Skip to content

নৈস্বর্গিক কুকরি মুকরি

Malaysia-Thailand-Singapore

নিশ্চুপ প্রকৃতি, সবুজের সমারোহ আর মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো পশুপাখির দল যাদের আকৃষ্ট করে তাদের জন্য ঘুরে দেখার চমৎকার একটি স্থান সাগরতীরের চর কুকরি মুকরি। সবুজের সমারোহ আর অস্পষ্ট বর্ণরেখা, সাগর পাড়ের ঢেউ খেলানো সূর্যোদয় আর কুয়াশাচ্ছন্ন নির্মল প্রকৃতির হাতছানি। চর কচ্ছপিয়া বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়ালে একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠবে টুকরো টুকরো বনভূমি। সেই বনভূমি ঘিরে আছে দিগন্ত বিস্তৃত মেঘনার অথৈ জলরাশি।

Kukri-Mukri

চারদিকে নিবিড় কালচে সবুজের সমারোহ। দূর থেকে চোখে পড়বে অস্পষ্ট বর্ণরেখা। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো সে রেখা কখনো ঢেউ খেলানো কখনো সমতল। ভোরের সূর্য উঁকি দিচ্ছে। কুয়াশার অস্পষ্টতা কাটতে না কাটতেই সূর্যের বর্ণচ্ছটা মেঘনার বিশাল বুকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে ক্রিস্টালের মতো স্বচ্ছ হয়ে। ভোলার সর্বশেষ স্থলসীমা চর কচ্ছপিয়া থেকে চোখে পড়বে এই দিগন্তবিস্তৃত চোখজুড়ানো সবুজের বিশাল আয়োজন। চর কচ্ছপিয়া বেড়িবাঁধের ওপর দাঁড়ালে একে একে চোখের সামনে ভেসে উঠবে টুকরো টুকরো বনভূমি। সেই বনভূমি ঘিরে আছে দিগন্ত বিস্তৃত মেঘনার অথৈ জলরাশি।

ইতিহাস : এ দ্বীপ সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হয়, ১৯১২ সালে এ দ্বীপের জন্ম। তৎকালীন জার্মান যুবরাজ প্রিন্স ব্রাউন জনমানবহীন এই দ্বীপে জাহাজ নিয়ে আসেন শিকারের উদ্দেশ্যে। দেখতে পান একটি বিড়াল ও কুকুর ছোটাছুটি করছে। সেই দৃশ্যাবলী তাকে মনে করিয়ে দেয় নির্জন এই দ্বীপের নামকরণ। পরে যার নামকরণ করা হয় চর কুকরি মুকরি। পর্তুগিজ ও ওলন্দাজরা দস্যুবৃত্তি লুটতরাজ করে এই দ্বীপে আশ্রয় নিত। এই দ্বীপকন্যাকে প্রকৃতির রুদ্ররোষ থেকে রক্ষা করতে জেগে ওঠা চরগুলোকে সংরক্ষণে ১৯৪৭ সন থেকে এখানে পরীক্ষামূলকভাবে বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। ওই কর্মসূচিই পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় সবুজবেষ্টনী প্রকল্প হিসেবে রূপলাভ করে।

Kukri-Mukri2

কীভাবে যাবেন : চর কুকরি মুকরিতে যেতে চাইলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথম জলপথে কোনো লঞ্চ বা জাহাজে চড়ে প্রথমে ভোলায় আসতে হবে। ঢাকার সদরঘাট থেকে ভোলার লঞ্চে করে ভোলায় পৌঁছতে হবে। ভাড়া ২৫০-৪০০ টাকা। তারপর ভোলা লঞ্চঘাট থেকে চর ফ্যাশনের বাসে চড়ে আসতে হবে চর আইচাতে। ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর কচ্ছপিয়ার দূরত্ব ভোলা সদর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার। চর ফ্যাশন থেকে হিউম্যান হলারে আপনাকে আসতে হবে কচ্ছপিয়া ঘাট। মানুষ কম হলে অটোরিকশা করে চলে আসতে পারেন। এখান থেকে কচ্ছপিয়া উপজেলা ট্রলার ঘাট হয়ে আবারও ইঞ্জিন নৌকায় বেশ খানিকটা জলপথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছানো যাবে চর কুকরি মুকরিতে। কুকরি মুকরি থেকে সকালবেলা একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে ঘুরতে বেরুতে পারেন। ভাড়া ৪ হাজার থেকে হাজার টাকা নেবে। তবে যাওয়ার আগে সমুদ্রের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে যাবেন।

Kukri-Mukri3

খাওয়া-দাওয়া : কুকরি মুকরি বাজারে তেমন ভালো কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই। হাতেগোনা কয়েকটি খাবারের হোটেল রয়েছে। স্থানীয়দের হাতের রান্না করা খাবার পাবেন হোটেলগুলোতে। সম্ভব হলে বাজার থেকে তাজা মাছ কিনে রাঁধতে দিন, দামে সস্তা আর স্বাদেও টাটকা। এখানে ব্রয়লার মুরগি আর ডিম একটু অপ্রতুল। খাবার পানি সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। এখানকার বাজারের মিষ্টির দোকানের মিষ্টি চেখে দেখতে ভুলবেন না যেন।

কোথায় থাকবেন : এখানে রাতে থাকার জন্য একমাত্র ভরসা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, সাইক্লোন শেল্টার, দুটি এনজিওর অফিস। এ ছাড়া স্থানীয়দের সাহায্য নিতে পারেন, সে ক্ষেত্রে দল বড় হলে সমস্যা। দু-চারজন হলে ম্যানেজ করা সম্ভব।

দর্শনীয় স্থানসমূহ : নিশ্চুপ প্রকৃতি, সবুজের সমারোহ আর মুক্তভাবে ঘুরে বেড়ানো পশুপাখির দল যাদের আকৃষ্ট করে তাদের জন্য ঘুরে দেখার চমৎকার একটি স্থান হতে পারে সাগরতীরের চর কুকরি মুকরি। নৈসর্গিক সৌন্দর্য নয়নাভিরাম দৃশ্য, ম্যানগ্রোভ অরণ্য যে কোনো পর্যটকদের সৌন্দর্যপিপাসু দৃষ্টিকে আকৃষ্ট করবে। যা অনেকের কাছে এখনো অজানা। চরফ্যাশনে বসবাস করেও অনেকে জানে না কুকরি-মুকরির বালুর ধুম, কুয়াকাটা, কক্সবাজারের সাদৃশ্য দৃশ্যাবলী এখানেও বিদ্যমান। ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে অনেকটা সাগরের কোলঘেঁষে মেঘনা ও তেতুঁলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এই চরেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। কথিত আছে, একসময় এই চরে শুধু কুকুর আর ইঁদুর (স্থানীয়দের কাছে যা মেকুর নামে পরিচিত) ছাড়া আর তেমন কিছুই চোখে পড়ত না। আর তাই এই চরের নামকরণ হয় চর কুকরি মুকরি। চর কুকরি মুকরির বনে যেসব প্রাণী দেখা যায় তার মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ, বানর, উদবিড়াল, শিয়াল প্রভৃতি। আর পাখিও সরীসৃপ হিসেবে এই বনের অধিবাসীদের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বক, বন মোরগ, শঙ্খচিল, মথুরা, কাঠময়ূর, কোয়েল, গুইসাঁপ, বেজি, কচ্ছপ ও নানা ধরনের সাপ। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে চর কুকরি মুকরি এলাকায় প্রশাসনিক উদ্যোগে বনায়নের কাজ শুরু হয়। এ সময় মূলত শ্বাসমূলীয় গাছের চারা রোপণ করে বনায়ন শুরু করা হলেও পরে ক্রমে ক্রমে যুক্ত হয় সুন্দরী, গেওয়া, পশুর প্রভৃতি গাছের চারা রোপণ। এ ছাড়া গোটা এলাকাজুড়েই চোখে পড়ে বিপুলসংখ্যক কেওড়া গাছ। মূলত বিশাল এলাকায় গড়ে ওঠা এসব গাছ, আশপাশের নারিকেল গাছ, বাঁশ ও বেত বন মিলেই এখানে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় একটি ম্যানগ্রোভ বা শ্বাসমূলীয় বনাঞ্চল। এ ছাড়া এখানকার সমুদ্রসৈকতটিও বেশ পরিচ্ছন্ন ও নিরিবিলি।

বালুর ধুম, পাতিলা অরণ্যে রয়েছে হাজার হাজার মায়াবী হরিণ, ছোট্ট নৌকায় চেপে ছোট্ট লেকে নিঃশব্দে নিশ্চুপে চলতে গেলে দেখা যাবে মায়াবী হরণের ছুটোছুটি। পরিবেষ্টিত ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, সর্পিল লেক, বালুকাময় তীর, সি-বিচ, সামুদ্রিক নির্মল হাওয়া, তরঙ্গ গর্জন, সবই কুকরীর বালুর ধুমে। যা মনোমুগ্ধকর রূপসজ্জা আর প্রকৃতির লীলাভূমি। অন্যান্য দ্বীপের চাইতে কুকরি মুকরি দ্বীপ অনেকটা আলাদা প্রকৃতির। এখানে অন্যান্য সৈকতের চেয়ে নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং বৈচিত্র্য বিদ্যমান। শীত মৌসুম থেকে কয়েকটি পিকনিক পার্টি বালুর ধুম এলাকায় গিয়ে স্বচক্ষে দেখে বর্ণনা করেছে এই আরশী নগরের কথা। সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরি মুকরিকে নিয়ে এতদিন কেউ ভাবেনি। সৌজন্যে : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *