Skip to content

পর্বত, পানি ও বরফের অপার্থিব মানালি

:: কাজী মাহদী আমিন ::
ভারতের উত্তরের হিমাচল প্রদেশ তার তুষারাবৃত পর্বতমালার জন্য বিশ্বখ্যাত। হিমালয়ের বরফগলা পানি এসে ভাস নদীর তীরে গড়ে তুলেছে হিমাচল প্রদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় ডেস্টিনেশান মানালি, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত। অপার্থিব কিছু দৃশ্যের দেখা মিলবে মানালিতে। হিমশীতল এই অঞ্চলে টুরিস্টদের কমতি নেই এবং আজকাল বাংলাদেশ থেকেও সেখানে ভ্রমণ করা অনেক সহজ। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত মানালিতে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে যায় এবং তুষারপাত হয়ে থাকে, তবে বাকি বছর জুড়ে তাপমাত্রা থাকে ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এক কথায় মানালি অনন্য একটি টুরিস্ট স্পট, বিশেষ করে এবারের গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ থেকে ক’দিনের জন্য মুক্তি পেতে ঈদের ছুটিতে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন মানালি।

এবার জেনে নেয়া যাক মানালির কিছু দর্শনীয় জায়গার কথা।

রোতাং পাস
সমতল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার উঁচুতে অবস্থিত মানালির রোতাং পাস। এই উচ্চতার ফলে এই অঞ্চলে গরম কালেও ঠান্ডা থাকে। মানালি থেকে কিলং যাওয়ার পথে রোতাং পাস হচ্ছে সবচাইতে উঁচু কেন্দ্র এবং ভাস নদীর উৎপত্তিস্থল এখানেই। গাড়ি নিয়ে এই পথ পাড়ি দিলে আপনি এক পাশে দেখতে পাবেন পাহাড়ের মাঝখানের গভীর শূন্যতা এবং আরেক পাশে বরফে আবৃত পাহাড়ের সারি। একটু বিপদজনক এই রাস্তা পাড়ি দিয়ে রোতাং পাসে পৌঁছে যাবার পর আশপাশের অসাধারন সৌন্দর্যমন্ডিত সব দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবেই।

কালাথ এবং ভাশিস্ত স্প্রিংস
হিমালয়ের তলদেশে বেশ কিছু গরম পানির প্রবাহ বা ‘হট ওয়াটার স্প্রিংস’ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়েছে। মানালির কাছেই এমন দুটি প্রবাহ আছে টুরিস্টদের জন্য উন্মুক্ত। ৭ কি.মি নিচেই কালাথ প্রবাহ এবং ৩ কি.মি দূরে আছে ভাশিস্ত প্রবাহ। তবে এখন সেখানে কাঁচা মাটির কিছু নেই। সুন্দর ডিজাইন করে সেখানে বাথহাউস বানানো হয়েছে যেখানে টুরিস্টরা হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্যেও প্রাকৃতিক গরম পানিতে গোসল করার সুযোগ পাবে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এইসব স্প্রিং-এর পানি স্বাস্থ্য ভাল রাখতে বিশেষ কার্যকর।

সোলাং ভ্যালি
সোলাং ভ্যালি লোকমুখে ‘স্নো ভ্যালী’ নামে পরিচিত। মানালি থেকে ১৩ কি.মি উত্তর-পশ্চিমে স্নো ভ্যালি তার ৩০০ মিটার লম্বা স্কি লিফট-এর জন্য বিখ্যাত। এখানে বিদেশি পর্যটকরা স্কি করে থাকে। স্কিয়িং করা ছাড়াও রোপওয়ে ব্যবহার করে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে পাড়ি জমান যাবে। এখানে অসম্ভব সুন্দর তুষারে ঢাকা পর্বতমালা দেখা যায় অনেক উঁচু থেকে। সোলাং ভ্যালিতে প্যারাগ্ল্যাইডিংও করা যায়।

এ ছাড়াও মানালিতে ৫০০ বছর পুরানো হাদিম্বা মন্দির, মা শারভাই মন্দির, জগিনি ফলস, জগৎসুখ, রাহালা জলপ্রপাত এবং আরও অনেক অনন্যসাধারণ দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

কীভাবে যাবেন?
ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে মানালি প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে এবং গাড়ি দিয়ে যেতে প্রায় ১৪ ঘণ্টা লাগবে। বাংলাদেশ থেকে প্লেনে সরাসরি দিল্লি যাওয়া যায় তবে অনেক সময় হাতে থাকলে এবং বাজেট সীমিত থাকলে ল্যান্ড বর্ডার ক্রস করে বাই-রোড পৌঁছানো যাবে। প্লেনে করে গেলে মানালি আসা-যাওয়া মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার মতো। আর অবশ্যই ইন্ডিয়া যাওয়ার আগে ভিসা প্রসেস করে নিতে হবে।

খাওয়াদাওয়া এবং ঘুরাফেরা
মানালিতে ট্রেকিং করার অনেক স্থান রয়েছে। ঠান্ডা আবহাওয়াতে পাহাড় চষে বেড়ানো বেশ আরামদায়ক। তবে অবশ্যই ভারি কাপড় এবং শক্ত গ্রিপসহ জুতা সাথে নিয়ে যেতে হবে। লোকাল দোকানে এসব কিনতে পাওয়া যায়। রাফটিং, প্যারাগ্ল্যাইডিং এবং স্নো স্কিইং-এর জন্যও ব্যবস্থা আছে, তবে সেগুলোর জন্য মৌসুম বুঝে যেতে হবে। মানালিতে বিদেশি খাওয়া থেকে শুরু করে করে ইন্ডিয়ান ডাল-ভাত সবই পাওয়া যাবে। আশপাশে ঘুরলেই ভাল খাওয়ার হোটেল পাওয়া যাবে। দল বেঁধে গিয়ে সবাই মিলে গাড়ি ভাড়া করে নিলে খরচ অনেক কম পড়বে।

কেনাকাটা
মানালির বিভিন্ন হস্তশিল্পের মধ্যে কম্বল, শাল, সোয়েটার এবং কাঠের তৈরি বিভিন্ন গয়না কিনতে পারবেন। তা ছাড়া, মানালির উর্বর জমিতে অনেক প্রকারের ফল উৎপাদন হয় যার মধ্যে আপেল, পিচ, চেরি এবং বিভন্ন ফলের জ্যাম পুরো ভারতজুড়ে নামকরা।

হোটেল
কিছু মিড-রেঞ্জ হোটেলের খোঁজখবর নীচে দেয়া হলো: হোটেল দ্রিল্বু মানালি, গুরুদোয়ারা রোড – +৯১৯৭৩৬৩৮৬৮৫৪, কানিয়াল হোটেল, কানিয়াল রোড, সিমসা – +৯১ ৯৯৫২৬৪৫৭৮৬। সৌজন্যে: অনন্যা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *