:: জাহিদ হাসান শাকিল ::
গাছ গাছালিতে ভরা সবুজের সমারোহ, পাখিদের কলতান মুগ্ধ করে সবাইকে। দেখা মেলে দল বেঁধে মহিষ আর ভেড়ার ছুটে চলা। এ জায়গাটির নাম সন্দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা হাজার বছরের পুরনো এই দ্বীপ। ভাঙন কবলিত, নতুন নতুন চরে ব্যাষ্টিত এই দ্বীপে এখন বাস্তবে রূপ পাচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার স্বপ্ন।
প্রকৃতির অপরূপ মায়াবীর চাদরে ঢাকা সবুজ, শ্যামল, মনোমুগ্ধকর, নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমারোহে ভরপুর এই দ্বীপ। নানা জাতের পাখি, মাছ ও প্রাকৃতিক সম্পদের অফুরন্ত ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত সন্দ্বীপ। নারকেল গাছ আর মৌসুমি ফলের গাছে ভরা সন্দ্বীপের প্রতিটি বাড়ির বাগান। গাছের ডালভর্তি প্রকৃতির অপার দান পাকা ফল। পুকুরভর্তি মাছ। কারুকার্যে খচিত বাড়িঘর, সুদৃশ্য শানবাঁধানো ঘাট। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। এলাকাজুড়ে জারি গান। সৌন্দর্যের প্রভাবশালী পর্যটকদের আগমন ঘটেছিল। একসময় পীর-আউলিয়া এবং রাজা-মহারাজাদের স্বর্গরাজ্য ছিল এই দ্বীপ। এখনও সমন্বিত পরিকল্পনা আর সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে সন্দ্বীপকে গড়ে তোলা যায় দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে।
নদী আর সাগরের জল আছড়ে পড়ে দ্বীপের চারপাশে। নদী কিংবা সাগরের পানিতে সকাল-বিকাল সূর্যের আলো অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। নদীতে চিকচিক বালিতে সূর্যের আলো তৈরি করে মোহনীয় পরিবেশ। ছোট ছোট নৌকা চলছে বড় বড় ঢেউয়ের তালে। জাল ফেলে রাতদিন মাছ ধরছে জেলেরা। সাগর আর নদীর তীরে ভেসে বেড়ায় অসংখ্য পাখি। তাদের কিচিরমিচির শব্দে সন্ধ্যার পরিবেশ হয়ে ওঠে সত্যিই দারুণ উপভোগ্য।
সন্দ্বীপকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো যথেষ্ট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে এই দ্বীপে। সম্ভাবনাময় সন্দ্বীপের সমুদ্রসৈকত সম্পূর্ণটাই যেন একটি পর্যটন কেন্দ্র। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমনে মুখর হয়ে উঠতে পারে সন্দ্বীপ। এখানকার অফুরন্ত প্রাকৃতিক শোভার কোনো তুলনা নেই। পর্যটনের সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে একদিন সন্দ্বীপ বিশ্বসেরা পর্যটন নগরীগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। এতে ভাগ্য বদলে যেতে পারে এলাকার মানুষের। সন্দ্বীপ এক অপার সম্ভাবনাময় সম্পদে ভরপুর চরাঞ্চল। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাময় পরিচিত অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন সৈকতের আরেক নাম হতে পারে এই দ্বীপ। এখানে গড়ে উঠতে পারে শিল্প-কারখানা। সম্ভাবনা রয়েছে নৌঘাঁটি ছোট বন্দরের।
প্রকৃতির অপরূপ প্রাণবৈচিত্রে সমৃদ্ধ সন্দ্বীপ যেখানে রয়েছে দূষণ ও কোলাহলমুক্ত সৈকত। বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, শামুক, ঝিনুক, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, সন্দ্বীপ বাসীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও সাধারণ জীবন পর্যটকদের আকর্ষণ। জেলেদের সাগরে মাছ ধরার দৃশ্য, সূর্যাস্তের দৃশ্য, বনবেষ্টিত আঁকাবাঁকা নদীপথে নৌকা ভ্রমণ, ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সন্দ্বীপ চ্যানেল হয়ে সাগরে মাঝপথে বঙ্গোপসাগরের দৃশ্য অবলোকন, স্থানীয় ও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত, যা পর্যটকদের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী বাড়তি আকর্ষণ।
সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করা গেলে পর্যটন বিকাশে অন্যতম স্থান হতে পারে সন্দ্বীপ। পাশাপাশি সন্দ্বীপ বাসীর জন্য বাড়তি আয়ের উৎস হতে পারে। তবে যেকোন ক্ষেত্র বিশেষ করে এ ধরনের দ্বীপে পর্যটনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে পরিবেশ ও প্রাণীবৈচিত্রসসহ সন্দ্বীপবাসীর সংস্কৃতির দিকে খেয়াল রেখে যথাযথ নীতিমালা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।
সন্দ্বীপের উপজেলা চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বলেন: এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল হতে পারে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে হালকা, মাঝারি ও ভারী শিল্প-কারখানার যদি হয় এলাকার পুরো চিত্র পাল্টে যাবে।
সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন: আগামীর নতুন প্রজন্ম যারা শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠছে জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রযুক্তিতে তাদের এখানে ভালো কর্মসংস্থান আয়-রোজগারের একটা ব্যবস্থা হবে। এলাকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষের একটা জীবনমানের উন্নয়ন হবে। বাংলাদেশের ১০০টি ইকোনোমিক জোন হবে। একটি হতে পারে সন্দ্বীপে। সৌজন্যে: চ্যানেল আই