সৌরভ মাহমুদ
পলকজুঁই, বেশ সুন্দর একটি নাম। যদিও এত দিন ঢাকার রমনা পার্কে গিয়ে প্রতি বসন্তে পলকজুঁই দেখার স্বাদ মেটাতে হতো। দেশের বহু বনজঙ্গল ঘুরেও দেখা পাইনি পলকজুঁইয়ের। গত মার্চের এক সকালে বরিশালের কাশিপুর এলাকায় পাখি দেখতে গিয়ে বন্য পরিবেশে জন্মানো অবস্থায় পলকজুঁইয়ের দেখা পাই। পরবর্তী সময়ে বরিশাল শহরে এবং শহর অদূরে রুইয়া, বকশির চর, চাঁদপাশা ও রহমতপুর এলাকার গ্রামে গিয়ে প্রাকৃতিক জঙ্গলে বেশ কিছু পলকজুঁইগাছের দেখা পেয়েছি। অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মা তাঁর ফুলগুলি যেন কথা গ্রন্থে এ গাছ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, এটি ভারতের প্রজাতি, বাংলাদেশে পত্রমেচী বৃক্ষবনেও থাকা সম্ভব।
এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফনা গ্রন্থে এ প্রজাতির বিস্তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় পাওয়া যায় এবং এর বসতি পাহাড়ি এলাকা। বাংলাদেশ ছাড়া এ গাছটি নেপাল, ভারতের আসাম ও সিকিম এবং ভুটানে আছে।
সমতলে এ বৃক্ষের উপস্থিতি সত্যিই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বরিশালের যেসব গ্রামে এ গাছটি পাওয়া গেছে, সেসব এলাকার গ্রামবাসী জানান, এটা জংলা গাছ, কেউ কেউ গুটিয়া গাছ বলে থাকেন। ফুল থেকে সুন্দর একটা ঘ্রাণ আসে। এ কারণে অনেকেই গাছটি কাটেন না। তা ছাড়া গবাদিপশুর অতিরিক্ত মূত্ররোগ হলে এ গাছের পাতা খাওয়ালে দ্রুত ভালো হয়ে যায়। তাই এ গাছটি যে এলাকায় বা বাড়িতে আছে, সে বাড়িতে বা এলাকায় মাঝেমধ্যে পাতা সংগ্রহের জন্য লোকজন ভিড় করেন। কোনো কোনো সময় পাতার আকাল পড়ে।
এটি ঝোপালো ও চিরসবুজ গাছ। প্রায় ৪ মিটার লম্বা হয়। গাছ অনেক ডালপালা ও পাতায় ভরা। পাতা ৮-১২ সেন্টিমিটার লম্বা, আয়তাকার, মসৃণ ও উজ্জ্বল সবুজ। পাতার বোঁটা বলতে নেই বা খুব খাটো। বসন্তের শুরুতেই সারা গাছ ভরে বড় বড় থোকায় ফুল আসে। ফুল সাদা ও সুগন্ধি। রঙ্গনের মতো থোকায় থোকায় ফোটে। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত গাছে ফুল থাকে। ফুলের দলনল ১ সেন্টিমিটার লম্বা, পাপড়ি চারটি। ফল ছোট, ৪-৫ মিলিমিটার চওড়া, গোলাকার, দ্বীখণ্ডক ও কালো। প্রতি ফলে দুটি বীজ থাকে। বীজ ছাড়াও গোড়ার শিকড় থেকে চার গজায়। কাণ্ড কাটিংয়ের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি ঘটে। এ গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Ixora undullata, পরিবার Rubiaceae। এ গাছের ফুলে প্রজাপতি, মৌমাছি, ভোমরা ও মধুপায়ী মৌটুসি পাখিরা বিচরণ করে।
গাছটি সংরক্ষণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানামতে, ঢাকার রমনা পার্কে কয়েকটি গাছ আছে। গাছটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। সূত্র : প্রথম আলো