Skip to content

পশুপাখির ডাক নকল করা পাখি

একটি কালো রঙের পাখি তারচেয়ে বড় আকারের পাখিকে তাড়িয়ে নিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে নাগালে পেলে ঠোকরও দিচ্ছে। পালিয়ে যাচ্ছে বড় পাখি। যেন পালাতে পারলেই বাঁচে। আগে আগে বড় পাখি পেছনে ছোট পাখি। এরকম দৃশ্য যারা দেখেছেন তারা অনেকেই হয়তো জানেন, ছোট পাখিটি হল ফিঙে আর বড় পাখিটি হল বাজ, চিল কিংবা কাক। ফিঙে শুধু সাহসী পাখিই নয়, প্রতারণা করতেও পটু। এমনই এক প্রজাতির ফিঙে রয়েছে আফ্রিকায়। এদের সম্পর্কে লিখেছেন- আশরাফুল আলম পিনটু

Finge

অনেকেই বলে থাকেন ফিঙে হল পাখির রাজা। বাস্তবিকই হয়তো তাই। যারা এ পাখিটির স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন বা নিজে দেখেছেন তারা জানেন দেখতে সাধারণ হলেও আসলে এরা সাধারণ নয়। নিরীহ তো নয়ই। হিংস্রতার দিকেও এ পাখিকে খাটো করে দেখা যাবে না। ছোট পাখিদের তো তটস্থ করে রাখেই, বড় পাখিরাও রেহাই পায় না। নিজের আকারের চেয়ে বড় যে পাখি শিকারি চিল কিংবা বাজ তাদেরও তাড়িয়ে বেড়ায়। তাই কোনো পাখিই সহজে ফিঙেদের ধারেকাছে ঘেঁষতে চায় না। সব সময়ই এড়িয়ে চলে। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে কালো রঙের প্রচুর ফিঙে দেখা যায়। হাইওয়ের বিলের পাশে ইলেকট্রিকের তারেও দু-তিনটি কিংবা সার বেঁধে বসে থাকতে দেখা যায় এদের। লম্বা লেজ ঝুলিয়ে বসে থাকে। ছোঁ মেরে শিকার ধরে আবার ফিরে আসে। তীর বেগে ছুটতে পারে এরা।

পৃথিবীর প্রায় সব জায়গাতেই ফিঙে দেখা যায়। আফ্রিকায় এক ধরনের ফিঙে আছে যাদের লেজ চামচের মতো তাই এদের চামচপুচ্ছ ফিঙে বলে। এরা বহু পাখির ডাক নকল করতে পারে। আর তাই আফ্রিকার ফিঙে সব সময়ই গবেষকদের আগ্রহের বিষয়। লম্বা লেজের কুচকুচে কালো এ পাখি যে কৌশল কাজে লাগিয়ে যেভাবে অন্যের খাবার চুরি করে তা দেখে বিজ্ঞানীরা বিস্মিত। ফিঙে নিয়ে অনেক গবেষণা চালিয়েছেন তারা। কালাহারি মরুভূমিতে পঞ্চাশটির বেশি চামচপুচ্ছ ফিঙের ওপর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে এ পাখির ‘মিথ্যে বলার কৌশল’ বা প্রতারণা করা সম্পর্কে বিশদ জানতে পেরেছেন।

গবেষকরা বলেছেন, মরুভূমিতে যে কোনো বিপদে-আপদে পশুপাখিদের মধ্যে ‘বিপদ সংকেত’ বিনিময় একটি সাধারণ নিয়ম। আগে থেকে সংকেত দিতে পারে বলে আফ্রিকার ফিঙের ওপর অন্য পাখি ও ছোট প্রাণীরা আস্থাও রাখে। আর এর সুযোগ নিয়েই মিথ্যে সংকেত দিয়ে ছোট পশুপাখিদের ভয় পাইয়ে দেয় ফিঙেরা। তারপর তাদের জোগাড় করা খাবার নিয়ে সটকে পড়ে। এভাবে অন্যের খাবার কৌশলে হাতিয়ে নেয় এরা। কাছাকাছি কোনো শিকারি পশু না থাকলেও ফিঙে এমনভাবে ডেকে ওঠে, যেন বিপদ একেবারে ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। সেই সংকেতে ভয় পেয়ে নির্ধারিত পাখি বা প্রাণীটি পালালেই তার খাবার নিজের দখলে নেয় ফিঙে। নিজের ডাকে কাজ না হলে অন্য প্রাণীর ডাক নকল করে আবার সংকেত দেয় সে। তার পরের পদ্ধতিও একই রকম। এভাবে যতক্ষণ না সে সফল হতে পারে ততক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

জীববিজ্ঞানীদের মতে, এ প্রজাতির ফিঙেরা এমনিতে সৎভাবেই খাবার সংগ্রহ করে। তাদের প্রধান শিকার বাতাসে উড়ে চলা ছোটখাটো পতঙ্গ। শুধু বিরূপ আবহাওয়ায় যখন পোকামাকড় খুঁজে পাওয়া কঠিন, তখনই অন্যের খাবারে নজর দেয় এরা। এ সময় একটি ফিঙে প্রতিদিন যে খাবার খায়, তার এক চতুর্থাংশই জোগাড় করে ‘মিথ্যে’ সংকেতের দিয়ে। এভাবে প্রতারণার করা ছাড়া তাদের বোধহয় উপায়ও থাকে না।

ফিঙেরা সাধারণত যে আকারের পতঙ্গ শিকার করে তার চেয়ে বড় আকারের খাবার- যেমন কাঁকড়াবিছে, গুবরে পোকা এমনকি বড় আকারের টিকটিকিও সে এই কৌশলে পেয়ে যায়। প্রাণিবিজ্ঞানীরা আফ্রিকার ফিঙেদের অভিনব এ কৌশল দেখে বলেছেন, মানুষের সমাজে এমন প্রতারণা ভালো চোখে দেখা হয় না, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল যখন ছোট্ট একটি পাখি ব্যবহার করে তখন চমৎকৃত না হয়ে পারা যায় না। কেবল কৌশলে নয়, আফ্রিকার ফিঙে সাহসেও অনন্য। আকারে চারগুণ বড় ঈগল বা বাজের সঙ্গেও তারা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে। যেন ভয়ডর বলে কিছুই নেই এদের। এছাড়া প্রতারণা করতে অন্তত ৫১ ধরনের পশুপাখির ডাক নকল করতে পারে আফ্রিকার ফিঙে। তবে কাউকে ধোঁকা দেয়ার সময় প্রথমে নিজেদের বিপদ সংকেতটিই ব্যবহার করে। সৌজন্যে : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *