Skip to content

পানির নিচে আগ্নেয়গিরি

Valcano

রফিকুল আমীন খান
আগ্নেয়গিরি থাকবে, আর তার থেকে গরম লাভা উদগিরণের ব্যাপারটা থাকবে না, এমনটাও হয় নাকি আবার? কিন্তু না। এমন কিছু আগ্নেয়গিরি রয়েছে যেগুলো উদগিরণ করে, তবে লাভা নয়, মাটির তরল। আর এই আগ্নেয়গিরির অবস্থানটাও মাটির ওপরে নয়। পানির এক্কেবারে নিচে।

গভীর সমুদ্রের কালো অন্ধকারে পৃথিবীর বুকে লুকিয়ে রয়েছে অদ্ভুত সব আগ্নেয়গিরি। প্রকৃত অর্থে সেই আগ্নেয়গিরিগুলো জীবন্ত। যেগুলো কিনা কেবল মাটিই নয়, মাঝে মধ্যে উগরে দেয় মিথেন গ্যাসও!

পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো যতটা না অদ্ভুত, ঠিক তেমনি আরেক বা তার চেয়ে বেশি অদ্ভুত আরেকটি বিষয়বস্তু হচ্ছে এই আগ্নেয়গিরির ভেতরে বাস করা কীটগুলো। বছরের পর বছর যাদের কেটে যায় অন্ধকারে, পানির নিচে, সেই মিথেন গ্যাসের সঙ্গে! কিন্তু কী করে এভাবে এতশত বছর বেঁচে রয়েছে এরা এই আগ্নেয়গিরিগুলোর ভেতরে? আর কী করেই বা করে চলেছে বংশবৃদ্ধি? এত দিনের অজানা এই কীটগুলো দিনকে দিন যতটা বেশি মানুষের জানার কাছাকাছি আসছে, ততটাই বেশি বাড়িয়ে তুলছে মানুষের আগ্রহ।

জানা যায় আগ্নেয়গিরির গোলাকার মুখ আর প্রতি বছর প্রায় ২৭ মিলিয়ন টন মিথেন গ্যাস উদগিরণ করার কথা। আগ্নেয়গিরির উদগিরিত মিথেনকে প্রথমটায় মাটির নিচের তেলের সঞ্চয়াগারের চাপ থেকে উৎপন্ন বলে ধারণা করা হলেও পরবর্তী সময়ে পরীক্ষা করে দেখা যায় সেখানে কেবল মিথেন নয়, রয়েছে অন্য সব গ্যাসও। আর এই মিথেনটাও কিন্তু তেলের চাপে উৎপন্ন কিছু নয়। বরং কোনো এক ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা তৈরি এটি।

এইসব আগ্নেয়গিরির অতল গহ্বরের ভেতরেই রয়েছে ছোট ছোট কোনো কীট। যেটা কিনা সাহায্য করছে আগ্নেয়গিরিকে মিথেন উদগিরণ করতে!

আগ্নেয়গিরিগুলো সোডিয়াম বাইকার্বোনেটসহ বৃষ্টি আর তুষারের মিশ্রণের মতন দেখতে একরকমের তরল পদার্থও উদগিরণ করে।
আর সেই তরলকে ভালো করে দেখতে গিয়ে পাওয়া যায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু কীটকে। পানির নিচের খনিজের প্রচণ্ড চাপে এই কীটসহ আরো নানারকম পদার্থকে তরল অবস্থায় বাইরে বের করে দিতে বাধ্য হয় আগ্নেয়গিরিগুলো। আর দশটা সাধারণ আগ্নেয়গিরির মতন এই তরলও থাকে প্রচণ্ড গরম। কিন্তু সেটা কেবল ভেতরে থাকা অবধিই। বাইরে আসতে আসতেই পানির সংস্পর্শে একেবারে শীতল হয়ে পড়ে সেগুলো।

আর এভাবে শীতল অবস্থায় থাকা কিছু আগ্নেয়গিরির কীটকেই পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা। জানা যায় সাধারণত ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার লম্বাকৃতির এই কীটগুলো আরেকটি পানির নিচের কীটের সমগোত্রীয়। যাদের জন্ম এই মাটির নিচের অন্ধকারে। মৃত্যুও। কেবল অসাধারণ তাপমাত্রার বাড়া-কমা সহ্য করার মতাই নেই এদের, রয়েছে অনেক বেশি টিকে থাকার প্রবণতাও। এদের একটা দল যখন পানির শীতলতায় জমে যাওয়া পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকে, তেমনি অন্য দল তখন প্রচণ্ড গরমের ভেতরেও টিকে থাকে। এদের না আছে চোখ, না আছে খাবার হজম বা গ্রহণ করার জন্য পাকস্থলীও! মনে করা হয় গ্যাসকে নিজের ভেতরে নিয়েই জীবন নির্বাহ করে এরা।

সাধারণত সব সময় অন্ধকারে থাকাটাই অভ্যাস এদের। সেই সঙ্গে রয়েছে বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শ। তবে এ সব কিছুতেই কোনো সমস্যা বোধ করে না আগ্নেয়গিরির এই কীটেরা।

বিজ্ঞানীরা জানান, হয় এই কীটেরা মিথেন, অথবা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্রহণ করছে আর উৎপন্ন করছে ইলেকট্রন, যেটা কিনা সরবরাহ করছে শক্তি।

এমনিতে আগ্নেয়গিরির সবখানে বাস করলেও এই কীটেরা আগ্নেয়গিরির কিছু স্থানে অবস্থান করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এদের সাধারণ আকৃতি কম হলেও এরা জীবনের একটা সময় গিয়ে ২ মিটার অবধি লম্বা হয়। তবে সেটা ১৭৫ থেকে ২০০ বছর পর। তবে এই পুরো গবেষণাটিতে আশ্চর্য হয়ে ল করেন বিজ্ঞানীরা যে, নতুন সব আগ্নেয়গিরিতে ততটা কীট থাকে না। যতটা না থাকে পুরনোগুলোতে। আর একেবারে আনকোরাগুলোর ভেতরে তো কীট থাকেই না বলতে গেলে। কী করে হয় এটা? মনে করা হয় কম মিথেন গ্যাসই এটার জন্য বেশি দায়ী।

দিনের পর দিন আর্কটিকে বাড়তে থাকা গরমের কারণে ধারণা করা হচ্ছে ক্রমেই কমে যাচ্ছে এই মাটির আগ্নেয়গিরি আর এর ভেতরে বসবাসরত কীটগুলোর সংখ্যা। যেদিকে সত্যিই নজর দেয়া জরুরি। সে চেষ্টাই অবিরতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সৌজন্যে : নয়া দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *