Skip to content

পর্যটনের ভালো দিন আসছে : অপরূপ চৌধুরী

apurup-chy

পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী।

‘সান্ধ্য বিনোদন বলতে যা বোঝায় সেটা আমাদের দেশে নেই৷ এটা আসলে বিদেশি পর্যটকরা খুবই পছন্দ করে এবং এই খাতে তারা সবচেয়ে বেশি খরচও করে,’ পর্যটন শিল্প সম্পর্কে বলেছেন পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী।

গত চার দশক ধরে সম্ভাবনাময় খাতের তকমা থাকলেও ‘পর্যটন খাত’ তার রুগ্ন অবস্থা কাটাতে পারেনি কেন?

ড. অপরূপ চৌধুরী: পর্যটন বিকাশের পূর্ব শর্ত হলো যোগাযোগ ব্যবস্থা, খাবার, আবাসন, নিরাপত্তা সর্বোপরি বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা৷ বাংলাদেশে এই সেক্টরে উন্নতি হচ্ছে৷ দেশের বড় শহরগুলোতে ফ্লাইওভার হচ্ছে, রেল সম্প্রসারিত হচ্ছে৷ দ্রুত যে কোনো গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে৷ বিমানের অভ্যন্তরীণ ফাইট অনেক বেড়েছে৷ বিশেষ করে বিদেশিদের কথা চিন্তা করে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হচ্ছে৷ রানওয়েকে সম্প্রসারিত করা হচ্ছে, যাতে রাতেও সেখানে ফ্লাইট ওঠানামা করতে পারে৷ আগে কিন্তু এই কাজগুলো হয়নি৷ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব কাজে মনোযোগ দিয়েছে৷ ২০১৬ সালকে সরকার পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করেছে৷ কিন্তু এই বছর শুরু হওয়ার আগে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে৷ রাজধানীতে ইটালির নাগরিক ও রংপুরে জাপানি নাগরিক খুন হন৷ পাশাপাশি বছরের মাঝামাঝি এসে আরো কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটে৷ ফলে আমাদের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হচ্ছে না৷

দেশের পর্যটন খাতের যেটুকু অগ্রগতি সেটা বেসরকারি খাতের অবদান৷ সরকারি কোনো সহযোগিতা, এমনকি ঋণ সুবিধাও পাচ্ছে না এই খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো৷ এই খাতকে প্রণোদনা না দিলে তারা কিভাবে ব্যবসা সফল হবে?

একটা জিনিস কিন্তু মনে রাখতে হবে৷ সরকার ব্যবসা করবে না, ব্যবসা করবে ব্যবসায়ীরা৷ সরকার সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে৷ আমরা যেখানে পর্যটন কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেই, সেখানে ব্যবসায়ীরা গেলে লাভবান হবে৷ আমরা যেখানে কাজ শুরু করেছি, সেখানে কিন্তু ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে৷ কক্সবাজারে আমরা যখন উদ্যোগ নেই, তখন তেমন কোনো অবকাঠামো ছিল না৷ এখন সেখানে কত হোটেল, রেষ্টহাউস হয়েছে৷ তারা সেখানে সফলভাবেই ব্যবসা করছে৷ আর সরকার যে প্রণোদনা দিচ্ছে না, এটা ঠিক নয়৷ সরকার এই খাতের ব্যবসায়ীদের অনেক জায়গায়ই ছাড় দিচ্ছে৷ এমনকি টুরিজমের জন্য আনা উপকরণের সবকিছুই কিন্তু ট্যাক্স ফ্রি৷ সরকার এটাকে শিল্প হিসেবে দেখছে৷ সরকারের এ খাতে সুদৃষ্টি আছে৷ প্রধানমন্ত্রী টুরিজম স্পটের জন্য ৩৫ হাজার একর জমি দিয়েছেন৷ এর মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে সাড়ে ১১ হাজার হেক্টর জমি নিয়ে এক্সক্লুসিভ টুরিজম স্পট করা হচ্ছে৷ সেখানে বিদেশিদের জন্য থাকা-খাওয়াসহ সব ধরনের সুব্যবস্থা থাকবে৷ দেশীয় পর্যটকরাও সেখানে সব ধরনের সুযোগ পাবেন৷ নিরাপত্তার বিষয়টি সেখানে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে৷

আপনি বলছিলেন, ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই বর্ষকে ঘিরে আপনারা বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নিয়েছেন?

প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষণা করার পর গত ডিসেম্বরে কক্সবাজারে অর্থমন্ত্রী এর উদ্বোধন করেন৷ এর কিছুদিন আগে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা ঘটে যায়৷ দু’জন বিদেশি খুন হন৷ ফলে পরিস্থিতি একটু বদলে গেছে৷ আমরা টার্গেট করেছিলাম ৬ লাখ বিদেশি পর্যটককে আমরা আকর্ষণ করতে পারব৷ সেভাবেই আমরা একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলাম৷ কিন্তু এ বছর আমাদের টার্গেট পূরণ হচ্ছে না৷ আমরা যোগাযোগ অব্যহত রাখব৷ এই ক্যালেন্ডার ধরেই ২০১৭ ও ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা কাজ করব৷ এখন এই টার্গেট পূরণ না হলেও ভবিষ্যতে আমরা সফল হবো – এটাই আশা করছি৷

পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিদেশিদের জন্য কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা নেই৷ দেশীয় পর্যটকদের জন্যও একই অবস্থা৷ সরকার এ খাতে একেবারেই নজর দিচ্ছে না কেন?

সান্ধ্য বিনোদন বলতে যা বোঝায় সেটা অবশ্য আমাদের দেশে নেই৷ সন্ধ্যার পর পর্যটকদের জন্য আমরা আসলেই কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা রাখতে পারছি না৷ এটা আসলে তারা খুবই পছন্দ করে এবং এই খাতে তারা সবচেয়ে বেশি খরচও করে৷ আমাদের সামাজিক অবস্থা ও সামাজিক মূল্যবোধের কারণে আমরা সান্ধ্য বিনোদনের ব্যবস্থা করতে পারছি না৷ এতে অনেক বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট হচ্ছেন না৷ তবে কক্সবাজারে আমরা এক্সক্লুসিভ টুরিজম ভিলেজ করছি৷ সেখানে আমরা এসব ব্যবস্থা রাখতে পারব৷ পাশাপাশি এ সরকারের আমলেই পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে৷ তখন সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন বেড়ে যাবে৷ এ কারণে মংলায় একটা ফোর স্টার ও খুলনায় একটি ফাইভ স্টার হোটেল হচ্ছে৷ সিলেটও কিন্তু এক্সক্লুসিভ টুরিজমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷ ‘একটি কুঁড়ি ও দু’টি পাতার দেশ’ বলা হয় সিলেটকে৷ সিলেটের এই চা বাগানগুলো বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে সেখানেও একটি ফাইভ স্টার হোটেল তৈরি করা হচ্ছে৷ সব মিলিয়ে এখন ১২টি ফাইভ স্টার হোটেল আমাদের পাইপলাইনে আছে৷ এসব টুরিজম পয়েন্টগুলোতে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি৷ সামনে নিশ্চয়ই এর সুফল মিলবে৷

এই সেক্টরের যতটুকু অগ্রগতি তা গতানুগতিক৷ এ খাতের কোনো উত্তরণ চোখে পড়ে না৷ কক্সবাজারে কিছু হোটেল ছাড়া সরকার অন্য কোনো সুবিধা সৃষ্টি করতে পারেনি৷ বিদেশি বা দেশি পর্যটকদের জন্য বিনোদনের কী ব্যবস্থা আপনারা করেছেন?

পর্যটনকে ঘিরে সরকারের মাস্টারপ্ল্যান আছে৷ ২০০৫ সালে যে মাস্টারপ্ল্যান নেয়া হয়েছিল, সেটা ২০১৫ সালে শেষ হয়েছে৷ এ বছর আবার মাস্টারপ্ল্যান চেঞ্জ করা হচ্ছে৷ কুয়াকাটাকে ঘিরে নতুন মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে৷ গঙ্গামতি নামে কুয়াকাটায় একটা জায়গা আছে৷ সেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়৷ সেখানে হোটেল-মোটেলের পাশাপাশি শিশুদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে৷ এর পাশাপাশি কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি আছে৷ জেলা প্রশাসকদের তত্বাবধানে সেই কমিটিগুলো পরিচালিত হয়৷ এছাড়া কুয়াকাটা, কক্সবাজার, সিলেট ও উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বুদ্ধিষ্ট হেরিটেজ আছে৷ এগুলোও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে৷ কক্সবাজারে বীচ কার্ণিভাল হবে৷ এতে বিদেশিদের আকৃষ্ট করা যাবে৷ এছাড়া জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ৫ দশমিক ৭ ভাগ৷ নেট ২ দশমিক ১ ভাগ৷ ২০২১ সালে বাংলাদেশ যখন সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবে তখন এই পর্যটন খাত থেকে আসবে জিডিপির ৭ ভাগেরও বেশি৷ আর নেট ৪ ভাগ৷

পর্যটন খাত বিকাশে আপনার পরামর্শ কী?

আমরা ২০১০ সালেই প্রথাগত টুরিজম থেকে বের হয়ে ইকো টুরিজমসহ বিভিন্ন ধরনের টুরিজম ডেভেলপ করছি৷ বিশেষ করে তরুণ সমাজ অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করে৷ তাদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে৷ এভাবেই আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই৷ এমডিজি যেমন আমরা সফলভাবে শেষ করেছি, এসডিজি শুরু হয়েছে, এগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা সম্পর্কিত৷ আমাদের সংবিধানেই জীববৈচিত্র সংরক্ষণের কথা বলা আছে৷ সরকারও সেদিকে নজর দিয়েছে৷ ফলে সামনে পর্যটনের ভালো দিন আসছে৷ সৌজন্যে: ডয়চে ভেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *