হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী
সিলেটের অন্যতম পর্যটন এলাকা জৈন্তাপুরের লালাখাল। এলাকাটির প্রধান আকর্ষণ এখানকার সারি নদীর ‘নীল’ পানি। নদীটি এখানে ‘নীল নদ’ নামে পরিচিত। জল-পাহাড়ের সন্মিলন আর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনাধারা লালাখালকে দিয়েছে এক মায়াবী রূপ। পর্যটকরা বলেছেন, লালাখাল ঘিরে ব্যক্তি উদ্যোগ বা সরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হতে পারে।
জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও চারিকাটা ইউনিয়নে অবস্থিত লালাখাল। ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই এর অবস্থান। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় এই লালাখালে। ভারতের লুম ও উসিয়াং নদীর মিলনে মাইথ্রু নদীতে উত্পন্ন হয়ে চেরাপুঞ্জির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে লালাখাল দিয়ে সারি নদীটি প্রবাহিত হয়েছে।
নদী আর পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা এই লালাখাল। নদীর যেখানে শুরু সেখানে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল চা-বাগান। এর পর ভারত সীমান্ত। নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকা ভ্রমণের বিকল্প নেই। সত্যিই এখানে নদীর পানি ‘নীল’ রংয়ের। পাহাড়ি এই পানি সব সময় চলমান। নদীর পানি ‘নীল’ কেন তা নিয়ে যে কারো মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। আসলে ঘন পত্রপল্লব আর জৈন্তার বিশাল পাহাড়ের ছায়ায় আচ্ছাদিত বলেই এ নদীর পানি নীল দেখায়। নৌকায় বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে যাওয়ার সময় কাঁশবনের ঝোপ চোখে পড়ে। নদী থেকে কিছু দূরে ছোট-বড় পাহাড়। তবে এগুলো দেখতে যতটা কাছে মনে হবে, আসলে ততটা কাছে নয়।
এ সময় মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে হবে সারি নদীর স্বচ্ছ পানির দিকে। কি সুন্দর ‘নীল’ পানি। একদম নদীর নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। পড়ন্ত বেলায় নদীর দু’ধারে পল্লীবধূদের দেখা যায় কলসী করে পানি নিতে। পর্যটকরা কোথায় যেন ক্ষণিকের জন্য হলেও হারিয়ে যান। ভ্রমণ বিলাসীদের জন্য এ এক মনোরম স্থান। সন্ধ্যায় লালাখালের চারপাশ আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। উপরে আলোকিত নীল আকাশ, চারপাশে গাছপালা আর পাখির কিচির মিচির শব্দ। এর মধ্যে সূর্য ডোবার দৃশ্য অপরূপ। এক সময় নীরবে পাহাড় থেকে নেমে আসে মায়াবী আঁধার। আর সেই আঁধারের মধ্যেও কল-কল, ছল-ছল করে চলে পর্যটকের নৌকা।
লালাখাল যেতে সিলেট শহর থেকে বাস কিংবা মাইক্রোবাসে করে সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের সারিঘাট নামক স্থানে আসতে হবে। সেখান থেকে মাত্র ৩০ কিংবা ৪৫ মিনিটে নৌকাযোগে যাত্রা করে পৌঁছে যাওয়া যাবে লালাখাল চা বাগান ফ্যাক্টরি ঘাটে। তবে নৌকার মাঝিরা ইচ্ছেমত ভাড়া রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গাচোরা নৌকায় শিশুদের নিয়ে চড়ার ঝুঁকিও অনেক। নৌকাতে হেলান দেয়ারও কোন সুযোগ থাকে না। তাই ভ্রমণটা হয় কষ্টদায়ক ও উদ্বেগজনক। পর্যটকদের দাবি এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া প্রয়োজন। সৌজন্যে : ইত্তেফাক