Skip to content

নদী সাগরের মোহনায়

:: আশরাফ উল্লাহ ::
তীরে এসে আছড়ে পড়ছে ছোট ছোট ঢেউ। মাথার ওপর গাঙচিলের ওড়াউড়ি। মোহনায় ছোট-বড় জাহাজের সারি। মাঝেমধ্যে সাইরেন বাজিয়ে নদীর বুক চিরে ছুটছে বিশাল জাহাজ। এসবের ফাঁকে দেখা মিলছে সাম্পানও। তবে এসব সাম্পানে বইঠা নেই, চলে ইঞ্জিনে। চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গার নেভাল এলাকার এমন দৃশ্যে মুগ্ধ না হয়ে উপায় কী! কর্ণফুলী নদী আর বঙ্গোপসাগরের মোহনার এই স্থানে প্রতিদিনই ভিড় করে অনেকেই।

বিকেল থেকে কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর ঘাট ঘিরে সরগরম হয় চারপাশ। সন্ধ্যা নামতেই জটলা বাড়ে। হইহুল্লোড় আর হাসির শব্দ মিলিয়ে যায় নদীর বিশালতায়। স্বল্প আলোয় ভাসমান দোকানিরা সাজান পসরা-চটপটি-ফুচকার সঙ্গে পেঁয়াজু, মাছ ভাজা। হাঁকডাক, বেচাকেনায় ব্যস্ততা। অবশ্য বেশ কিছু স্থায়ী দোকানও রয়েছে। তাঁরাও এসব মুখরোচক খাবার বিক্রি করেন।

৬ আগস্ট বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের মূল ফটক থেকে নেভাল একাডেমি পর্যন্ত স্থানে স্থানে চেয়ার পাতা। একটু আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। এরপরও বেড়াতে আসা মানুষ কম নয়। কেউ এসেছে বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে, কেউ পরিবার নিয়ে। তীরে পাতা চেয়ারে বসে সময় কাটছে। কত হবে জায়গাটির আয়তন সর্বোচ্চ আধা কিলোমিটার। এর মধ্যেই নানা আয়োজন।

তীরে পাতা চেয়ারে বসতেই হাসি হাসি মুখে এলেন এক যুবক-‘স্যার কী দিমু? ছোড পেঁয়াজু নিতে পারেন। এক্কেরে মচমইচ্যা। প্রতি প্লেট ৩০ টাকা। অর্ডার দিলে ভাজমু।’ বুঝলাম এই চেয়ারগুলো তাঁর। অগত্যা চেয়ার রক্ষায় দিলাম পেঁয়াজুর ফরমাশ। মিনিট বিশেকের মধ্যেই পেঁয়াজু নিয়ে হাজির দোকানির সহকারী কিশোর। মুখে দিতেই কথা আর কাজের মিল পেলাম। খাবারটা মজা।

দোকানির সঙ্গে কথা এগোয়। তাঁর নাম মো. ইদ্রিস। থাকেন পতেঙ্গার কাঠগড়ে। বাড়ি ফেনীতে। স্ত্রী আর সন্তানেরা থাকে গ্রামের বাড়িতে। আয়-রোজগার বাড়াতে দুই বছর ধরে চট্টগ্রাম শহরে তিনি। ভাসমান দোকানে সিলিন্ডারের চুলায় ভাজেন এসব। ইদ্রিস জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি করেন। ছুটির দিনগুলোতে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হয়। এখানে এ রকম দোকান আছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০টি।

কথার ফাঁকে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি এসে থামে। একদল তরুণ নেমে বসে পড়লেন পাশের খালি চেয়ারগুলোতে। ইদ্রিস সেই চেনা হাসি দিয়ে নেন ফরমাশ। ব্যস্ত হয়ে পড়েন তাঁর কাজে। বললেন, ‘ভাই কাস্টমার আইছে। পরে কথা কমু’।

ইদ্রিসের চেয়ার ছেড়ে সামনে এগোতে দেখা গেল চার তরুণী সেলফি তুলছে। ট্রেতে আগেই ফরমাশ করা পেঁয়াজু নিয়ে হাজির দোকানি। তরুণীদের একজন জয় চিং মারমা। রাঙামাটির কাউখালীর মেয়ে জয় চিং চট্টগ্রাম এলেই ঘুরে যান ১৫ নম্বর ঘাট। অন্য তিন বান্ধবী নিগার সুলতানা, লাবণী আকতার ও সীমা বড়ুয়া। তাঁরা চট্টগ্রাম শহরেই থাকেন। সবাই পড়েন স্নাতকে। কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই সবার এক কথা—‘এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যায়’।

কথার ফাঁকে সন্ধ্যা নামে। মানুষে গম গম হয়ে ওঠে চারপাশ। কর্ণফুলীতে তখন ভাটা। পাথুরে বাঁধের নিচে পানি। বড় জাহাজ বন্দর জেটির দিকে যাওয়ার সময়ই তুলছে ঢেউ। আলো জ্বলছে নোঙর করে থাকা জাহাজে। সেই আলো চিক চিক করছে পানিতে। ঠান্ডা হাওয়া গা জুড়িয়ে দিচ্ছে। বাঁধের প্রতিরোধ দেয়ালে বসে কেউ একজন ধরেছেন খালি গান—‘ওরে নীল দরিয়া…।’ সৌজন্যে: প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *