Skip to content

পম্পেই ও হারকুলেনিয়াম ধ্বংস হলো যেভাবে

Pompeiiনজরুল ইসলাম
মার্শেলাস, আমি গেয়ে যাই সে কাহিনী… সেখানে ভিসুভিয়াস প্রচণ্ড আক্রোশে নিক্ষেপ করছে আগুন… ভয়াবহ সে আগুন। কিন্তু তা সত্যি। ভাবীকালে একদিন যখন আবার দেখা দেবে শ্যামল শস্যক্ষেত্র এবং ধ্বংসস্তূপ ছেয়ে যাবে সবুজের সমারোহ। তখন কি লোকে বিশ্বাস করবে এর নিচে সমাহিত আছে সুন্দর নগরগুলো, তার অধিবাসীরা এবং তাদের পূর্বপুরুষদের জনপদগুলো বরণ করছে একই ভাগ্য।
সখেদে এই কথাগুলো লিখেছিলেন রোমান মহাকবি পাবলিয়াস, প্যাপিলিয়াস স্ট্যাটিয়াস আজ থেকে প্রায় দু’হাজার বছর আগে, যখন আগ্নেয়গিরি ভিসুভিয়াস থেকে নিঃসারিত গলিত লাভা, ছাই, কাদা আর পাথরের নিচে চাপ পড়ে গিয়েছিল দু’টি সমৃদ্ধশালী নগর পম্পেই আর হারকুলেনিয়াম।

Pompeii2প্রায় দু’হাজার বছর পরে তার জবাব মিলেছে। আজ সবাই বিশ্বাস করছে। কারণ প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ফলে সেই দু’টি প্রাচীন শহর আবার তাদের কবর থেকে উঠে আসছে। আর বিংশ শতাব্দীর মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখছে খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে কেমন ছিল সেই শহর। কেমন ছিল তাদের অধিবাসীদের জীবনযাত্রা। গত ২শ’ বছরের খননকার্যের ফলে পম্পেই শহরের অধিকাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার ফলে আবার সূর্যালোক দেখতে পাচ্ছে তখনকার রাস্তাঘাট, দোকানপাট, পান্থশালা, কর্মশালা, দালানকোঠা, যেখান থেকে লোকজন পালিয়েছিল প্রাণের ভয়ে আর যারা পালাতে পারেনি বরণ করেছিল শোচনীয় মৃত্যু। প্রায় ২৩ ফুট লাভার নিচে লুক্কায়িত ছিল পম্পেই।

কিন্তু হারকুলেনিয়ামকে উদ্ধার করা ছিল আরো শক্ত কাজ। কারণ সেই শহরটি চাপা পড়েছিল পঞ্চাশ থেকে ষাট ফুট লাভার নিচে। সেই লাভা পরবর্তীকালে পাথরের মতো শক্ত হয়ে জমাট বেঁধে গিয়েছিল।

ভিসুভিয়াসের ভয়ঙ্কর অগ্নি উদ্গীরণ থামলে যে দলটি প্রথম খনন করতে এসেছিল, তারা ছিল পাম্পেইর সেই সব অধিবাসী যারা প্রাণ নিয়ে পালাতে পেরেছিল তারা যতটুকু পেরেছিল খনন করে তাদের কিছু কিছু জিনিসপত্র উদ্ধার করেছিল। কোনো কোনো স্থানে এখনো তাদের তৈরি সুড়ঙ্গগুলো দেখা যায়।

কিন্তু এমন একটি সময় এলো যখন লোকে ভুলে গেল পম্পেই আর হারকুলেনিয়ামের কথা। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী অতিক্রান্ত হলো, মুছে গেল মানুষের স্মৃতি থেকে পম্পেই আর হালকুলেনিয়াম যা ছিল একদিন সুন্দর, সুসজ্জিত ধনজনে পূর্ণ। সেই রোমান মহাকবির ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ভিসুভিয়াসের সানুদেশ সুশোভিত হয়ে উঠল শ্যামল শস্যক্ষেত্র আর বৃক্ষরাজিতে। একদা যেখানে ছিল দুটো সমৃদ্ধশালী নগর, তার কোনো চিহ্নই আর রইল না।

খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য বর্বর জাতিদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তারপর শুরু হয় তার ভাঙন। রেনেসাঁর যুগে ইতালিয়ানরা আবার আবিষ্কার করল তাদের গ্রিক ও রোমক উত্তরাধিকার। প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলো পড়ল মনোযোগ দিয়ে। ফলে জানতে পারল গলিত লাভা, ভস্ম এবং পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছে তাদের দুটো ঐশ্বর্যশালী নগরী। যদিও তাদের প্রকৃত অবস্থান ছিল রহস্যাবৃত তবু গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল ভিসুভিয়াসের পাদদেশে আছে গুপ্তধনের ভাণ্ডার।

