আব্দুল মাজেদ
ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের আয়োজনে এবার আমরা গিয়েছিলাম পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় নৌ-ভ্রমণে। আমাদের ভ্রমণ শুরু হয় সকাল ৭.২০টায় সদরঘাট থেকে। যদিও আমি সকাল সাড়ে ছয়টার মধ্যে সদরঘাট পৌঁছে যাই। এখানে-সেখানে ঘুরাঘুরি করে টুকটাক কিছু কেনা-কাটা সারি। সকাল ঠিক সাতটা ২০ মিনিটে সোনারতরী লঞ্চটি আমাদের নিয়ে যাত্রা শুরু করে চাঁদপুরের উদ্দেশে বুড়িগঙ্গার ঘনকালো দূর্গন্ধযুক্ত জল কেটে।

সোনার তরী লঞ্চ
ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে আমরা এগিয়ে চলি, দুপাশে আবছা দেখা যায় নদীর তীরের ঘরবাড়ী দালানকোঠ। আমাদের সাথে গাইড হিসেবে ভ্রমণ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের বর্ণনা দিচ্ছিলেন ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের সম্মনিত প্রেসিডেন্ট মোস্তাফিজ ভাই। অমায়িক ভদ্রলোক তিনি।

লংস্লিভ টি-শার্ট পরিহিত ঢাকা ট্যুরিস্ট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট।
কিছু সময় পর তিনি আমাদের দেখালেন বিশাল উঁচু সরু মুন্সিগঞ্জের মোক্তারপুর ব্রিজ। নিচ থেকে উপরে দেখতেই কেমন যেন ভয় ভয় লাগে! কেমন যেন সত্যিই বিস্ময়কর!

মোক্তারপুর ব্রিজ
সকালের নাস্তা দিতে দেরি করায় আমার খিদেয় পেট চো চো করছিল! এসময় সাথে আনা চকলেট আর ওয়েফার সাবার করছিলাম আমি। অফিসের কারণে আমার সকাল সাতটায় নাস্তা করার অভ্যাস। সুতরাং আমার পূর্ব প্রস্তুতি কিছু রাখতে হয়। এটা আমার বউয়ের পরামর্শ। সকাল ৯টার পর আমাদের নির্ধারিত কেবিনে সকালের নাস্তা পরিবেশন করা হয়।

সকালের নাস্তা
নাস্তার পর হালকা কৌতুক পরিবেশন করেন এস এস মিডিয়া ভিশনের সিইও শরিফুল ইসলাম। মারাত্মক এক মজার মানুষ শরিফুল ইসলাম। পুরো ভ্রমণ তিনি সবাইকে মাতিয়ে রাখেন মজার মজার কৌতুক আর গানে।
নাস্তার পর সবাই যার যার মতো লঞ্চে ঘুরে দেখার সুযোগ পান। আর এই ফাঁকে যদি কিছুটা সময় নির্জনে নিরিবিলি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় মন্দ কাটে না সময়টা!
সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে ভাবি মহান আল্লাহ তা’আলা কি সৃষ্টি করে রেখেছেন! কি অসীম সুন্দর তার সৃষ্টি। তার অপার মহীমা বুঝার সাধ্য কার!
বেলা ১১টার দিকে আমরা পৌঁছে যাই চাঁদপুর লঞ্চঘাটে। সেখানে আগে থেকেই আমাদের জন্য ভাড়া করা দুটি ট্রলার অপেক্ষা করছিল। আমরা দুই দলে ভাগ হয়ে দুই ট্রলারে উঠে পরি।
লঞ্চ থেকে ট্রলারে করে আমরা পূণরায় যাত্রা শুরু করি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থান পদ্মা-মেঘনার মোহনায় নলখাগড়ার দ্বীপ।

ওই দূরে দেখা যায় আমাদের গন্তব্য নলখাগড়ার দ্বীপ!
দ্বীপে যাওয়ার পথে আমরা দেখি জেলেদের ইঁলিশ শিকার। জীবনে প্রথম একেবারে কাছ থেকে জ্যান্ত ইলিশ ধরা দেখলাম। আমার কাছে অসাধারণ লাগল সেই দৃশ্য।

সুবহান আল্লাহ! আমাদের দেশটা এত সুন্দর ক্যারে!!!
কিছু সময় ইলিশ শিকার দেখে আমরা আমদের দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা করলাম। যে দ্বীপে আমাদের নামার কথা সেখানে ট্রলারের মাঝি আমাদের নামতে দিলেন না! বললেন এই দ্বীপে অনেক সাপ আছে। কয়েকদিন আগে একজন পুলিশকে সাপে কেটেছে! তাই এত সুন্দর দ্বীপে না নেমে আমরা আরো এগিয়ে গিয়ে অন্য একটি দ্বীপে নামলাম।

সেই নলখাগড়ার দ্বীপ।
এরপর বালুচরে যার যার মতো করে ইচ্ছা স্বাধীন ঘুরে বেড়াও, উপভোগ করো, দেখ আল্লাহর সৃষ্টি কতো সুন্দর! কতো অসাধারণ!

একলা দুকলা যেভাবে ছিলা সেভাবেই ঘুরে বেড়িয়েছে!

বেড়াও আর দেখ!

অন্যরকম এক অনুভূতি!

সেই দ্বীপচরে আছে পাইকারী ইলিশের ঘাট।

যার যার ইচ্ছা হয়েছে মনের আনন্দে গোসল করেছে পদ্মার পানিতে!

যার যার ইচ্ছা হয়েছে মনের আনন্দে গোসল করেছে পদ্মার পানিতে!
পানিতে ঝাপাঝাপি, দাপাপির এক পর্যায়ে আমার খিদে পেয়ে যায়। কিন্তু দুপুরের খাবার সেই ২.৩০ সময়! এত সময় কি আর ধৈর্য্য ধারণ করে পেট! দ্বীপের ছোট অস্থায়ী টং দোকন থেকে বিস্কুট কিনে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলেন হাসান ভাই!
সময় বড় দ্রুত শেষ হয়ে যায়! সময় হয়ে গেল জোহরের সালাতের, আমরা পদ্মার পানিতে অজু করে জোহরের সালাত আদায় করে, ট্রলারে উঠে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ভয়ঙ্কর ডাকাতিয়া নদীর মোহনা! যেখানে সাম্প্রতিক নাসরিন লঞ্চসহ প্রায় পাঁচটি লঞ্চ এ পর্যন্ত ডুবে গেছে।

ডাকাতিয়ার মোহনা যেখানে নাসরিন লঞ্চ ডুবেছিল।
মোটামুটি আমাদের এবারের ভ্রমণ শেষ হলো। এবার ক্ষুধা নিবারণ আর ফেরার পালা।

সন্ধ্যার সদরঘাট।
সোজা লঞ্চে পৌঁছে দুপুরের খাবার সেরে লঞ্চ ছেড়ে দিল ঢাকার উদ্দেশে বিকেল ৩.৪০ মিনিটে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা সদরঘাট পৌঁছে গেলাম। বলে রাখি এটাই শেষ নয় ইনশা আল্লাহ।
ইনশা আল্লাহ আবার আছে এই পূর্ণিমার পরের পূর্ণিমায় সেই দ্বীপ চরে ক্যাম্পিং। তাবু টেনে রাত্রিযাপন। তাজা ইলিশের বার-বি-কিউ হবে। আল্লাহ চাইলে সাথে যেতে পারেন।