Skip to content

নামটা সৌম্য তবে বড্ড অস্থির!

সামীউর রহমান
নামটা সৌম্য হতে পারে, তবে ব্যাটিংয়ের ধরনটা সৌম্য নয় মোটেও। ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা হয়তো চলে না হররোজ, তবু সৌম্য সরকারের ব্যাটিং মানে মুখে মিলিয়ে গেলেও স্বাদ রেখে যাওয়া সাতক্ষীরার রসগোল্লা। বুনো অবাধ্যতার বদলে আয়েশি অনায়াস সাবলীল গতিশীলতা। খেয়ালি শটে কখনো-সখনো সেই সাবলীল প্রবাহ থেমে যায় মাঝপথেই, জন্ম দিয়ে যায় একরাশ আক্ষেপের। কখনো বয়ে চলে সেই ফল্গুধারা, তাতে দলের রানের ক্ষুধা আর চোখের সৌন্দর্যের পিপাসা দুই-ই মেটে।

Soummo

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজটায় দারুণ খেলার পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজেই। মাঝে ‘এ’ দলের হয়ে ভারত সফর এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের তৃতীয় আসরে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেননি একদমই। হয়তো সৌম্য ভালোবাসেন বড় মঞ্চেই নিজেকে মেলে ধরতে, তাই তো দেশের জার্সিতে ফেরার পর এই সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটটা বাদ দিলে রানেই তো আছেন!

৩৩ বলে ৪৩ রানের ইনিংস টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অসাধারণ কিছু নয়। শুধু এইটুকু বলা যায়, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলা সবশেষ ৬ ইনিংসে যাঁর রান ২১, আর সব ধরনের ক্রিকেট মিলিয়ে সবশেষ ১০ ইনিংসে তিনবার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারা ব্যাটসম্যানের কাছে এই ইনিংসটা আত্মবিশ্বাসের বটিকা তো বটেই, সেরা ফর্মে ফেরার ইঙ্গিতও। জেলা শিক্ষা অফিসারের সরকারি চাকরির ব্যস্ততার সুবাদে পাশের জেলা সাতক্ষীরা থেকেও আসতে পারেননি সৌম্যর বাবা কিশোরী মোহন সরকার, তবে টিভিতে দেখেছেন খেলা। বাবার চোখেই ধরা পড়েছে, পুরনো ঝলক ফিরেছে সৌম্যর ব্যাটে, ‘আমি তো ক্রিকেট এত ভালো বুঝি না, তবে খেলা দেখে যেটা বুঝলাম আগের সেই ঝলকটা তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। আগে যেভাবে ব্যাটে-বলে হতো, এখন সেভাবেই হচ্ছে।’ সেটা হচ্ছে বলেই তো বল ব্যাটে লাগার পর ছুটছে কিংবা উড়ে গিয়ে পড়ছে সীমানার ওপারে। ৩৩ বলে ৪ বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায় খেলা ৪৩ রানের ইনিংসটা অবশ্য সব দিক দিয়েই ‘সৌম্যসুলভ’, যখনই মনে হচ্ছিল বড় কোনো ইনিংস আসতে যাচ্ছে তাঁর কাছ থেকে, তখনই ডাউন দ্য উইকেটে এসে বল তুলে দিলেন সোজা ফিল্ডারের হাতে। বাবার কড়া নজর এড়ায়নি এই অস্থিরতা, ‘নামটা সৌম্য হলেও সব সময়ই অস্থির অস্থির ভাব। খেলে যেতে পারলে হাফ সেঞ্চুরি কেন, আরো বড় কিছুও হতে পারত।’ মাঝের দিনগুলোতে ছেলের অস্থিরতা নজর এড়ায়নি বাবার, ‘চুপচাপ থাকত। সবাই তাকে বলত রান হবেই, দুশ্চিন্তা করো না। আশপাশের সবার কাছ থেকে বারবার এসব শুনে আরো মনমরা হয়ে পড়ত। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় মুখ তুলে চাইলেন!’

খেলার মাঠ হোক কিংবা পরীক্ষার হল, সন্তানের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন না, এমন মা বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। সৌম্যর খেলা হলে বাড়িতে বিশেষ পূজো করেন সৌম্যর মা, খেলা চলার সময় ফোন বন্ধ রেখে ঈশ্বরের নাম জপ করেন ও ব্রত রাখেন। খেলা থাকলে বাসায় বিরাজ করে চাপা উত্তেজনা, তবে সৌম্যর ব্যাটে রানের ফুল ফুটলে সেই সৌরভ দূর থেকেও এসে ভরিয়ে দেয় তাঁদের সাতক্ষীরার বাড়িটা, কেটে যায় গুমোট ভাব।

সরকারি চাকরির বাঁধাধরা নিয়ম মেনে কর্মদিবসে কিশোরী মোহন সরকারের জন্য সাতক্ষীরা থেকেও খুলনা আসা কঠিন। তবে শুক্রবার আসার ইচ্ছা আছে তাঁর। সব সময়ই বড় মঞ্চের জন্য নিজেকে জমিয়ে রাখা সৌম্য নিজের বিভাগীয় শহরের স্টেডিয়ামে বাবার সামনে কোনো চমক উপহার দেবেন কি না, সেটা জানা যাবে সিরিজের শেষ ম্যাচেই। তবে বড় কোনো ইনিংস খেললে সৌম্যর হোটেল ঘরে বিস্তর মিষ্টি জমে যাওয়া উচিত। কারণ খুলনা শহরের প্রতিটি মোড়েই যে একটা করে সাতক্ষীরা মিষ্টান্ন ভাণ্ডার! আর কে না জানে, এখন মুস্তাফিজ আর সৌম্যই তো সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর! সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *