সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ লন্ডন
ঠিক যেন এক স্বপ্নের কাহিনী। যেন এক লর্ড অব দ্য রিং- কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কাররা কাজ করছিলেন, পুরনো ভবন একেবারে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন কিছু স্থাপনা করার জন্যে। তাদের কারো কোনো ধারনাই ছিলো না। তাদের ঠিক পায়ের নিচে হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার নগরী পড়ে আছে। ইঞ্জিনিয়ার যারা কাজ তদারকী করছিলেন, স্থানীয় কাউন্সিল যারা অনুমোদন করেছিলেন, তাদেরও কোনো ধারনা ছিলো না। এখানে ঠিক তাদের পায়ের নিচেই বিশাল এক শহর।
হ্যাঁ- এ কোনো রূপকথার গল্প নয়। নয় কোন ঠাকুর মার ঝুলি। বাস্তবে তাই হয়েছে তুরস্কের কাপাডোসিয়াতে। ওয়ার্কাররা যখন মাটি খুড়ছিলেন, তখনই তাদের চোখের সামনে ভেসে উঠলো সিনেমার রূপালী পর্দার মতো এক পরিপাটি বিশাল আকারের সুড়ঙ্গের পথ। এতো সুন্দর পরিপাটি করে থরে থরে সাজানো- যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।
তারা তখন সেই সুড়ঙ্গ পথে হেটে হেটে আরো অবাক হয়ে যান। সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে সুন্দর করে সাজানো বিশাল এক শহর। যেন তারা যে শহরের উপরে থেকে সুড়ঙ্গের সন্ধান পেয়েছেন, তার দ্বিগুণ আকারের আরো এক শহর মাটির নিচে।
তুরস্কের সিটি অব নেভসেহিরের নেট ওয়ার্ক ট্যানেলের নিচে এই শহর প্রায় পাঁচ হাজার বছরের আগের পুরনো সভ্যতার নিদর্শন বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে (১৯৬৩) ডেরিনকোতে এক ব্যক্তি তার ঘরের মেঝের ওয়াল সন্দেহবশত খুড়তে গিয়ে পুরনো ১৮ তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্স আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু আজকের এই মাটির নীচের শহর ডেরিনকোর কমপ্লেক্সের দ্বিগুণেরও বড় বলে তারা জানিয়েছেন।
বায়জান্টাইন সময়ে মুসলিম ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজন যুদ্ধ বিগ্রহের সময় শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য মাটির নিচের সুড়ঙ্গ দিয়ে এই সব শহরে আত্মগোপন করতেন বলে প্রচলিত আছে। আর্কিলোজিস্টরা এই শহরটিকে সেরকমই মনে করছেন। তারপরেও নিশ্চিত করে বলছেন না। এ নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করছেন।
নেভসেহিরের মেয়র হাসান আনভার ন্যশনাল জওগ্রাফিকে বলেছেন, প্রাক্তন ডেরিনকোর লোকজন লোহার দরজা ব্যবহার করতেন। কিন্তু এই নতুন আবিষ্কৃত পাতাল শহরে পার্ল, ডায়মন্ড এবং গোল্ড দিয়ে মোড়ানো সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। কাপাডোসিয়াতে যখন এই পাতাল শহরের সন্ধান মিলে তখন এই কাপাডোসিয়ার অবস্থান নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়ে যায় পুরোপুরি।
এর আগে ২০১২ সালে যখন প্রাথমিকভাবে এর সন্ধান মিলেছিলো। তখনি ধারনা করা হয়েছিলো ডেরিনকো শহরের চাইতে এটা তিনভাগের এক ভাগ হবে, কিন্তু এখন সেটা সেই ধারণার চাইতেও আরো বড়।
বর্তমানে সরকার আর্কিওলজিক্যাল অনুসন্ধানের জন্য পরিকল্পনা করেছেন।
(ন্যাশনাল জিওগ্রাফি অবলম্বনে)