড়ীতে। শরতের বার্তা নিয়ে আসা কাশফুলের ছোঁয়ায় প্রশান্ত হবে প্রাণ। লেকের শীতল বাতাস ও সবুজের সমারোহে মুক্তি মিলবে শহুরে কোলাহল থেকে।
সবুজ প্রান্তর। লেক পাড়। ফুরফুরে ঠান্ডা বাতাস। চারপাশে কাশবন। রাজধানীর ভেতরে এ যেন এক ভিন্ন জগৎ। উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে আসছেন নানা বয়সী লোকজন। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ এই দিয়াবাড়ী।
ইদানীং অনেক টিভি নাটকে এক বিশাল বটগাছ আর তার দুই পাশে রাস্তার গ্রামীণ পরিবেশ দেখা যায়। এই বটগাছেরও দেখা মিলবে দিয়াবাড়ীতে। লোকমুখে জায়গাটার নাম হয়ে গেছে ‘দিয়াবাড়ী বটতলা’। প্রায়ই এখানে চলে নাটকের চিত্রগ্রহণ। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা পেয়ে যেতে পারেন প্রিয় কোনো তারকার।
বটতলা থেকে কিছুটা সামনে নির্মাণকাজ চলছে তিন নম্বর সেতুর। সেতুর দুই পাশে লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে বোট হাউস। বাঁশ ও কাঠের কাঠামো দিয়ে বানানো হয়েছে বসার জায়গা। সারি দিয়ে বাঁধা প্যাডেল বোট (পায়ে চালিত নৌকা)। ঘণ্টা ভিত্তিতে ভাড়া করে ঘুরতে পারবেন।
সদ্য বিবাহিত কায়সার আহমেদ স্ত্রীকে নিয়ে এমন একটি বোটে উঠতে গিয়ে বললেন, ‘ঢাকার ভেতরে ঘোরার জায়গা তো নেই। পুরো সপ্তাহের কর্মব্যস্ততার পরে একটু বেড়াতে ইচ্ছে করে। এখানে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।’
বোট হাউস ‘শক্তি ওয়াটার গার্ডেন’-এর ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বললেন, ‘আমাদের এখানে ছাদসহ ও ছাড়া—দুই ধরনের প্যাডেল বোট আছে। গত মাসে খোলার পর থেকে প্রতিদিনই লোকজনের আগমন বাড়ছে। তবে ছুটির দিনে লোকসমাগম বেশি হয়।’
এসেছে শরৎকাল। কিন্তু শারদীয় আবেশের ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায় না ইট-কাঠের রাজধানীতে। শরতের আগমনী বার্তা জানিয়ে দিয়াবাড়ীতে ফুটতে শুরু করেছে কাশফুল। পুরো দিয়াবাড়ীতেই সবুজ ঘাস জাল বিছিয়ে আছে যেন। পা মেলে একটু বসলেই ছুটে আসা ফুরফুরে বাতাসে জুড়িয়ে যায় প্রাণ।
মিরপুর থেকে দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বকুল আহমেদ। বাচ্চারা হাতে কাশফুল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বকুল আহমেদ বললেন, ‘কাশফুল দেখাতেই নিয়ে এলাম। এখনো সেভাবে ফোটেনি। কিন্তু বাচ্চারা তাতেই আত্মহারা। ওদের দেখে নিজেরও ভালো লাগছে।’
চারদিকে সুনসান নীরবতা। একটু পরপর সেই নীরবতা ভেঙে শাঁ করে উড়ে যায় উড়োজাহাজ!
এয়ারপোর্ট থেকে উড়ে আসা উড়োজাহাজগুলো খুব কাছ দিয়ে উড়ে যায়। ঢাকায় কাছ থেকে উড়োজাহাজের উড়ান দেখতে চাইলে এর চেয়ে ভালো জায়গা হয় না।

সুসজ্জিত এমন নৌকায় চড়ে লেকে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থাও আছে।
এখানে অনেকে আসেন উড়োজাহাজের ওড়া দেখতে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদনান আরেফিন ও তাঁর বন্ধুরা উত্তরা থেকে এসেছেন। সাদনান বলেন, ‘ছেলেবেলায় যেমন মাথা উঁচু করে উড়ে যাওয়া উড়োজাহাজ দেখতাম, এখানে এসে সে কথা মনে পড়ে গেল।’
বটতলা থেকে সামনে এলে অনেকখানি জায়গাজুড়ে আছে লালমাটির চর। সেখানে তুরাগের একটি মরা শাখায় জাল ফেলে মাছ ধরেন জেলেরা। ইট-কাঠের এই শহরে এক টুকরো সবুজের দেখা মেলাই যেখানে ভার, সেখানে সবুজের প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। কিন্তু এই অসম্ভব ইচ্ছা কিছুটা হলেও পূরণ করবে ‘দিয়াবাড়ী’। মনোরম পরিবেশে প্রিয়জনকে নিয়ে কাটিয়ে আসতে পারেন একটি সুন্দর বিকেল!
উত্তরা রুটের যেকোনো গাড়িতে উঠে হাউস বিল্ডিং নামতে হবে। এরপর ‘জনপথ’ ধরে মাসকট প্লাজার কিছুটা সামনে থেকে লেগুনা ছাড়ে। লেগুনা নামিয়ে দেবে একেবারে দিয়াবাড়ী বটতলায়। ভাড়া ২০ টাকা। লেগুনায় উঠতে না চাইলে নিতে পারেন রিকশা বা অটোরিকশা। অথবা মিরপুর বেড়িবাঁধ হয়ে আবদুল্লাহপুর রুটের গাড়িতে উঠে পঞ্চবটী নেমে চলে যেতে পারেন দিয়াবাড়ী। সেখান থেকে হেঁটে যেতে লাগবে ১৫-২০ মিনিট। নির্মল হাওয়া পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলেও মন্দ লাগবে না। সূত্র : প্রথম আলো