
পুরোনো ছবি ও বর্তমান ছবি।
মাঠের মাঝখানে গম্বুজশোভিত একটি স্থাপত্যের ছবি আছে ব্রিটিশ লাইব্রেরির ওয়েবসাইটে। ১৯০৪ সালে ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী ফ্রিৎজ কাপ, যিনি ওই সময়ে ঢাকার অনেকগুলো ছবি তুলেছিলেন। বাংলাদেশ ওল্ড ফটো আর্কাইভের পেজসহ আরও অনেক সাইটে থাকা এই ছবিটি দেখলেই ঢাকার বাসিন্দারা বুঝতে পারবেন এটি পরী বিবির সমাধিসৌধ। বাংলার মোগল সুবাদার শায়েস্তা খানের মেয়ে ইরান দুখত রেহমত বানু বাদশাহ, যিনি পরী বিবি নামে পরিচিত ছিলেন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে মুহম্মদ আজমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল।
জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে শাহজাদা আজমের সঙ্গে পরী বিবির বিয়ে হয়। এরপর তিনি আজমের সঙ্গে ঢাকায় এসে বসবাস শুরু করেন।
শাহজাদা আজম ১৬৭৮ সালে লালবাগ দুর্গের কাজ শুরু করেন। এর মধ্যেই পিতার ডাকে তিনি দিল্লিতে চলে গেলে শায়েস্তা খান নির্মাণকাজ চালিয়ে যান। কিন্তু ১৬৮৪ সালে কন্যা পরী বিবির অকালমৃত্যুতে তিনি দুর্গ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেন।
দুর্গের ভেতরে মসজিদের পূর্ব দিকে পরী বিবিকে সমাহিত করা হয়। এরপর শায়েস্তা খান কন্যার সমাধির ওপর একটি সুদৃশ্য সৌধ নির্মাণ করেন। এই মাজারটি নির্মাণের জন্য শায়েস্তা খান ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাদা মার্বেল, বেলে পাথরসহ আরও অনেক নির্মাণ উপকরণ এনেছিলেন। এগুলোর সমন্বয় করেই তৈরি হয়েছিল অন্যতম দর্শনীয় এই মাজার। সমাধিকক্ষটিকে ঘিরে রয়েছে আরও আটটি কক্ষ।
দক্ষিণ-পূর্ব দিকের কক্ষটিতে আরেকটি ছোট সমাধি রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, এটি পরী বিবির মেয়ে সামসাদ বেগমের সমাধি।
ভবনের চার কোণে রয়েছে চারটি চূড়া। কেন্দ্রীয় কক্ষের ওপর অষ্টভুজাকার গম্বুজটি পিতলের পাত দিয়ে মোড়া। অবশ্য আদিতে এটি সোনার পাতে মোড়ানো ছিল। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়িত্ব নেওয়ার পর পুরো জায়গাটি খুব সুন্দর করে সংস্কার করা হয়েছে। কেউ চাইলেই পুরান ঢাকার লালবাগ কেল্লায় গিয়ে সমাধিসৌধটি দেখে আসতে পারেন।
সাড়ে তিন শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই সমাধির সঙ্গে জাড়িয়ে আছে বেদনার ইতিহাস। আর আছে মেয়ের জন্য এক বাবার ভালোবাসার নিদর্শন।
লেখা: শরিফুল হাসান, ছবি: জিয়া ইসলাম। সৌজন্যে: প্রথম আলো