Pompeii8১৭০৯ সালের আগে আর এ শহর দুটোর নিদ্রা ভাঙল না। তাও ভাঙল দৈবক্রমে। কালক্রমে হারকুলেনিয়ামের সমাধি স্থানের উপর এলোমেলোভাবে গড়ে উঠেছিল একটি শহর ‘রোসনা’। সেই শহর কূপ খননের সময় একজন শ্রমিক আঘাত করেছিল প্রাচীন থিয়েটারের উপরের আসনগুলোতে। আর বেরিয়ে এলো সুন্দর দুর্লভ মার্বেল পাথরের নমুনা। সে সময় ইতালি ছিল অস্ট্রিয়ানদের দখলে। অস্ট্রিয়ান সেনাবাহিনীতে অফিসার হিসেবে কাজ করতেন একজন অস্ট্রিয়ান যুবরাজ। তিনি আদেশ করলেন সুড়ঙ্গ তৈরি করতে। কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের উদ্দেশ্য তার ছিল না। তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, তার নির্মীয়মান বাসভবনের জন্য মার্বেল পাথর সংগ্রহ করা। সেই অজ্ঞ যুবরাজ জানতে পারলেন না কি তিনি পেয়েছেন। তিনি বুঝতে পারেননি সেখানে সমাহিত আছে পৃথিবীর ইতিহাসের এক অপূর্ব উপাদান মাটির নিচে সমাহিত একটি প্রাচীন শহর।

অবশেষে ১৭৩৮ সালে থিয়েটার এবং শহরের অবস্থান শনাক্ত হয়। সে সময় নেপলসের রাজা তৃতীয় চার্লসের আদেশে খননকার্য শুরু হয়েছিল। একটি উৎকীর্ণ শিলালিপিতে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয় যে, সেখানেই মাটির নিচে রয়েছে মৃত শহর হারকুলেনিয়াম। তিনিও কিছু প্রাচীন বস্তু সংগ্রহ করা ছাড়া আর আগ্রহ দেখাননি। তারও কয়েক বছর পর ঘটনাক্রমে প্রাপ্ত নিদর্শনের সূত্র ধরে পম্পেইয়ের খননকার্য আরম্ভ হয়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত খননকার্য চলে এসেছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। যদিও তা ধীরে ধীরে চলেছে, তবু তার ফল ভালোই হয়েছে বলতে হবে। কারণ আগে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের সাজ-সরঞ্জাম এবং যন্ত্রপাতির অভাব ছিল না। ফলে অনেক কিছু নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে নতুন নতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কার হওয়ায় এবং নতুন পদ্ধতির বিকাশ হওয়ায় নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। ফলে আরো বেশি তথ্য আহরণ করা যাচ্ছে।

পম্পেইতে খননকার্য প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু সেই তুলনায় হারকুলেনিয়ামে কাজ পেছনে পড়ে আছে। তবুও যেটুকু আবিষ্কৃত হয়েছে তাই প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের ইতিহাসে বিস্ময়কর। কারণ এখানকার মতো পৃথিবীর অন্য কোথাও খননকার্যে সেই প্রাচীনকালের সভ্যতা তৎকালীন মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারা এমনভাবে মূর্ত হয়ে ওঠেনি। এই দুটো শহরে প্রবেশ করলে মনে হয়, এখানে যেন সেই দু’হাজার বছর আগেকার জীবনধারার অবলুপ্তি ঘটেনি বরং তা কোনো বিপর্যয়ের মুহূর্তে হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে গেছে। সে জীবনধারা যেন হঠাৎ বন্দী হয়ে গেছে সময়ের ক্যাপসুলে। সেখানে প্রবেশ করলে মুহূর্তেই পরিচয় ঘটে দু’হাজার বছর আগের জীবনধারার সাথে।

Pompeii4পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের সেই রাস্তাগুলো, বাসভবন এবং সুদৃশ্য বিপণিমালা, সরাইখানা ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলো আবার লোকচক্ষুর গোচর হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে শত শত বছর। সেখানকার খাবার ঘর, তার আসবাবপত্র, শোবার ঘর এবং বিছানাপত্র, বিছানার পাশে ছোট্ট টেবিল, রান্না করার উনুন, তার উপর বসানো রান্নার পত্র, পান্থ নিবাস এবং তার দেয়ালে আগন্তুকদের হাতে লেখা মন্তব্য সবই নীরব অতীতের সাক্ষ্য দেয়। শুধু তাই নয়, পম্পেইর দেয়ালগাত্রে এখনো জেগে আছে তখনকার নির্বাচনের খবর, বালক-বালিকাদের বিদ্যাচর্চার পরিচয় এবং পেশাদার যোদ্ধাদের মানুষ অথবা জন্তুর সাথে লড়াইয়ের ঘোষণা। মোটেও অসুবিধা হয়নি, এসব লিপির পাঠোদ্ধার করতে। কারণ তা সবই ছিল ল্যাটিন ভাষায়। আর ধনী লোকদের বাড়ির প্রাচীর গাত্রে অঙ্কিত আছে তখনকার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি।

রোমানদের অধিকারে আসার ছয়শ’ বছর আগেও এ শহর দু’টির অস্তিত্ব ছিল। শহরগুলোর দালানকোঠার অনেকগুলোই প্রাক রোমান যুগের। খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে গ্রিকরা সমুদ্রোপকূলে উপনিবেশ স্থাপন করে। তখন দেশটি ছিল ওসকান জাতির দখলে। পরে দেশটি উত্তর ইচালি থেকে আগত ইউরুসকান জাতির দখলে চলে যায়। তারপর আসে স্যামনাইট জাতি। তখন খ্রিষ্টপূর্ব ৪২০ অব্দ। এই স্যামনাইটদের অধীনে শহর দু’টি সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে ইটরুসকান ও স্যামনাইটরা অনেক দিক দিয়ে রোমানদের চেয়ে উন্নত সভ্যতার অধিকারী ছিল। সে সময়ে রোমানরা ছিল একটি ছোট্ট জাতি বাস করত টাইবার নদীর তীরে। তখন তারা যুদ্ধ করত পার্শ্ববর্তী জাতির সাথে।

প্রাক রোমান যুগে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে গ্রিকদেরই ছিল একাধিপত্য। খ্রিষ্টপূর্ব ৮০ অব্দে রোমান সেনাপতি সুল্লা পম্পেই জয় করেন। কালক্রমে রোমানরা উন্নততর গ্রিক সংস্কৃতিকে আয়ত্ত করে নেয়। নেপলস উপসাগরের উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে বিত্তশালী রোমানরা পম্পেই, হারকুলেনিয়াম, মাইসেনাম প্রভৃতি স্থানে অবকাশ যাপনের জন্য অথবা স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য সুন্দর ভবন তৈরি করতে হবে।

ভিসুভিয়াসের পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে নির্মিত হয়েছিল পম্পেই। তার উত্তর-পশ্চিমে পাঁচ মাইলেরও কম দূরত্বে অবস্থান করছিল হারকুলেনিয়াম। পম্পেই আয়তনে অনেক বড় ছিল হারকুলেনিয়ামের চেয়ে। বিভিন্ন মত অনুযায়ী পম্পেইর লোকসংখ্যা ছিল ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজারের মধ্যে। এই নগরীর বিশাল ক্রীড়াঙ্গনে যেখানে পেশাদার যোদ্ধাদের যুদ্ধ অথবা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হতো সেখানে ২০ হাজার লোকের আসনের ব্যবস্থা ছিল। মনে হয় ক্রীড়ার সময় বহু লোক শহরের বাইরে থেকে আসত। এ জন্যই বোধহয় এত হোটেল, সরাইখানার সংখ্যাধিক্য দেখা যায় এই শহরে।

সৌন্দর্যমণ্ডিত প্রাকৃতিক পরিবেশে অবস্থিত ছিল হারকুলেনিয়াম। গমনাগমন পথে ক্ষণিক থামবার স্থানও ছিল এটা। আর পম্পেইর অবস্থান ছিল নাব্য সারমো নদীর তীরে। সেখানে ছিল পোতাশ্রয়ের বিশেষ সুবিধা। তা ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগ ছিল। সুতরাং পম্পেই ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নগরী। সেই তুলনায় হারকুলেনিয়াম ছিল ছোট এবং গুরুত্বপূর্ণ।

পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের রাস্তা দিয়ে এখন যদি আমরা হেঁটে যাই, তাহলে মনে হবে আমরা যেন সেই দু’হাজার বছরের আগের শহরে ফিরে গেছি। তখনকার অধিবাসীদের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি। কারণ খননকার্য অত্যন্ত সাবধানতার সাথে করা হয়েছে। প্রত্যেকটি জিনিস যেখানে ছিল তা সেখানে রাখার জন্য করা হয়েছে বিপুল প্রয়াস। তা সম্ভব হয়েছে আর একটি কারণে। সেই ভয়ঙ্কর দিনে যে সর্বগ্রাসী লাভাস্রোত নেমে এসেছিল ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে। তার বেগ ছিল বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম। কোথাও কোথাও প্রচণ্ড লাভা স্রোতে ধসে গেছে ঘরের দেয়াল ও থামগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে আসবাবপত্র এবং ভেসে গেছে মূর্তিগুলো। আবার কোথাও কোথাও লাভা জমে স্ফীত হয়ে উঠেছে, ধীরে ধীরে গ্রাস করেছে বাড়িঘর। ফলে জিনিসপত্র থেকে গেছে নিজ নিজ স্থানে, স্থানচ্যুত হয়নি। এমনকি রান্নাঘরের চুল্লির উপরে বসানো পাত্রটিও রয়েছে স্থির।

পম্পেই এবং হার কুলেনিয়ামের খননকারীরা সেই ভয়ঙ্কর লাভার স্রোতে, গন্ধক ধূম, ছাই ভস্ম পাথর বৃষ্টিতে লোকজন যে কি অসহায় আর শোচনীয় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে তা সাজাতে পেরেছেন। পম্পেইতে দেখা যাবে একটি ঘরের কোনায় বসে আছে একটি লোক। তার নাক এবং মুখের সামনে ধরা আছে তার দু’খানি হাত। বোধহয় বিষাক্ত গ্যাস থেকে বাঁচতে চেষ্টা করেছিল। এক পিতা হামাগুড়ি দিয়ে এগোতে চেষ্টা করেছে তার ছেলেমেয়েদের কাছে।

Pompeii7ভাগ্যবান বলতে হবে হারকুলেনিয়ামের অধিবাসীদের। তারা পালাতে পেরেছিল। যে অল্প কয়েকজন পালাতে পারেনি, উত্তপ্ত লাভা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু অস্থিগুলো রয়ে গেছে। পালানোর সময় কোনো কিছু নেয়ার মতো সময় তাদের ছিল না। মূল্যবান জিনিসপত্র, অলঙ্কারাদি, টাকা-পয়সা রোপ্য নির্মিত বাসনপত্র, দলিলপত্র সব ফেলে রেখে তাদের পালাতে হয়েছে। যারা পালাতে দেরি করেছে, তারাই বরণ করেছে শোচনীয় মৃত্যু। সব কাজকর্মে হঠাৎ এক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। তখন মধ্যাহ্নভোজের সময় হয়ে এসেছিল। এ অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, শত শত বছর পরও পাওয়া গেল এক টুকরো রুটির ধ্বংসাবশেষ। মনে হয় সেই প্রলয়ঙ্করী ধ্বংসযজ্ঞের সময় কেউ রুটি ছিঁড়ে খাচ্ছিল। অনেক বাড়ির খাবার টেবিলে তখন দেয়া হয়েছিল মধ্যাহ্নভোজের আহার্য দ্রব্য। বাজারের সামনে আধা প্যাক করা অবস্থায় পাওয়া গেল চমৎকার কতগুলো কাঁচ দ্রব্য। ডাইওনিসিয়াসের মূর্তিটি এখনো পড়ে আছে এক ঝালাই করার দোকানে মেরামতের অপেক্ষায়। রুটি তৈরির কারখানায় রুটি সেঁকার ব্রোঞ্জের পাত্রগুলো এখনো অবস্থান করছে ওনুনের ওপর। আর বাইরে গম ভাঙার কলের সাথে জুড়ে আছে কতগুলো গাধার হাড়। মনে হয় সেই বিপর্যয়ের সময় গাধাগুলো গম ভাঙানোর কল ঘোরাচ্ছিল।

একজন মনিকারের দোকানে পাওয়া গেল একটি ছোট বালকের কঙ্কাল। কঙ্কালটি একটি সুন্দর বিছানায় শায়িত। কাছেই রয়েছে তার মধ্যাহ্নভোজের জন্য প্রস্তুত একটি মুরগির দেহাবশেষ। প্রশ্ন জাগে বালকটিকে এমনি করে কেন সবাই ফেলে চলে গেল? সে কি অসুস্থ হয়ে একেবারে শয্যাশায়ী ছিল, তাই সে পালাতে পারেনি? কিংবা তার পিতা-মাতা কি সে সময় বাইরে ছিল তাই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি? ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ নিঃসৃত সেই ভয়ঙ্কর লাভা যখন স্ফীত হয়ে তাকে গ্রাস করছিল, তখন তাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসবে, হয়তো ব্যাকুল হয়ে এই প্রত্যাশা করছিল। কিংবা সে হয়তো আকুল চিৎকার করছিল কিন্তু হায়, তার সাহায্যের জন্য কেউ হয়তো এগিয়ে আসেনি।

Pompeii3আর একটি বাড়ির ছোট্ট কামরায় দেখা যায় একটি লোকের কঙ্কাল। কঙ্কালটির অবস্থান দেখে মনে হয় লোকটি বিছানায় মুখ ডেকে শুয়ে পড়েছিল। হয়তো আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত গ্যাস থেকে বাঁচার জন্য অথবা জীবনের সব আশা ভরসা ছেড়ে দিয়ে অসহায়ভাবে অপেক্ষা করছিল অগ্রসরমান লাভার শেষ ঢেউটির জন্য যে ঢেউ তাকে তলিয়ে দেবে মৃত্যুর অতল তলে। কারণ ঘরটি ছিল তালাবদ্ধ। তাই তার পালানোর উপায় ছিল না।

আরো দেখা যায়, একটি দোলনায় একটি ছোট্ট শিশুর কতগুলো হাড়। হয়তো তার মাতা-পিতা তাদের নয়নমণি ছোট্ট শিশুটিকে নিয়ে যেতে পারেনি।

সেই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের যে একমাত্র চাক্ষুস বিবরণ ঐতিহাসিকরা পেয়েছেন তা লিখেছিলেন ছোট প্লিনী। তিনি ছিলেন মাইসেনাম বন্দরে অবস্থানরত রোমান নৌবহরের অধিনায়ক বড় প্লিনীর ভাগ্নে। বড় প্লিনী তার নৌবহরে একটি অংশ নিয়ে উদ্ধারকার্য চালানোর সময় গন্ধক ধুমে শ্বাস প্রশ্বাস রুদ্ধ হয়ে মারা যান।

ছোট প্লিনী তখন অবস্থান করছিলেন পম্পেই থেকে বেশ দূরে মাইসেনাম বন্দরে। সে বন্দরও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তার বিবরণও ভয়াবহ। কিন্তু পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের অধিবাসীরা যে মহাপ্রলয়ের অভিজ্ঞতা লাভ করছিল তার স্বাক্ষর পাওয়া যায় এ দুটো শহরের রাস্তায়, বাড়িঘরে, দালানকোঠায়। সেই সব নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করে Mr. Corit তার বিখ্যাতThe Destruction and Resurrection of Pompie and Herculancum গ্রন্থে এবং Josph joy Deiss তার Herculanneum lives Again গ্রন্থে সেই ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার যে চিত্র এঁকেছেন তা থেকে আমরা জানতে পারি কী ভয়ঙ্কর ছিল সেই দিন, কী প্রলয়ঙ্করী আর ভয়াবহ সেই পরিস্থিতি। প্রাকৃতিক শক্তির কাছে মানুষ কত অসহায়। কী নির্মম, কী করুণ কী অসহায় তাদের মৃত্যু।

সে দিন ছিল ৭৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ আগস্ট। নির্মেঘ আকাশের নিচে নেপলস উপসগারের জল নীল আর শান্ত। ভিসুভিয়াসের গাত্র দেশ ছেয়ে আছে সবুজ জলপাই গাছ। হারকুলেনিয়াম থেকে সাত মাইল দূরে ভিসুভিয়াসের অপর পাশে ছিল পম্পেই।

কিছু দিন উভয় শহরেই অনুভূত হচ্ছিল মৃদু ভূমিকম্প। অবশ্য এ অঞ্চলে এ নতুন নয়। ভিসুভিয়াসের জ্বালামুখ থেকে এত বেশি ধূম নির্গত হচ্ছিল যে, স্মরণকালের মধ্যে এমনটি আর দেখা যায়নি। সে দিন হারকুলেনিয়াম ছিল উৎসবমুখর। হাটবাজার লোকজনে পূর্ণ। শহরের বড় তোরণের বাইরে দু’পাশে ফেরিওয়ালাদের সারি। তারা হরেকরকম সওদা বিক্রি করছে। জাদুকর, গায়ক, বাজিকর প্রভৃতি বৃত্তিজীবী লোকজন পথচারীদের আনন্দ দিচ্ছিল প্রচুর; আর কামিয়ে নিচ্ছিল দু’পয়সা। পালাস্রোতে ক্রীড়া চলছে। ঘোষণা করা হয়েছে বিকেলে হবে নাট্যানুষ্ঠান। বিচারালয়ের সে দিন ছুটি। সারা শহরে জীবনের চাঞ্চল্য।

Pompeii5হঠাৎ এক প্রচণ্ড বিস্ফোরণে আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠল। ভিসুভিয়াসের দিক থেকে এক কর্ণবিদারী শব্দে কেঁপে উঠল সকল চরাচর। মাটি যেন স্ফীত হচ্ছে এবং কাঁপছে। সকলে চমকে তাকাল ভিসুভিয়াসের দিকে। সভয়ে দেখল ভিসুভিয়াসের উপরিভাগ বিস্ফোরণে উড়ে গেছে। আর দেখা গেল দিকে দিকে আগুনের শিখা। লোকজন ভয়ে চিৎকার করে উঠল। তারপর ভিসুভিয়াসের ভয়াবহ জ্বালামুখ থেকে প্রচণ্ড গর্জনে ছত্রাকারে বেড়িয়ে আসছে তরঙ্গায়িত ধূম্রকুণ্ডলী আর তার সাথে নির্গত হচ্ছে কাদা আর পাথর। একটার পর একটা ঘন ঘন শব্দ হচ্ছে। আর কালো রঙের থামাকৃতির পাথরের বিশাল খণ্ডগুলো ওপরে উঠে ভেঙেচুরে আবার স্তূপের পর স্তূপ নিচে পড়ছে। অচিরেই আকাশ কালো হয়ে উঠল। সূর্য ঢাকা পড়ল ধূম্র মেঘের আড়ালে। মধ্য দিনেই নেমে এলো রাত্রির নিকষ কালো আঁধার। গন্ধকের ধূমে লোকের শ্বাস-প্রশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসতে লাগল।

হঠাৎ দেখা গেল কোত্থেকে কেউ জানে না তীব্র বেগে পড়তে লাগল বৃষ্টির ফোঁটা। তার সাথে এলো পাথর আর মাটি। মাঝে মাঝে দেখা যায় আগুনের ঝলকানি। আকাশ থেকে পাখিগুলো মরে অথবা অসাড় হয়ে মাটিতে পড়তে লাগল। সমুদ্র হলো উত্তাল। উদ্দাম ঢেউগুলো তীরে আঁছড়ে ফেলতে লাগল মরা মাছগুলো। উত্তপ্ত কাদার সমুদ্র ৩০ থেকে ৫০ ফুট উঁচু হয়ে এগিয়ে এলো হারকুলেনিয়ামকে গ্রাস করতে।

সেই লাভার স্রোতে তলিয়ে যেতে লাগল, হাটবাজার, দোকানপাট, মন্দির ভূগর্ভস্থ কুঠুরি। জীবন বাঁচানোর একমাত্র পথই খোলা আছে সম্ভব পলায়ন। বিলম্ব মানে ভয়াবহ মৃত্যু। যাদের গাড়ি ছিল ঘোড়া ছিল চড়ে বসল। গোড়াকে লাগাল চাবুক যেন যথাসম্ভব দ্রুতগতিতে শহর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারে। শক্ত করে ধরল তারা জ্বলন্ত মশাল। কারণ মধ্য দিনেই নেমে এসেছিল অমানিশার সূচিভেদ্য আঁধার। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছে তারা পাগলের মতো সমুদ্রের দিকে অথবা নেপল্স শহরের দিকে।

পম্পেইতে বিপর্যয় ঘটল একটু পরে। হারকুলেনিয়ামের মতো লোকজন তাড়াহুড়ো করল না। সুতরাং নষ্ট হয়ে গেল মূল্যবান সময়। সেখানকার অধিবাসীরা সভয়ে দেখছিল ভিসুভিয়াসের রুদ্রমূর্তি। তখন সেই ভীষণ মূর্তি আগ্নেয়গিরির জঠর থেকে জন্ম এবং ধূম এক বিশাল পাইন গাছের আকার ধারণ করে প্রায় এক হাজার ফিট উপরে উঠে গেছে। তারা তখনো আশা করছিল এবং প্রার্থনা করেছিল বাতাস হয়তো দূরে সরিয়ে দেবে ভস্ম আর ধূমের ভয়াল মেঘ। তারা তাদের একান্ত প্রিয় বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। এটাই হলো বহু লোকের মৃত্যুর কারণ। কিন্তু উত্তর-পশ্চিম বায়ুদানবরূপী সেই মেঘকে চালিত করল শহরের দিকে। তখন ফিরে এলো তাদের সম্বিত। তারা পালাতে চেষ্টা করল।

তখন স্তূপের পর স্তূপ লাভা এসে পড়ছে, এবং ছোট্ট ছোট্ট পাথরগুলো এসে ঢুকছে সর্বত্র। আর মাঝে মাঝে প্রবল বায়ু প্রায় চৌদ্দ পাউন্ড ওজনের পাথর উড়িয়ে ফেলছে শহরের ওপর। শিগগিরই লাভা সব কিছু গ্রাস করতে শুরু করল। অনেক বাড়ির ছাদ ভেঙে যাচ্ছে পাথর আর লাভার চাপে।

Pompeii6পলায়নপর লোকেরা তখন সংগ্রাম করছে নয়-দশ ফুট উঁচু লাভার প্রাচীর ভেঙে এগিয়ে যেতে। এক রকম সাদা ছাই বৃষ্টির সাথে মিশে পড়ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। নির্দয়ভাবে পলায়নপর পম্পেইবাসীদের পথে বাধার সৃষ্টি করছে। গন্ধক ধূমে দম বন্ধ হয়ে পথের ওপর ঢলে পড়তে লাগল অগণিত লোক। ভেজা ভস্ম আঠার মতো আটকে ধরছে মানুষের হাত-পা।
যারা আগে পালায়নি, বরণ করল ভয়াবহ মৃত্যু।

সেই মহাবিপদের সময় পম্পেইবাসীরা প্রাণের ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেল। যা সেখানে ছিল সেখানে রেখেই পালাতে লাগল। পেছনে ফিরে তাকানোর অবস্থা তাদের ছিল না। এক বাড়িতে শূকর ছানা রোস্ট হচ্ছিল। আর এক জায়গায় রুটি সেঁকা হচ্ছিল উনানে। তাই রেখে বাড়ির লোকজন পালিয়ে গেল।

এক বাড়িতে শেকলে বাঁধা ছিল একটি কুকুর। কুকুরের মালিক পালিয়ে যাওয়ার সময় কুকুরটিকে মুক্ত করে যেতে ভুলে গেলেন। যখন পাথরের টুকরোগুলো বৃষ্টি ধারার মতো তার গায়ে এসে পড়ছিল, তখন হতভাগ্য জীবটি নিজেকে বাঁচানোর জন্য কী লাফালাফিই না করেছে। অবশেষে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে।
ইতোমধ্যে পাম্পেইয়ের রাস্তাগুলো ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন পূর্ণ হয়ে গেছে। সবাই বাঁচার জন্য সংগ্রাম করছে। কার আগে কে পালাতে পারে। বেশির ভাগ লোকই ধাবিত হচ্ছে পশ্চিমের ফটকের দিকে সেখান থেকে রাস্তা বেরিয়ে গেছে হারকুলেনিয়ামের দিকে। কিন্তু তারা জানে না ইতোমধ্যে কী দশা হয়েছে হারকুলেনিয়ামের।

এ দিকটায় মার্কারি স্ট্রিটে বাস করত একজন ধনী রোমান। তার বাড়িটি ছিল সুন্দর। এই বসতবাড়ি রেখে তিনি প্রাণ নিয়ে পালিয়ে গেলেন। কিন্তু তার স্ত্রী মূল্যবান জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে দেরি করে ফেললেন। ফলে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে গেল তার। বাড়ি থেকে বেরিয়ে অল্প দূরে রাস্তায় তিনি ঢলে পড়লেন আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত, বৃষ্টিসিক্ত, আঠালো ভস্ম স্তূপের মাঝে। তার চতুর্দিকে ছড়িয়ে রইল তার অলঙ্কারাদি, টাকা-পয়সা, রুপালি আয়না। আর কাছেই পড়ে রইল তার তিন পরিচারিকা।

এদিকে অন্ধকার আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে পাথর আর ছাই ভস্ম। গন্ধক ধূমে দৃষ্টিহীন হয়ে আসছে পলায়মান লোকদের চোখ। বন্ধ হয়ে আসছে শ্বাস-প্রশ্বাস। শহরের সড়ক পূর্ণ এর নগরীতে। মৃত্যুর সাথে লড়াই করে পরাজিত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে দলে দলে, পাথর আর ভস্মের সমুদ্রে। স্তূপের পর স্তূপ জমে উঠল মৃতদেহ।

একটি বাড়িতে আবিষ্কৃত হলো সম্ভবত সবচেয়ে করুণ এবং লোমহর্ষক দৃশ্য। স্পষ্টত বোঝা যায় কোনো আত্মীয়ের মৃত্যুর অন্ত্যেষ্টিভোজের আয়োজন হয়েছিল সেখানে। বিষাক্ত গ্যাসে সেখানকার লোকজন এমন আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করল যে, নিজ নিজ স্থানেই রয়ে গেল লাশগুলো।

শহরের বাইরে সমুদ্রের তীরে ছিল এক ধনাঢ্য লোকের বাড়ি। সহজেই অনুমান করা যায়, শহরের ভেতরের বাসিন্দাদের চেয়ে এই বাড়ির লোকজনের পলায়ন ছিল অনেক সহজতর। যখন খননকারীরা এই ধ্বংসস্তূপ সরাল, তখন বেরিয়ে আসল ওই বাড়ির প্রাচীর চিত্রগুলো। আর পাওয়া গেল তিন রমণীর কঙ্কাল। তারা পালাতে পারেনি। কারণ ঘরের মেঝে এবং ছাদ ভেঙে পড়েছিল। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তারা নানা অলঙ্কারে শোভিত হয়ে। একজন যুবতী তখনো ধরে রেখেছিল একটি ব্রোঞ্জের আয়না। একটি মেয়ে অতি কষ্টে প্রবেশদ্বারে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু নিঃশেষ হয়ে গেল তার শক্তি। পড়ে রইল সেখানে।

আর একটি লোকের কঙ্কাল দেখে মনে হয় লোকটি ছিল সেই বাড়ির দারোয়ান। সেই ঘোর বিপদের সময় সে বোধ হয় প্রাণ বাঁচানোর জন্য সেই বৃহৎ অট্টালিকার এ ঘরে সে ঘরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত আশ্রয় নেয় নিজের ঘরের এক কোণে। সেখানেই সে বরণ করে শোচনীয় মৃত্যু। মনে হয় এখনো সে তাকিয়ে আছে বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলের আংটির প্রতি। সেখানে বসানো আছে একটি পাথর, তার ওপর অঙ্কিত আছে একটি ছোট্ট মূর্তি।

Pompeii11মাকে নিয়ে পলায়মান ছোট প্লিনি মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর পম্পেইর বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন…
“অন্ধকার আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। সে অন্ধকার চন্দ্রহীন কিংবা মেঘাচ্ছন্ন রাত্রির অন্ধকার নয় সে যেন দরোজা-জানালা বন্ধ করা বাতি নেভানো ঘরের সূচিভেদ্য অন্ধকার। শোনা গেল নারীর করুণ আর্তনাদ, শিশুর মর্মভেদী কান্না। কেউ খুঁজছে তার ছেলেমেয়েদের, ছেলেমেয়েরা ডাকছে তার মাতাপিতাকে। কেউবা তার স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বামীকে। শুধু গলার স্বরে পরস্পরকে চিনতে পারছে। আবার কেউ নিজের পরিবার-পরিজনদের দুর্ভাগ্যে কাঁদছে। কেউ কামনা করছে মৃত্যু। অনেকেই হাত তুলে দেব-দেবীর সাহায্য প্রার্থনা করছে বেশির ভাগ লোকেই আফসোস করছে দেবদেবী বলে কোথাও কিছু নেই এবং ভাবছে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে শেষ অনন্ত রাত্রি।”

ছোট প্লিনি এবং মা বেঁচে গেছেন। কিন্তু হাজার হাজার লোক যারা গন্ধক ধূমে দম বন্ধ হয়ে সেই ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত ছাই, কাদা এবং লাভার নিচে সমাহিত হলো কিংবা বিধ্বস্ত সেই নগরীর ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে নিহত হলো, তাদের অনেকেই মৃত্যুর মুহূর্তে অবশ্যই বিশ্বাস করেছিল পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে অনন্ত এবং শেষ রাত্রি।

দীর্ঘ আঠারো শতাব্দী পর খননকার্যে উদ্ধারপ্রাপ্ত পম্পেইয়ের এক দেয়ালগাত্রে দেখা গেল উৎকীর্ণ দুটো শব্দ… ‘সোডোমো গোমোরো’
ধর্মগ্রন্থ থেকে আমরা জানি সোডোমো এবং গোমোরো নামে দুটো প্রাচীন শহর ধ্বংস হয়েছিল তাদের অধিবাসীদের পাপের কারণে? এই শহর দুটোর অধিবাসীরাও কি তাহলে পাপ করেছিল? সূত্র : অন্য এক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *