Skip to content

নবাবগঞ্জে একদিন

শাহানাজ পারভীন জোনাকি
ব্যস্ততার কারণে যাদের খুব বেশিদিনের ভ্রমণ করা সম্ভব হয় না তারা সহজেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘুরে আসতে পারেন নবাবগঞ্জ থেকে। ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে ইছামতীর তীরে অবস্থিত ঢাকার এই উপজেলায় এখনো রয়েছে নবাবী ছোঁয়া। ইতিহাস আর ঐতিহ্যে টইটুম্বুর এ শহর। প্রায় উনিশ শতক পর্যন্ত এখানে ছিল নবাবদের অস্তিত্ব। ২০০ বছরেরও পুরনো স্থাপত্য নকশার নবাববাড়ির খোঁজ মেলে এখানে। পুরনো স্থাপত্যবিদ্যার প্রতি যাদের আকর্ষণ রয়েছে তাদের জন্য ভ্রমণের এক উপযুক্ত জায়গা হতে পারে নবাবগঞ্জ।

নবাবগঞ্জের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জজবাড়ি। ছবি : শোয়েব মাহমুদ

নবাবগঞ্জের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জজবাড়ি। ছবি : শোয়েব মাহমুদ

নবাবগঞ্জে যেতে যেতে পথের ধারে বেয়ে চলা ইছামতী নদীর ঢেউয়ের শব্দ যেন বয়ে নিয়ে আসে প্রশান্তি। এই ইছামতী নদীর তীর ছিল তৎকালীন সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। এখন আর সেই বাণিজ্যিক তাৎপর্য না থাকলেও ইছামতীর সৌন্দর্যে কিন্তু একটুও ভাটা পড়েনি। নদীর পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এক কথায় অসাধারণ। যত দূর চোখ যায় দেখা যায় সবুজ প্রান্তর। অসংখ্য গাছ-গাছালি আর পাখির ডাক যেন মনে করতেই দেয় না ঢাকা থেকে খুব বেশি দূরে নেই। বছরের এই সময়টাতে গেলে ভাগ্য যদি প্রসন্ন হয় তবে দেখা মিলতে পারে বৃষ্টির। বৃষ্টিস্নাত ইছামতীর দৃশ্য এতটাই অতুলনীয় যে অনেক দিনই মনে গেঁথে থাকবে আপনার ।

বাস স্ট্যান্ড থেকে নেমে খানিক দূরেই পাবেন প্রায় ২০০ বছরের পুরনো জমিদার ব্রজেন সাহার জমিদার বাড়ি। ব্রজেন সাহা আশির দশকে বাড়িটি স্বনামধন্য এক উকিলের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পর বর্তমানে জজবাড়ি হিসেবেই পরিচিত এটি। নবাবগঞ্জের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই জজবাড়ি। প্রতিদিন ই বহুমানুষ আসে এখানে। দোতালা বাড়িটি দেখলেই বোঝা যায় সেকালের জমিদারদের সৌখিনতা। অসম্ভব সুন্দর বাড়িটির চারদিকে রয়েছে সুবিশাল বাগান এবং দুটি মনোরম পুকুর। সেইসাথে এখানে দেখা মেলে পোষা কিছু চিত্রা হরিণের। তবে শুধু জজবাড়ি নয় আরো জমিদার বাড়ির দেখা মেলে এখানে। যেগুলোর সবই প্রায় ধ্বংসাবস্থায় আছে, সরকারি রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অবহেলার কারণে।

জজবাড়ি থেকে আঁকাবাঁকা মেঠোপথে চলে গেলে দেখা মেলে ডাকাত সর্দার খেলারাম দাতা বজরামের বাড়ি। পেশায় ডাকাত হলেও ডাকাতির লুণ্ঠিত সম্পদ সাধারণের মাঝে বিলিয়ে দিতেন বলে তাঁর এই নামকরণ করা হয়। ধারণা করা হয় বাড়িটি পূর্বে সাততলা ছিল যা ধীরে ধীরে মাটিতে ডেবে গিয়ে বর্তমানে শুধু দোতলা রয়েছে। বাড়িটির ভিতরের কামরাগুলো খুবই ছোট এবং কিছুটা সুরঙ্গের মতো। বেশ কয়েকটি গম্বুজবিশিষ্ট এই বাড়ির ভিতরের পরিবেশ কিছুটা অন্ধকারাছন্ন। এর দেয়ালে রয়েছে অসম্ভব সুন্দর কিছু কারুকাজ যা বাড়িটির সৌন্দর্যবর্ধন করেছে। এই বাড়ি প্রায়ই বিভিন্ন সময়ে শুটিংস্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

পুরো এলাকাটা ঘুরে দেখতেই যদি দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যায় তবে বলে রাখা ভালো খুব ভালোমানের খাবারের দোকান এখানে পাওয়া দুষ্কর। দোকান বলতে আছে কিছু খাবার হোটেল যেখানে খুব কম খরচে খাবারের পাট চুকিয়ে ফেলতে পারেন। খাবারের পর হেঁটে বেড়ানোটা কষ্টকর হলে ভাড়া করে নিতে পারেন ‘টমটম’ নামে পরিচিত মোটরচালিত অটোরিকশাগুলো। বিকেলের দিকে চলে যেতে পারেন পদ্মার পারে। পারের বেশির ভাগই ভাঙনের পথে। তাই হাঁটাচলার সময় একটু সাবধান থাকতে হয় যেকোনো সময় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পদ্মার পারের সবচাইতে বড় আকর্ষণ হল সূর্যাস্তের সময়। নদীর পাড়ে পা ডুবিয়ে সাদা মেঘের মধ্যে আস্তে আস্তে করে লাল সূর্যটার ডুবে যাওয়ার দৃশ্য দেখার অনুভূতি এক কথায় অতুলনীয়।

কায়কোবাদের জন্মস্থান

নবাবগঞ্জ ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ির পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ের জন্য বিখ্যাত তা হলো মহাকবি কায়কোবাদের জন্ম। কায়কোবাদ ১৮৫৭ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৫ সালে তিনি তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে নিখিল ভারত দ্বারা কাব্যভূষণ’, ‘বিদ্যাভূষণ ও ‘সাহিত্যরত্ন ‘উপাধিতে ভূষিত হন। বাঙালি মুসলিম কবিদের মধ্যে সর্বপ্রথম আধুনিক কবি ও গীতিকবি হিসেবে পরিচিত কবি কায়কোবাদের জন্মভিটা প্রয়োজনীয় যত্নের অভাবে অনেকটাই স্মৃতিচিহ্নহীন হয়ে পড়েছে। কবির স্মরণে এখানে তৈরি হয়েছে ‘কায়কোবাদ যুব ক্লাব ও পাঠাগার’ এবং ‘মহাকবি কায়কোবাদ গার্লস হাই স্কুল’।

কীভাবে যাবেন

যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ বা গুলিস্তান থেকে সরাসরি বাসে করে যেতে পারেন নবাবগঞ্জে। তবে গুলিস্তান থেকে যাওয়াটা যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদের চেয়ে তুলনামূলক সহজ কেননা এখানে গুলিস্তান থেকে এন মল্লিক, দ্রুতি, যমুনা, বাংলালিংক ও শিশির পরিবহনের বাস কিছুক্ষণ পর পর নবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এসব বাসে করে সরাসরি নবাবগঞ্জে চলে যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে কেবল ৫০-৬০ টাকা। যেহেতু নবাবগঞ্জে দিনে এসে দিনেই ফিরা যায় তাই সকালের দিকে রওনা দেওয়া উচিত। তবে বাসে যেতে না চাইলে সিএনজি অথবা মাইক্রবাস ভাড়া করে যেতে পারেন তবে তখন খরচ একটু বেশি পড়বে।

কোথায় থাকবেন

নবাবগঞ্জে থাকার মতো তেমন কোনো আবাসিক হোটেল নেই। তাই রাতে থাকার সিদ্ধান্ত না নেওয়াই উত্তম। তবে থাকতে চাইলে সে ক্ষেত্রে স্থানীয় লোকদের সহযোগিতা নিতে পারেন। এরা কিছু টাকার বিনিময়ে আপনার রাত কাটানোর একটা ব্যবস্থা করতে সাহায্য করবে।

যা মনে রাখা জরুরি

১. সারাদিন ঘোরাঘুরি যেহেতু করতে হবে তাই ব্যাগে পানি, স্যালাইন, ছাতা ইত্যাদি রাখুন।
২. ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়িগুলোতে আঁকিবুঁকি করা থেকে বিরত থাকুন। এগুলো আমাদের সম্পদ তাই এগুলো রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব।
৩. সাতার জানা না থাকলে পদ্মার পাড়ে নৌকায় উঠার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৪. একা গেলে সিএনজি বা মাইক্রোবাসে না যাওয়াই ভালো। ছিনতাইয়ের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. রাতে থাকার ইচ্ছা না থাকলে চেষ্টা করুন সন্ধ্যার আগেই রওনা দিতে, কেননা রাতে বাস পেতে ঝক্কি পোহাতে হতে পারে। সূত্র : এনটিভি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *