Skip to content

নগরে এল নবান্ন


Bangladesh15112015N-17

সূর্যোদয়ের রাগে, বাদ্যের তালে নৃত্য আর পিঠা-পুলির স্বাদে নাগরিক জীবনে ধরা দিল বাঙালির চিরায়ত উৎসব নবান্ন।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন ফসল ঘরে তোলার এই উৎসবের আনন্দ আয়োজনে মিলিত হন রাজধানীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

Bangladesh15112015N-18

ভোরের আকাশে সূর্য উঁকি দিতেই আহির ভৈরবি রাগের সূরে চারুকলার বকুলতলায় জাতীয় পর্যায়ে নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়।

এরপর গান, কবিতা ও নৃত্যে বাঙালির ঐতিহ্য তুলে ধরা হয় উৎসবে; নবান্ন উৎসব নিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা যোগ করে ভিন্নমাত্রা।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলার মধ্যে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

Bangladesh15112015N-24

তিনি বলেন, “আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনেক উৎসব আছে। কিন্তু সার্বজনীন উৎসবের চর্চা বাড়াতে হবে। নবান্ন উৎসব আমাদের সার্বজনীন উৎসব। এই উৎসবে সব ধর্ম ও শ্রেণি-পেশার মানুষ একত্রিত হতে পারে।

“নবান্নের অঙ্গীকার হচ্ছে- নতুন বাংলাদেশ, সোনার বাংলা ও স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা; সেটা গড়ে তোলা।
‘এসো মিলি সবে নবান্নের উৎসবে’ স্লোগান নিয়ে এই উৎসবের আয়োজন করে জাতীয় নবান্নোতসব উদযাপন পর্ষদ।

উদ্বোধনী বক্তব্যে পর্ষদের চেয়ারম্যান লায়লা হাসান বলেন, “অশুভ শক্তির উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাদের দমিয়ে রাখা। কিন্তু যতই দুঃখ-শোক আসুক আমরা এগিয়ে যাব।

BC-15-11-15-N_13

“সংস্কৃতিকে হাতিয়ার করে আমরা যেভাবে এগোতে পারব আর কোনো কিছু দিয়ে আমরা সেভাবে এগোতে পারব না। অশুভ শক্তির মোকাবেলায় এই ধরনের উৎসব বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে।”

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক প্রিয়াংকা গোপের কণ্ঠে আহির ভৈরবি রাগে মুগ্ধ দর্শকদের সামনে একক আবৃত্তি নিয়ে আসেন বাচিকশিল্পী লায়লা আফরোজ।

এরপর ‘ঢেঁকি নাচে ঢাপুর ঢাপুর আর কি নাচে সই’ গানে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নাচের দল ‘নটরাজ’ ও সন্দিপন পরিবেশন করেন ‘ফসলের সোনা মাঠে …নবান্ন এলো বাংলার ঘরে’ আবৃত্তি।

BC-15-11-15-N_16

কাজী মদিনার একক আবৃত্তি আর উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনা শেষে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন।

এরপর ‘সোনালী ধানের ইশারাতে আয়রে ছুটে আয়’ গানের তালে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহর একক আবৃত্তির পর সমবেত কণ্ঠে ‘আবার জমবে মেলা বটতলা হাটতলা’ গানটি পরিবেশন করে সত্যেন শিল্পীগোষ্ঠী।

অনুষ্ঠানে ‘আয়রে মোরা ফসল কাটি ফসল কাটি’ গান পরিবেশন করেন মহাদেব ঘোষ। বহ্নিশিখা সংগঠনের সমবেত পরিবেশনা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যম ও নন্দন কলাকেন্দ্র।

এরপর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ফসল ঘরে তোলার উৎসবের ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ানগালা জুম নৃত্য’ পরিবেশন করে গারো কালচারাল একাডেমি।

BC-15-11-15-N_19

সব শেষে রাজশাহীর আলকাপ রঙ্গরস থিয়েটারের নাটক পরিবেশন শেষে বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা।

ঢাকের বাদ্য আর নৃত্যের তালে এই শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় শেষ হয়।

এ সময় দর্শক ও সংস্কৃতিকর্মীদেরকে পরস্পরের মধ্যে মুড়ি-মুড়কি ও পিঠা-পুলি বিতরণ করতে দেখা যায়। অনুষ্ঠানস্থলের পাশের কয়েকটি স্টলে বিক্রি করা হয় পিঠা-পায়েস, মুড়ি-মুড়কিসহ গ্রামীণ ঐহিত্যের ধারক বিভিন্ন খাবার।

BC-15-11-15-N_32

অনুষ্ঠানে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইটের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের আহ্বায়ক শাহরিয়ার সালাম।

দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩টায় বকুলতলায় রাজশাহীর ঐহিত্যবাহী আলকাপ রঙ্গরস থিয়েটারের নাটক পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

Bangladesh15112015N-13

সঙ্গীত নৃত্য ও আবৃত্তিতে অংশ নেয় ঋষিজ, ক্রান্তি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, পঞ্চভাস্কর, সুরবিহার, গীতিমায়া, উদীচী (মিরপুর), দৃষ্টি, ধ্রুব শিশু কিশোর সংগঠন, সুরতাল, অগ্নিবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয়, ভাওয়াইয়া গানের দল, বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, অনন্যা ও দিব্য নৃত্যজন।

রাতে জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে উৎসব শেষ হয়। সূত্র : বিডিনিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *