Skip to content

নৌ-ভ্রমণে ছোট হরিণা

মো. জাভেদ-বিন-এ হাকিম
ঈদের লম্বা ছুটিতে ঢুঁ মেরে এলাম রাঙামাটি জেলার গহীনের সৌন্দর্য ছোট হরিণা আর জুড়াছড়ি থেকে। আর দশজন ভ্রমণপিয়াসী রাঙামাটির সৌন্দর্য সম্পর্কে যতটুকু জানে বা বুঝে, দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের সদস্যরা তারচেয়ে যেন একটু বেশিই জানে। এই আত্মবিশ্বাসের কারণ, রাঙামাটির নতুন কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খোঁজ তা চোখে না দেখে মনে শান্তি পায় না দে-ছুট!

ঈদের ছুটিতে রাস্তা ফাঁকা। রাতের গাড়িতে করে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছে যাই ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে। ফোন পেয়ে গাইড হারুন আর ট্রলার মালিক যেন বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে। দলে আমরা ১৪ জন। মারা যেতে পারি—এই ভয় দেখানোর পরেও কমাতে পারিনি এই সংখ্যা। এই ব্যাপারটা দারুণ!

ChotoHorina

রিজার্ভ বাজার থেকে নাশতা পর্ব শেষে উঠি গিয়ে ট্রলারে। আগামী তিন দিন এই ট্রলারই হবে আমাদের বাড়ি-ঘর। গোস্ত, মোরগসহ অন্যান্য বাজার-সদাই সবই আগে থেকে রেডি। আল্লাহর নাম নিয়ে ট্রলার ভাসে কাপ্তাইয়ের নীলাভ জলে। দে-ছুটে চান্স পাওয়া নতুনদের উচ্ছ্বাস ছিল যেন আকাশ ছোঁয়া। ট্রলার যতই এগিয়ে যায় ততই সামনের পাহাড়গুলো যেন দূরে সরে যায়। কখনো কখনো চারপাশের মায়াময় প্রকৃতির ঘোরে আছন্ন হয়ে পড়ি, টনক ফিরে যখন নিবেদিতপ্রাণ ফারুকের রান্নার আয়োজন নিয়ে চলে হুলস্থূল। উচ্ছ্বাসে সবাই ছাউনিতে গিয়ে বসি। আজকের গন্তব্য ছোট হরিণা। সময় না কুলোলে তার আগেই রয়ে যাব ভূষণ ছড়া।

দুপুর ১২টা নাগাদ পৌঁছি বরকল বিজিবি ক্যাম্পে। ছোট হরিণা যাব শুনেই আটকে দেয়। তাদের জোরালো অনুরোধ—যাবেন না ওই পথে। কারণ কী জানতে চাইলে বলেন, গুম খুন হয়ে যেতে পারেন। মনে মনে বলি, ব্যাটা বলে কী! তাদের বুঝাতে চাইলাম এ রকম অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরই তো দিতে আমরা বেশি পছন্দ করি। একজন পোশাকধারীর সঙ্গে যোগ দিলে সিভিলে থাকা আরও কয়েক জন। তারা দরদি কণ্ঠে বেশ জটলা পাকিয়ে দিল। কিন্তু তারা বুঝতে পারেনি যে আমরা নাছোড়বান্দা! আমি আর প্রিমিয়াম অর্গানাইজার এমএ কালাম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিই। এরপর সৈনিক থেকে অফিসার, বরকল থানার ও সি হয়ে বিজিবির সিও পর্যন্ত গড়িয়ে দে-ছুটের অনুমতি মিলে। অনুমতি পাওয়ার পরেই যেন চোখের পর্দায় দেখতে পাই ভূষণ ছড়া নৌপথের সৌন্দর্য। নবোদ্যমে চলছে ট্রলার, চলছে রান্না সাথে বরকল বাজার থেকে ভোজন রসিক উজ্জ্বলের কেনা কাঁঠাল, আনারস খাবার প্রতিযোগিতা। আহ্ ফরমালিন ছাড়া ফলের ঘ্রাণ! মন করে উথাল-পাথাল। যাচ্ছি যেন কোনো ভূস্বর্গের মাঝ দিয়ে।

দুপাশে দিগন্ত ছুঁয়েছে পাহাড়, মধ্যখানে বয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই লেক। বর্ষায় পাহাড়ের সৌন্দর্যই যেন অন্যরকম। যত দূর চোখ যায় শুধু সবুজের মাখামাখি। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ট্রলার চলার পর কাপ্তাই লেক পেরিয়ে কর্ণফুলি নদীতে যখন, তখন কাইয়ূম ভাইয়ের টেলিটকে রিং আসে, ভাই আমি আমরাত, বরকল রয়ে গেছি। হুঁশ ফিরে সবার, আরে দুর্জয় আর ইউশাও নেই। তাজ্জব বনে গেলাম! আমারা এক বিজিবি টহল জোনে নেমে ট্রলার পাঠিয়ে দিলাম ওদের আনতে। আমরা এই ফাঁকে সময়টুকু কাজে লাগাই সামাজিক অবক্ষয় রোধে ৫ মিনিটের একটা শর্ট ফিল্মের রিহার্সেল করে আর নদীর জলে সাঁতার কেটে। ট্রলার ফিরে এলে আবারও ছুটি। চলছে ট্রলার সেই সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। নদী দু’পাড়ের সৌন্দর্য আর সুপার অর্গানাইজার মোস্তাকের অফুরন্ত চুটকি সবাইকে উজ্জীবিত রেখেছে। সন্ধ্যা ৬টায় পৌঁছি সৌন্দর্যের আধার ভূষণ ছড়া। সময় থাকায় সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পরে চলে যাই ছোট হরিণার পথে।

মাগরিবের সময় গিয়ে নোঙর ফেলি বিজিবি ক্যাম্প ছোট হরিণা নৌঘাটে। শুরু হয় আবারও দৌড়ঝাঁপ। যেখানে মাত্র কিছুদিন আগে ৫ জন জেলে আর একজন গরু ব্যবসায়িকে গলা কেটে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে সেখানে আপনারা এলেন কী কারণে?! উত্তরে জানাই, ঘুরতে। ভয়কে জয় করেই দে-ছুট ভ্রমণ সংঘ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ায়। আমরা যদি এগিয়ে না যাই তাহলে ভাই অন্যেরা আসবে কী করে দে-ছুটের সার্থকতা এখানেই। ভদ্র ও বিনয়ী নায়েক সাহেব রাতে থাকার জন্য একটা চিত্-কাইত্ বোর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করে দিলেন। সেই সঙ্গে সাবধান করে দিলেন রাতে যেন একা ঘর থেকে না বের হই। মনে মনে বলি, আমাদের ধরতে আসবে কোন সন্ত্রাসী! ইফতেখারের নাকডাকার যে কর্কশ আওয়াজ তাতেই ওরা ভয়ে দৌড়ে পালাবে। বেশ মজা করেই দোতালা বোর্ডিংয়ে রাত পার করি। আজ এই পর্যন্তই, আরেক দিন না হয় জুড়াছড়ির গল্প হবে।

যোগাযোগ
ঢাকা কমালাপুর ও গাবতলী থেকে রাতে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছেড়ে যায় রাঙামাটি। ভাড়া নন-এসি ৬২০ টাকা। ট্রলার তিনদিনের জন্য নেবে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।

কোথায় থাকবেন
রাতে ট্রলারেই থাকতে হবে এমন প্রস্তুতি নিয়েই উঠতে হবে।

খাবেন কোথায়
বাজার সদাই করে নিতে হবে। রান্নার আয়োজন ট্রলারেই সারতে হবে।

খরচপাতি
দল বড় হলে মাথা পিছু ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা হলেই হবে। তবে খরচ নির্ভর করবে নিজেদের উপর।

টিপস
ভূষণ ছড়া ও ছোট হরিণা যাওয়ার সময় লেক এবং নদীর দুকূলের সৌন্দর্যই উপভোগ্য। লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিবেন। সম্ভব হলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে যাবেন। দল বড় করার চাইতে ছোট দলে দুর্গম পথে অধিক আনন্দ। সূত্র : ইত্তেফাক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *