Skip to content

পদ্মায় জেগেছে একাত্তরের স্মৃতি

আহমেদ উল হক রানা
রক্তঝরা একাত্তরের শেষের দিকের ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পিছু হটছে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। আশ্রয় নিচ্ছে সেনা ব্যারাকে। এ অবস্থায়ও পাবনার পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর স্থাপিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ব্যবহার করে হানাদাররা পুরো অঞ্চলে চালিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞ। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যতম বড় ঘাঁটি যশোর ক্যান্টনমেন্টকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নেয় মিত্রবাহিনী। উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী দেশের বৃহত্তম এই রেলসেতু ধ্বংসে বোমাবর্ষণ করে মিত্রবাহিনীর বোমারু বিমান। ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ফেলা ওই বোমার আঘাতে সেতুর ১২ নম্বর গার্ডার ভেঙে পড়ে গভীর পদ্মায়। প্রায় ৪৫ বছর পর পদ্মা নদীতে জেগে উঠেছে ভেঙে পড়া সেই গার্ডার। আর তা দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমাচ্ছে অসংখ্য মানুষ।

Padma

শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজে প্রধান গার্ডার রয়েছে ১৫টি। এর বাইরে ব্রিজের দুই পাশে তিনটি করে মোট ছয়টি ল্যান্ড স্প্যান রয়েছে। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার আরিফুল ইসলাম জানান, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের প্রধান গার্ডারগুলোর প্রতিটি ৩৪৫ ফুট লম্বা। এগুলোর প্রতিটির ওজন এক হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।

আরিফুল ইসলাম আরো জানান, অধিক ওজন এবং বিশাল আয়তনের কারণে গার্ডারটি নদীর তলদেশে বালু-কাদায় কঠিনভাবে আটকে আছে। ঊর্ধ্বতন ও সাবেক রেল কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি জেনেছেন, ধ্বংস হওয়া ৩৪৫ ফুট দৈর্ঘ্যের গার্ডারটি এর আগে ১৯৭২ সালে একবার জেগে উঠেছিল। দীর্ঘ বছর পর আবারও গার্ডারের বেশ কিছু অংশ জেগে ওঠায় তা নদীবক্ষ থেকে উঠিয়ে সংরক্ষণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

পাকশীর প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ১৯৭১ সালে মিত্রবাহিনীর বোমা হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার দুই দিন আগে মিত্রবাহিনী বোমা হামলা চালায়। এতে ব্রিজের ১২ নম্বর গার্ডারটি ভেঙে পদ্মা নদীতে তলিয়ে যায়। তৎপরবর্তী সময়ে সেতুর আশপাশে গার্ডারটির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালে ব্রিজটির ১২ নম্বরে নতুন গার্ডার স্থাপন করা হয়। আর সময়ের পরিক্রমায় পদ্মার স্রোতে ভেঙে পড়া গার্ডারটি সেতুর দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার ভাটিতে ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের দিকে সরে যায়।

পাকশীতে পদ্মা নদীর ড্রেজার চালক তরিকুল ইসলাম জানান, প্রায় পাঁচ মাস আগে ড্রেজিংয়ের জন্য নদীর তলদেশে পাইপ নামানোর সময় তা শক্ত কিছু একটার সঙ্গে আটকে যায়। এ জন্য তখন সেখানে আর পাইপ নামানো যায়নি। পরে ডুবুরি নামিয়ে সেখানে বিশাল আকারের ধাতব কিছুর অস্তিত্ব খুঁজে পান তাঁরা। বিষয়টি তাঁরা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানান। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে নদীর পানি কমে যাওয়ায় গার্ডারটি নদীতে জেগে ওঠে। তখন রেল বিভাগের কর্মকর্তারা ধাতব বস্তুটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভেঙে পড়া ১২ নম্বর গার্ডারের অংশ বলে নিশ্চিত হন।

পাকশীতে পদ্মায় নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা মাঝি জালাল মিয়া জানান, সেতুর (হার্ডিঞ্জ ব্রিজ) ডুবে যাওয়া গার্ডার ভেসে ওঠার খবর পেয়ে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছে তা দেখার জন্য।

সেতুর নিচের চা দোকানি জিয়াউর রহমান জানান, পাকশীতে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই ব্রিজের কাছে এসে জেগে ওঠা গার্ডারটি কোনদিকে তা জানতে চান। আর মাঝিরা ব্রিজের নিচ থেকে গার্ডারটি পর্যন্ত আসা-যাওয়ার ভাড়া বাবদ নৌকাপ্রতি ২০০ টাকা করে নিচ্ছেন। ফলে একটি নৌকা ভাড়া নিয়ে অনেক দর্শনার্থী একসঙ্গে গার্ডারটির অবস্থান পর্যন্ত যেতে পারছেন। সৌজন্যে : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *