Skip to content

পান্না-সবুজ জলের লালাখাল

Lalakhal2

পান্না-সবুজ জলের লালাখাল

 শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট
আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল পাহাড়। পাহাড়ের কোলে দোল খাচ্ছে মেঘরাশি। কোথাও কোথাও পাহাড়ের বুক চিরে নেমে এসেছে ফেনিল সফেদ ঝরনাধারা। সেই ঝরনাধারা মিশেছে স্বচ্ছ জলের নদীতে। জল-পাহাড় আর সমতলের এই অপূর্ব মিশেলের দেখা মেলে কেবল সিলেটেই। তাই সারা বছরই সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সরব থাকে পর্যটকদের পদচারণায়। শীত এলে বেড়ে যায় পর্যটকদের সংখ্যা। দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঢল নামে পর্যটকদের।

বর্ষা মৌসুমে বিছানাকান্দি, পাংথুমাই, লোভাছড়া ও ভোলাগঞ্জের প্রতি দর্শকদের টান থাকে বেশি। শীতকালে নদী ও ঝরনার পানি কমে যাওয়ায় পর্যটকদের স্রোত থাকে জাফলং এবং লালাখালের পথে। পর্যটন স্থান হিসেবে জাফলং সারা দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে পরিচিত। জাফলংয়ের পাশেই সৌন্দর্যের আরেক আধার লালাখাল এতদিন ছিল পর্যটকদের দৃষ্টির বাইরে। গত কয়েক বছর থেকে পর্যটকদের কাছে সিলেটের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই লালাখাল। লালাখাল না দেখলে সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখা যেন রয়ে যায় অসম্পূর্ণ। শীতের কোনো এক সকালে বা পড়ন্ত বিকালে ঘুরে আসতে পারেন লালাখাল নামের এই এক টুকরো প্রকৃতিতে।

কি আছে লালাখালে
লালাখাল নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে লালপানির খাল বা নদী। কিন্তু লালাখাল গেলে চোখ কপালে উঠতে পারে যে কোনো পর্যটকের। এ তো লাল নয়, শান্ত নদী দিয়ে বয়ে চলছে পান্না-সবুজ জল। এমন সবুজ জলের নদী দেশের অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। স্বচ্ছ জলে যেন প্রতিফলিত হচ্ছে প্রকৃতির রূপ। মাঝে মাঝে নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে লাল-হলুদ টিলা। ভারতের চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা এই নদীর পানি সারা বছরই সবুজাভ থাকে। শীতে ধারণ করে গাঢ় সবুজ বর্ণ। নদীর উভয়পাশে টিলার ওপর সারি সারি গাছপালা। দূরদৃষ্টি আটকে দেয় ভারতের মেঘালয়ের আকাশছোঁয়া পাহাড়। নদী পার হয়ে পূর্বপাড়ে গেলে দেখা মিলবে বিস্তীর্ণ চা বাগান। রয়েছে চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা। ঘুরতে পারেন চা বাগানের ভাঁজে ভাঁজে। লালাখালে নৌকাভাড়া করে যাওয়া যাবে একদম ভারতের সীমানা পর্যন্ত। যেতে যেতে চোখে পড়বে নদী থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের বালু উত্তোলনের দৃশ্য। লালাখালের শান্ত-শীতল পানি আর নদী ঘিরে দুইপাড়ের মানুষের কর্মব্যস্ততার চিত্র ভুলিয়ে দেবে আপনার সারা দিনের ভ্রমণ ক্লান্তি। সব মিলিয়ে লালাখালকে মনে হবে ‘হেভেন অন আর্থ’।

Lalakhalলালাখালের পাশেই রয়েছে নাজিমগড় রিসোর্ট। নিপুণ শৈলীর এই রিসোর্টে রয়েছে ক্যাম্প ফায়ার, বারবিকিউ আর জ্যোৎস্না যাপনের জন্য নির্মিত টেন্ট সাইড। বন-পাহাড়-নদীর লালাখালের রাতের সৌন্দর্য দেখতে একরাত কাটিয়ে আসতে পারেন এই রিসোর্টে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে সিলেট আসতে পারেন। সিলেট থেকে মাইক্রোবাস বা সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে যাওয়া যাবে লালাখালে। যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাস ভাড়া পড়বে ২৭০০-৩০০০ টাকা। সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাড়া পাওয়া যাবে ১২০০-১৫০০ টাকায়। এ ছাড়া সিলেট কদমতলী টার্মিনাল থেকেও বাসে যাওয়া যাবে। বাসে গেলে নামতে হবে সারি ঘাট। সেখান থেকে নৌকায় যাওয়া যাবে লালাখাল। বাস ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা।

লালাখাল গিয়ে নদীতে নৌকা ভ্রমণে গেলে ঘণ্টা প্রতি নৌকা ভাড়া পড়বে ৪০০-৬০০ টাকা। সাধারণত শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় পর্যটকদের ভিড় থাকে লালাখালে। তাই এ দুই দিন নৌকাভাড়া একটু বেশি থাকে।

কোথায় থাকবেন
লালাখালে রয়েছে নাজিমগড় রিসোর্ট। ব্যয়বহুল এ রিসোর্ট ছাড়া আশপাশে আর থাকার কোনো জায়গা নেই। স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে হলে আপনাকে ফিরে আসতে হবে সিলেট শহরে।

Lalakhal3কোথায় খাবেন
খাওয়ার জন্য লালাখালে ভালোমানের কোনো রেস্টুরেন্ট নেই। তাই দীর্ঘ সময়ের জন্য বেড়াতে গেলে সিলেট শহর থেকে খাবার সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই ভালো। অথবা লালাখাল ঘুরে সিলেট শহরে এসে সারা যাবে খাওয়া-দাওয়া পর্ব।

আশপাশের দর্শনীয় স্থান
লালাখাল যাওয়ার পথে গাড়ি থামিয়ে রাস্তার এপাশ-ওপাশ ঢুঁ মারলে দেখা যাবে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান, খাদিম চা বাগান, হজরত শাহপরানের (রহ.) মাজার ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড। এছাড়া লালাখাল থেকে সামনের দিকে অগ্রসর হলে ঘুরে আসা যাবে জৈন্তিয়া রাজবাড়ি, প্রাচীন মেগালিথিক পাথর, সাইট্রাস গবেষণা কেন্দ্র, খাসিয়া পল্লী, তামাবিল জিরো পয়েন্ট, শ্রীপুর পার্ক, গ্রিন পার্ক ও প্রকৃতি কন্যা জাফলং।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *