Skip to content

পাখির নীড় নয় যেন পাখিবাংলো

Nest

সাঈদ আল হাসান শিমুল
পাখির নীড়- শব্দ দুটির প্রতি কবি সাহিত্যিকদের ভীষণ ঝোঁক। নানা গল্প কবিতা ও গানে পাখির নীড়ের কথা উঠে এসেছে। পাখির নীড়কে কবি জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেনের চোখের সঙ্গে উপমা করেছেন। তবে গাঁয়ের চঞ্চল ছেলেমেয়ের উপমার দিকে নয় পাখির বাসার উপরেই বেশি ঝোঁক রয়েছে। পাখিরা নিবিড় অধ্যবসায় ও শৈল্পিক কারুকাজে ছোট্ট বাসা গাছের মগডালে তৈরি করলেও তা তাদের চোখ এড়ায় না।

পাখির বাসার খোঁজে বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো দস্যি ছেলেদের যদি বলা হয় পাখি গাছের উপর ২২ ফুট লম্বা, ১৩ ফুট চওড়া একটি বাসা তৈরি করেছে- তাহলে অবাক চোখে তারা ভাবনায় পড়ে যাবে- ওটা কত বড় পাখির বাসা হতে পারে!

উটপাখির মতো বড় কোনো পাখির বাসা? কিন্তু না, যে পাখিরা এ বিশাল ‘পাখি নীড়’ তৈরি করেছে তাদের আকার বাবুইয়ের সমান। পাখিটির নাম সোসিয়েবল ওয়েভার, মানে আলাপী বাবুই।

এত বড় নীড় তৈরি করতে পারে বলেই তাদের এমন নাম। এদের নীড়কে ‘পাখিবাংলো’ বললে বেশি বলা হবে না।

পাখিটি লম্বায় মাত্র ১৪ সেন্টিমিটার। ওজনে ২৬ থেকে ৩০ গ্রাম। বাদামি রংয়ের পাখিটির চিবুক কালো ও ডানা দুটির নিচের অংশ ধূসর সাদা। লেজও বাদামি। অতিসামাজিক এ পাখির বাস দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চলে। উত্তর কেপ প্রদেশে ও দক্ষিণ নামিবিয়ায় এদের বেশি দেখা যায়।

মূলত কালাহারি মরুভূমিতে প্রায় সারা বছরেই এরা ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়ায়। এরা খুবই দলপ্রিয়। সোসিয়েবল ওয়েভারদের নীড় সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যাপার। একটি নীড়ের ওজন প্রায় এক হাজার কিলোগ্রাম হয়। আর এ নীড়ে থাকতে পারে ৪০০ থেকে ৫০০টি পাখি। এ নীড়গুলো প্রায় ১০০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পাখিরা উত্তরাধিকার সূত্রে বংশ পরম্পরায় নীড়গুলোতে অবস্থান করে।
সমস্যা হল কখনও নীড়গুলো অক্ষত থাকলেও অনেক সময় আশ্রয়দাতা গাছটি মরে যায়। কখনও নীড়ের ভারে গাছ ভেঙে পড়ে। সোসিয়েবল ওয়েভাররা প্রথম বাসাটি তাদের প্রজনন ঋতুতে তৈরি করে।

দূর থেকে বাসাটি দেখলে প্রথমে সবাই ভাববেন এটি নতুন প্রজাতির কোনো বৃক্ষ কিংবা কেউ দুষ্টুমি করে গাছের ডালে খড়কুটোর গাদা ঝুলিয়ে রেখেছে। এ বাসাগুলো দৈর্ঘ্যে কমপক্ষে ২২ ফুট ও প্রস্থে ১৩ ফুট হয়ে থাকে।

একটি বাসায় একশোর বেশি ছোট ছোট ঘর থাকে। একটি ঘরে একটি করে পরিবার বসবাস করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশের মরুভূমিতে দিনের তাপমাত্রা যেমন প্রচণ্ড বেশি, রাতে তার উল্টো। আর সোসিয়েবল ওয়েভাররা তাদের বিশাল আকারের বাসা এমনভাবে তৈরি করে যেন এটি দিনের গরম আর রাতের ঠাণ্ডা হতে রক্ষা করে। বাসার মাঝখানে থাকা ঘরগুলো বেশ উষ্ণ। যা রাতের হিমশীতল আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে। আর বাইরের ঘরগুলো তুলনামূলক একটু ঠাণ্ডা।

পাখিরা দিনের গরম থেকে রক্ষা পেতে সেই ঘরগুলোতে আশ্রয় নেয়। বাসার সব প্রকোষ্ঠে ঢোকার পথ নিচের দিকে। বাসার ভেতরে ঢোকার সুড়ঙ্গপথগুলো ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ৫ সেন্টিমিটার চওড়া হয়ে থাকে। পাখিরা বাসার ভেতরে কিছু গোলাকার কুঠুরি তৈরি করে। এসব গোলাকার কুঠুরির ব্যাস ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। পাখিগুলোর এ বিশালাকার বাসা তৈরি এক অনন্য প্রকৌশল। প্রথমে তারা বড় ডালপালায় পূর্ণ কোনো গাছকে বাসা তৈরির উপযুক্ত জায়গা হিসেবে বেছে নেয়। এরপর আড়াআড়ি ভূমির দিকে কৌণিকভাবে রয়েছে এমন ডালগুলোতে তারা কিছু শক্ত কাঠ স্থাপন করে। সেই কাঠগুলোকেই ভিত্তি করে প্রথমে বাসার ছাদ তৈরি করে। এরপর পুরো বাসার কাঠামো তৈরি করে চারপাশে তীক্ষ্ণ ধারালো বুনোঘাস দিয়ে ঢেকে ফেলে।

এটি করার অন্যতম কারণ এসব ধারালো ঘাস পেরিয়ে যেন কোনো শত্রু যেমন সাপ, বড় পাখি তাদের আক্রমণ করতে না পারে। এরপর তারা নিচের দিকে সুড়ঙ্গ তৈরি করে ও শ’খানেক কক্ষ তৈরি করে। এসব কক্ষ তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের তৃণ ও খড়কুটো ব্যবহার করে।

বুনন কাজ শেষে আরামের জন্য প্রতিটি কক্ষের ভেতরে নরম তুলো বা পশুর লোম বিছিয়ে দেয়। একটি চমৎকার বিষয় হল প্রতিবেশী হিসেবে সোসিয়েবল ওয়েভাররা খুবই ভাল। এ মিশুকে পাখির নীড়ের আশপাশেই অন্য জাতের আরও পাখি নীড় তৈরি করে থাকতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাই সোসিয়েবল ওয়েভারদের ‘পাখিবাংলো’র কাছে পিগমি ফ্যালকন, ফিঙ্গে, বারবেট, লাভবার্ডের মতো পাখিরা বাসা বাঁধে। যদিও তাদের তৈরি বাসা সোসিয়েবল ওয়েভারদের বাসার কাছে নেহায়েত ছোট ও সাধারণ। সৌজন্যে : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *