Skip to content

নাগলিঙ্গমের টানে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে

ইফতেখার মাহমুদ
নাম তার নাগলিঙ্গম। এর পরাগচক্র দেখতে সাপের মতো। তাই তো এই নাম। অন্যরা ফোটে গাছের শাখায়, আর এই ফুল কাণ্ড ফুঁড়ে ছড়ার মতো বের হয়। বর্ষায় ফুলভর্তি গাছ দেখলে অনেকেরই মনে হতে পারে, কেউ বুঝি গাছের কাণ্ড ফুটো করে ফুলগুলোকে গেঁথে দিয়েছেন।

Nalingom

মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে নাগলিঙ্গমের সঙ্গে দেখা। ফুলে ফুলে ছেয়ে আছে গাছের কাণ্ড। ছয়টি পাপড়ি মেলে যেন সাপের ফণার মতো উদ্যানের দর্শনার্থীদের দিকে তাকিয়ে। গাঢ় গোলাপি আর হালকা হলুদ রঙের মিশ্রণ শরীরে। ভোরে যাঁরা উদ্যানে হাঁটতে আসেন, তাঁদের অনেকেই নাগলিঙ্গমের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এর পাশ দিয়ে দু-এক চক্কর দিয়ে যান।

Nalingom2উদ্যানের বিদেশি বৃক্ষের সারিতে পরপর দুটি নাগলিঙ্গমেই ফুল ফুটেছে। ফুলের পাশেই ঝুলছে ফলগুলো। তবে গোল জাম্বুরার মতো দেখতে এর ফলগুলো দেখলে অবাক হতে হয়। ফলগুলো কামানের গোলার মতো দেখতে বলেই ব্রিটিশরা এর নাম দিয়েছে ‘ক্যাননবল’। দ্বিজেন শর্মা তাঁর শ্যামলী নিসর্গ বইয়ে লিখেছেন, ‘আপনি বর্ণে, গন্ধে, বিন্যাসে অবশ্যই মুগ্ধ হবেন। এমন আশ্চর্য ভোরের একটি মনোহর অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই অনেক দিন আপনার মনে থাকবে।’ তবে ফলের মতোই নাগলিঙ্গম গাছটির উচ্চতা ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। সামনে গিয়ে দেখা গেল, গোটা তিনেক ফল মাটিতে পড়ে ফেটে গেছে। সেখান থেকে আসছে ঝাঁজালো গন্ধ। মাটিতে পড়ে থাকা পাতাগুলোর আয়তন কম করে হলেও ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার তো হবেই।

ফ্রান্সের উদ্ভিদবিদ জে এফ আবলেট ১৭৫৫ সালে এ গাছের বৈজ্ঞানিক নামকরণ করেন couroupita guianensis। উদ্ভিদবিদেরা বলেন, নাগলিঙ্গমের আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায়।

নাগলিঙ্গমের ভেষজ গুণও অনন্য। ফুল, পাতা ও বাকলের নির্যাস থেকে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ তৈরি হয়। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহার করা হয় এর নির্যাস। এই গাছ থেকে তৈরি ওষুধ পেটের পীড়া দূর করে। পাতার রস ত্বকের নানা সমস্যায় কাজ দেয়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস ব্যবহৃত হয়। হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তিরা শিবপূজায় নাগলিঙ্গম ফুল ব্যবহার করেন। ভারতে নাগলিঙ্গমকে ‘শিব কামান’ নামে ডাকা হয়।

বাংলাদেশে নাগলিঙ্গম বেশ দুর্লভ। ঢাকায় জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ছাড়াও রমনা উদ্যান, কার্জন হল, বলধা বাগান, নটর ডেম কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিলেট ও হবিগঞ্জে দু-একটি গাছ এখনো দেখতে পাওয়া যায়। সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *