Skip to content

দেখে এলাম হিজাব নগরী

:: খলকু কামাল ::

অনেক দিন থেকে যাবো যাবো করে যাওয়া হয় না। কবে যাব, নিজেও জানি না। হঠাৎ করে সেদিন বাফেলো থেকে আমার এক নিকটতম ভাতিজা শিব্বির বাসায় এসে হাজির। তার সাফ কথা, চাচা আপনি গত কয়েক বছর থেকে
অনেক বার বলেছেন, বাফেলো বেড়াতে যাবেন। এবার সিরিয়াসলি বলুন তো, কবে যাবেন? ইনশাআল্লাহ আমি পুরো বাফেলো আপনাকে ঘুরিয়ে দেখাবো। গিন্নি তার সঙ্গে একমত হয়ে বললেন, সময় বের করে একবার বেড়িয়ে আসুন।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, ২ দিনের জন্য গিয়ে দেখবো বাফেলোতে কী এমন মধু রয়েছে! নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশিদের কাছে বাফেলো এক যাদুর শহর হিসেবে পরিচিত। ৩৭৫ মাইল দূরত্ব বাফেলোতে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে সামারে ঘুরতে যান। আমার একমাত্র মেয়ে সাওদাকে বললাম, বাসের টিকিট কেনার জন্য। ইন্টারনেট থেকে নিউ ইয়র্ক বাফেলো গ্রেহাম বাসে রিটার্ন টিকিট ১১৭ ডলার।

শনিবার রাত ১২.৩৫ মিনিটে টাইম স্কোয়ার বাস টার্মিনাল থেকে ৫৩ জন যাত্রী বাফেলো ও টরন্টোর পথে যাত্রা শুরু করে। পথে পথে ৫টি স্পটে ১০-১৫ মিনিট করে বিরতি নেয়। বাসের মধ্যে ঘুম আসে আর যায়।

এভাবে ৬টা ৮ মিনিটে গাড়িতে ফজর নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল সোয়া ৯টায় বাফেলো বাস টার্মিনালে বাস পৌঁছে। ভাতিজা শিব্বির সারা রাত কাজ শেষে ভোরবেলায় ঘরে ফিরে, আবার ৯টায় আমাকে তার গাড়িতে তুলে নিলো। তার আরামকে বিসর্জন দিয়ে আমার প্রতি তার আন্তরিকতা, স্নেহ-মমতা দারুণভাবে অভিভূত করেছে। তাকে অন্তর থেকে মোবারকবাদ জানাই।

শ্রদ্ধেয় পাঠক, এবার চলুন দেখা যাক কিসের মোহে মানুষজন, বিশেষ করে স্বল্প আয়ের লোকজন নিউ ইয়র্ক ছেড়ে বাফেলোমুখী হচ্ছেন। বর্তমানে নিউ ইয়র্ক সিটিতে ৮৫ লাখ অধিবাসী বাস করেন। নিউ ইয়র্কের পরে দ্বিতীয় সিটি হিসেবে পরিচিত বাফেলোতে রয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার নর-নারী। আয়তন ৫২ বর্গমাইল। আবার বাফেলো থেকে আমাদের ব্রংক্স সাইজে ছোট অর্থাৎ ৪২ বর্গ মাইল। ব্রংক্স’র লোক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। বাফেলো সিটির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ১৫ মিনিট সময় ব্যয় হয়। এর কারণ নিরিবিলি এ শহরের কোথাও ট্রাফিক জ্যামের নাম-নিশানা নেই। অনেকের কাছে আরাম-আয়েশের শহর হিসেবে পরিচিত।


বাফেলোর ইস্ট সাইট এলাকায় জাকারিয়া ও মারকাজ মসজিদকে ঘিরেই মূলত বাংলাদেশিদের বসতি শুরু হয়। আশেপাশে কয়েক শত বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বার্মিজ মুসলিম পরিবারের বাড়িঘর রয়েছে। আর রয়েছে ৮-১০টি হালাল গ্রোসারি স্টোর। বাফেলো ডাউন টাউন সিটি হচ্ছে প্রায় মাইলখানেক দূরে। এখানে রয়েছে বাস টার্মিনাল। বাফেলো সিটি প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে মোট ৩ দিন একটানা অকশন ডেকে থাকে। এতে যে কেউ অংশ নিতে পারে। এবার গত মাসে অকশনের দিন হাজার খানেক লোকের মধ্যে প্রায় ৫০০ শ’ বাংলাদেশি অংশ নেন। এবারও দূর-দূরান্ত থেকে প্রচুর বাংলাদেশি অকশনে অংশ নিয়ে পুরাতন বাড়িঘর, গির্জা, বড় বড় ওয়্যার হাউস কিনে। ন্যূনতম ৫ হাজার থেকে নিয়ে ১৭২ হাজার ডলারের কেনাকাটার জমজমাট আসরের আয়োজন হয়ে থাকে। এভাবে অনেক বাংলাদেশিদের ন্যূনতম ২-১টি এবং সর্বোচ্চ ৫০-৬০টি বাড়িঘর রয়েছে। অনেকে আবার দেশ থেকে জায়গা-জমি বিক্রি করে তার অর্থ বাফেলোতে বিনিয়োগ করছে। বাফেলোতে বাসা ভাড়া ৩ বেডরুম ৫০০ ডলার। আর দুই রুম ৪০০ ডলারে পাওয়া যায়। আর ভাড়াটিয়া হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বার্মিজরা।

বাফেলো হচ্ছে ইসলামের জন্য সর্বসেরা শহর। ২৫/২৬ বছর আগে জাকারিয়া দারুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করে ভারতীয় এক ধার্মিক চিকিৎসক। বর্তমানে ছেলেদের মাদরাসায় প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী।

তারা আলেম ও হাফিজীর সঙ্গে আমেরিকার সিলেবাসে পড়ালেখা করছে। পাশাপাশি তাদের মহিলা মাদরাসায় প্রায় আড়াই শত ছাত্রী রয়েছে। তারা আলেমা ও হাফেজা হচ্ছে। উভয় মাদরাসায় থাকা-খাওয়াসহ সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। উভয় মাদরাসাকে ঘিরেই মুসলিম আবাসস্থল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বাফেলোতে প্রতিটি মুসলিম মেয়ে ও মহিলা হিজাবের সঙ্গে চলাফেরা করছে। এ শহরকে হিজাব নগরী বলা যায়। অনেকে বলে থাকেন ইসলামী পরিবেশ আইন-কানুনের উন্নত শহর। ভয়ভীতি থেকে মুক্ত এ শহর। যারা নিউ ইয়র্কে বাড়ি ভাড়া দিয়ে কুলাতে পারেন না তাদের জন্য বাফেলো উত্তম স্থান। ৯-১০ ডলারের কাজ পাওয়া যায়। বাসে যাতায়াত করতে হবে। বিশেষ করে অনেক চকলেট কারখানায় বাংলাদেশিরা কাজ করছে।

রোববার জোহর নামাজ বার্মিজ মসজিদে আদায়ের পর দুপুরে শিব্বিরের বাসায় খানা শেষে দেখতে যাই আমেরিকার সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম ২০ হাজার শিক্ষার্থীর বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়। বিশাল এলাকা নিয়ে আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটছে লেকের পাশ দিয়ে। চোখ ধাঁধানো কটেজগুলো বার বার দেখতে ইচ্ছে হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সবুজ অরণ্যের সমাহার পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। সেদিন বৃষ্টি থাকায় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে দেখার সুযোগ পাইনি। ফেরার পথে বায়তুল মোকাররমে আসর আদায় করতে হয়। মসজিদের ইমাম আগে এস্টোরিয়াতে ছিলেন। আমার পূর্ব পরিচিত। আমাকে দেখে খলকু কামাল ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মাগরিব পড়ার গন্তব্য মারকাজ মসজিদের দিকে যাত্রা করি। বাফেলোতে মারকাজ মসজিদ তাবলীগ জামাতের প্রধান কার্যালয় হিসেবে পরিচিত। প্রতি সপ্তায় শুক্রবার মাগরিব টু এশা শতাধিক মুসল্লির উপস্থিতিতে বয়ান হয়। মূলত এ মসজিদে বাংলাদেশিদের আনাগোনা বেশি। ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ ৯০% ভাগ মুসলিম বাংলাভাষী। দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপ-আলোচনার উত্তম জায়গা। শুধু কি তাই, মুক্তা ভাই জানালো, এ মসজিদটি ঘিরে বিয়ে-ওয়ালিমা, আকিকাসহ যেকোনো ইসলামী কাজের জন্য রান্নাবান্নার জন্য কিচেন রয়েছে। মসজিদ ফান্ডে ৪০ ডলার হাদিয়া দিয়ে যেকোনো মুসল্লি অনায়াসে খানাদানার আয়োজন করতে পারে।

আলহামদুলিল্লাহ, দু’দিনে মোট ৯টি মসজিদে আল্লাহ পাক নয় ওয়াক্ত নামাজ পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যেমন বার্মিজ, বায়তুল মোকাররম, মারকাজ, তাকওয়া, জাকারিয়া, লাককুয়ানা (ইয়েমেনী), কানেক্টিকাট ও মনার মসজিদসহ নয়টি মসজিদের মধ্যে জাকারিয়া মসজিদ আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। বিশাল গির্জা কিনে সিকি শতাব্দী আগে মসজিদে রূপান্তর করা হয়। এ মসজিদে পুরুষ-মহিলা মিলিয়ে মোট হাজার/বারো শ’ মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সোমবার ফজর নামাজ আদায় করেন ন্যূনতম ৬০/৬৫ জন মুসল্লি। ভারত ও পাকিস্তানিদের দ্বারা পরিচালিত মসজিদ কমিটি। ভাব-গম্ভীর পরিবেশে মসজিদে নামাজ পড়ার অনুভূতিই অন্যরকম। মসজিদ কমিটি সুসংগঠিত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী যে, আশেপাশের অনেক জায়গা-জমিসহ বড় বড় বিল্ডিং কিনে নিয়েছেন। তাদের মসজিদে পরিপূর্ণ ফিউনারেল হোম রয়েছে। আগামীতে তারা বাফেলোতে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার চিন্তা-ভাবনা করছেন, যা নিউ ইয়র্কের মতো ব্যয়বহুল শহরে কল্পনা করাই বোকামি হবে। সোমবার সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা। আগের রাত ১১টায় সর্বশেষ ফোনে আলাপ হয় মাসখানেক আগে নিউ ইয়র্ক থেকে বাফেলো পাড়ি দেয়া সিলেট সদর সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের অর্থ সচিব আমার অতি ঘনিষ্ঠজন ফখর ভাইর সঙ্গে। তাকে ঠিকানা দিয়ে বলি কাল সকালে সে জায়গা থেকে আমাকে পিকআপ করবেন। আমার বিল্ডিং-এর উপর তলার শ্রদ্ধেয় খালাম্মার বড় ছেলে মুক্তা ভাইর বাসায় নাস্তা খাওয়ার পালা। ঠিক ১১টায় ফখর ভাই নাস্তার টেবিলে এসে হাজির। তার সঙ্গে ছিলেন বাফেলোর অতি পরিচিত মুখ, কারো কাছে লম্বা শাহিন, কারো কাছে পুরাতন শাহিন। আবার অনেকের কাছে সিলেট সদরের শাহিন হিসেবে পরিচিত। অনেকের কাছে আবার শাহিন ভাই হিসেবে পরিচিত। আমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে বললেন, আমার ছোট ভাই ফারুক ও ছোট বোনের জামাই ইকবালের সঙ্গে বন্ধুত্ব। পার্কচেস্টারে দীর্ঘদিন ছিলেন।

গত ১৫ বছর আগে বাফেলো মুভ করেন। আরো বললেন, আমার মামাতো ভাই শামিম তার আপন তালতো ভাই। সে সূত্রে তিনিও আমার আত্মীয়। তিনি আরো বললেন, ’৮২-’৮৩ সাল থেকে আমার লেখালেখির সঙ্গে পরিচিত। বললেন, খলকু ভাই এবার চলুন কোথায় যাবেন, কি দেখবেন। রাত ১১টা পর্যন্ত আপনাকে সময় দিতে আমি আর ফখর ভাই রেডি। আমি চাই পুরো বাফেলোর একটি ফিরিস্তি আপনার কাছে তুলে ধরতে। যাতে আপনার প্রতিবেদনের লেখার পয়েন্ট পেয়ে যান। ফখর ভাই বললেন, শাহিন ভাই ভীষণ ব্যস্ত মানুষ। আজকের জন্য তার সকল ব্যস্ততা ও কর্মতৎপরতা স্থগিত থাকবে শুধুমাত্র নিউ ইয়র্ক থেকে আসা খলকু কামাল ভাইয়ের সম্মানার্থে।

বাফেলো থেকে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ। আমরা তিনজন ছুটে চললাম বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ নায়েগ্রা দেখতে। এ দূরত্ব যাওয়ার পথে গাড়ি থেকে চলন্ত অবস্থায় নায়েগ্রা নদীর বৈচিত্র্যময় দৃশ্য উপভোগ করতে করতে এক পর্যায়ে জলপ্রপাতের কাছে এসে পৌঁছি। আর আল্লাহর দেয়া অফুরন্ত সৌন্দর্য্য উপভোগ করি। সেদিন বৃষ্টি ও বাতাসের মধ্যে ৩০ মিনিট অবস্থান করে সেলফির মাধ্যমে কয়েকটি ছবি তুলে আবার ফেরার পথে প্রাকৃতিক রূপবাহার ও নয়নাভিরাম মন ভোলানো দৃশ্যগুলো অবলোকন করতে করতে আমরা জোহর পড়তে মুসলিম এরিয়া লাকুওয়ানা গিয়ে পৌঁছি। ওই এলাকায় ইয়েমেনী আরব বসবাসরত। তাদের তৈরি নতুন ও আকর্ষণীয় মসজিদে জোহর নামাজ আদায় করে বাফেলোর একমাত্র হালাল উপায়ে মুরগির ফার্ম দেখতে যাই।

শাহিন ভাই গাড়ি ঘুরিয়ে আবার শহরমুখী হলেন। গাড়ি শাঁ শাঁ করে চলছে। চলার পথে কথার ফাঁকে ফাঁকে তার কাছ থেকে প্রচুর তথ্য জেনে নিলাম। তার কথা হলো, কোনো এক সময় পার্কচেস্টারে কোনো বাঙালি ছিলেন না।

বর্তমানে ৮/১০ হাজার বাংলাদেশির আবাসস্থলে রূপ নিয়েছে। ওই রকম বিশেষ করে যারা স্বল্প আয়ের লোক মাসে বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তাদের জন্য বাফেলো হলো সোনায় সোহাগা। তারা দলে দলে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করুন, এটাই তিনি মনেপ্রাণে কামনা করেন। যত প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন তিনি করতে প্রস্তুত। তিনি বললেন, ইতিমধ্যে প্রায় ২০০টি পরিবারকে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন। তার দৃঢ় বিশ্বাস বাফেলো একদিন হবে এক টুকরো বাংলাদেশ। কারণ যে হারে বাংলাদেশিরা ইমিগ্রান্ট ভিসায় নিউ ইয়র্কে আসছেন, তাদের একমাত্র শেষ ভরসা হবে বাফেলো। এখানে রয়েছে অনেক মসজিদ, মাদরাসা, ইসলামী পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নত আবাসভূমি এবং নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা। শাহিন ভাই বললেন, বর্তমানে ৮/১০টি হালাল গ্রোসারিসহ প্রায় ১৫/১৬টি মসজিদ রয়েছে। খুব শিগগিরই হালাল সুপার মার্কেট নামে একটি বড় স্টোর চালু হবে। অনেক চার্চ মুসলিমরা কিনছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো এক সময় পুরো বাফেলো সিটি ছিলো রিলিজিয়ন নগরী। আগেকার লোকেরা ধর্মকর্ম বেশি পালন করতো। বর্তমানে তারা উল্টো পথে চলার কারণে গির্জায় লোকজন শূন্যের কোঠায়। তাই বাধ্য হয়ে গির্জা কর্তৃপক্ষ সবগুলো মুসলিমদের কাছে বিক্রি করছে। তাদের ধার্মিক লোকেরা শহর থেকে আউট হচ্ছে আর মুসলিমরা দ্রুতগতিতে প্রবেশ করছে। মোট কথা, বাফেলো মানচিত্র দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। আগে ছিলো কালোদের দখলে। মাশআল্লাহ এখন ধীরে ধীরে চলে আসছে বাংলাদেশিসহ মুসলিমদের দখলে। এ পর্যন্ত তাদের অনেক বড় বড় গির্জা মসজিদে রূপ নেয়ার পাশাপাশি শহরের উপকেন্দ্রে বড় একটি জেলখানা কিনে বিশাল মাদরাসা তৈরি হয়েছে। আর এটির পেছনেই রয়েছে ভারতের গুজরাটি মুসলিমরা। তারা এতই সুসংগঠিত যা বলে তা করিয়ে ছাড়ে। তাদের কারণে বাফেলোতে মুসলিমরা অহরহ আসছে এবং এ অবস্থা চলতেই থাকবে।

বাফেলোর বাংলাদেশিদের সুখ-দুঃখের সাথী শাহিন বললেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বল্প লাভে যাতে বাড়িঘর কিনতে পারে তার লক্ষ্যে তারা ৪ জন মিলে বিএসবি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি বিজনেস ফোরাম গঠন করেছেন। প্রতিটি মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। তাদের ৪ জনের অন্যতম পার্টনার ফখর বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। যে কাউকে ভালো পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেয়া এবাদতের সমান। তাদের বাকি ২ জন মারুফ ও কয়ছর। তারা ৪ জনই সিলেট শহর ও শহরতলীর অধিবাসী।

সোমবার দুপুরে খেতে গেলাম শাহিন ভাইর বাসভবনে। ভাবি সাহেবান একেবারে সিলেটি কায়দায় হরেক রকমের আইটেম দিয়ে টেবিল সাজিয়ে দিলেন। আমরা মজাদার খানা তৃপ্তি সহকারে খেলাম। শাহিন ভাইর স্ত্রীও তাকে অনুসরণ করে সে পথে অগ্রসর হচ্ছেন। যেকোনো মহিলা অথবা কোনো বাচ্চার প্রয়োজনে বাংলা ইন্টারভিউসহ ইংরেজি ফরম ফিলআপসহ অফিস অথবা যেকোন স্কুলে যেকোনো প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন। তাদের ২ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে সুখী সংসার। এক মেয়ে ডাক্তার ও ছোট ছেলেকে হাফেজ বানাবেন বলে জানালেন। আর আগামী বছর শাহিন ও ফখর ভাইর পবিত্র হজে যাওয়ার জন্য দোয়া চাইলেন। আল্লাহ তাকে তৌফিক দিন।

মাগরিব নামাজ আদায় করলাম সোমালিয়া অধ্যুষিত এলাকার বিরাট এক মসজিদে, যে মসজিদ গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করে বাফেলো জামে মসজিদ নামকরণ করা হয়। নামাজ আদায়ের পর পর দেখা পেলাম ব্রংক্স একই এলাকার আমার প্রতিবেশী কাউসার ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি মাসখানেক আগে পরিবার নিয়ে বাফেলো মুভ করেছেন। খলকু ভাই বলে জড়িয়ে ধরেন। রাতের খানা খাবো তার বাসায়। আমার সাথী সংখ্যা ৩ জন। আমাদের প্রতি তার আন্তরিক আপ্যায়ন ছিলো চোখে পড়ার মতো। তিনি ছিলেন আমাদের বায়তুল মামুর মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। ঠা-া মেজাজ ও অত্যন্ত সহজ সরল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন।

নিউ ইয়র্কের সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক, মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বড় কুটুম নিয়াজ মাখদুমের সঙ্গে গত দেড় যুগ থেকে লেখালেখির মাধ্যমে পরিচয় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে রূপ নেয়। নিউ ইয়র্কে সিলেট উন্নয়ন পরিষদ যখন গঠন করি তখন বিভিন্ন লিফলেট দাবিনামার স্মারকলিপি সে ফি সাবিলিল্লাহ তৈরি করে দিতো। তার এ উদারতার জন্য আমি তাকে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। প্রতি মাসে ১/২ বার বাংলা পত্রিকা অফিসে যেতাম। তখন নিয়াজ আর আমি এক সঙ্গে আসর ও মাগরিব নামাজ জামাতে আদায় করতাম। তার আমার অনেক স্মৃতি এখনো মনে পড়ে। তার সর্বাঙ্গীণ কুশল কামনা করছি। সে গত ৩/৪ বছর আগে এস্টেরিয়া ছেড়ে দ্বীনি পরিবেশে বসবাসের জন্য পুরো পরিবার নিয়ে বাফেলো মুভ করে। আমি যে এবার বাফেলো যাচ্ছি তাকে আগে জানাইনি। এর কারণ তাকে আচ্ছামতো সারপ্রাইজ দেয়া। মনার মসজিদে এশার নামাজ শেষে দেখা পেয়ে সীমাহীন আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরেন। আমার প্রতি তার আরজ যে, খলকু ভাই পরিবার নিয়ে বাফেলো চলে আসুন। এখানে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন। আমি নিয়াজকে আল্লাহ পাক নিউ ইয়র্কের মতো দোজখী পরিবেশ থেকে রক্ষা করে এই নিরিবিলি শহরে ইসলামী পরিবেশে বাস করার তওফিক দান করেছেন তাই আল্লাহ পাকের শোকর আদায় করছি। খলকু ভাই আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম শুক্রবার বাফেলো বাংলা নামে প্রথম অবস্থায় মাসিক পত্রিকা বের করবো। কোনো ধানাই-পানাই চলবে না। আপনার নিয়মিত লেখা চাই। দীর্ঘদিন পর বাফেলোর প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশির জন্য এটি একটি আনন্দের সংবাদ। তারা একমাত্র অনলাইন পত্রিকায় চোখ বুলান। হয়তো আগামীতে এ পত্রিকা সাপ্তাহিক হওয়া বিচিত্র নয়। এটা নির্ভর করবে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কি পরিমাণ বিজ্ঞাপন আসে তার ওপর। নিয়াজ আরো বললো, বাফেলোর মুসলমানরা নগদ অর্থ দিয়ে বাড়িঘর কিনছে। অতএব সুদের মতো জঘন্যতম পাপ থেকে মুক্ত। পরে মসজিদের ইমামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলো। ২৮/৩০ বছরের যুবক হবে। উনার বাড়ি সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে। লেখাপড়া করেছেন শহরস্থ পাটানটুলা জামেয়া ইসলামিয়ার মতো একটি মানসম্মত অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠানে। আমার বাড়ি শেখঘাট বলতে তিনি বললেন, তার প্রিন্সিপালসহ অনেকেই শেখঘাট থাকেন। শেখঘাটের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ। এ মসজিদ আগে ব্যাংক ছিলো। ৮০ জন মুসল্লির কাছ থেকে ১ হাজার ডলার করে সংগ্রহ করে আজকের এই বিশাল মসজিদ তৈরি হয়। ইমাম সাহেব উপরে নিয়ে তাদের আগামী দিনের পরিকল্পনা জানালেন, কিভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামিক সেন্টার করা যায়। ইতিমধ্যে মসজিদের আশেপাশের অনেক ঘর-দুয়ার কিনে নিয়েছেন। মসজিদের উপর ২টি পৃথক হল রুম রয়েছে মহিলা ও পুরুষদের জন্য।

নিয়াজ ও ইমামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এবার রাত ১১টার ডাউনটাউনে যাওয়ার পালা। ১০ মিনিটের দূরত্বে নিউ ইয়র্কগামী বাসে তুলে দিতে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত এলেন ফখর ও শাহিন ভাই। তাদের দু’জনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। এ বিদায় শারীরিক। এ বিদায় বাহ্যিক। মনটা পড়ে থাকলো তাদের কাছে। আমি জানি, বিশ্বাস করি এ বিদায় শেষ বিদায় নয়। আরো বিদায়ের পালা আসবে। কারণ, বাফেলো আমাকে বার বার কাছে ডাকবে। বার বার আমাকে ফিরে আসতে হবে ওখানে।

বাফেলোর যে সব বন্ধু-বান্ধব আমার প্রতি আন্তরিকভাবে আতিথেয়তা দেখিয়েছেন তাদেরকে মোবারকবাদ। সৌজন্যে : মানবজমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *