Skip to content

পাহাড় ডিঙিয়ে তায়েফ

গাজী মুনছুর আজিজ
দুই পাশে বড় বড় পাহাড়। তার মাঝ দিয়ে পাহাড় ঘেঁষা আঁকাবাঁকা পথ। সে পথ দিয়েই এগিয়ে চলছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি। এগিয়ে চলছে বলতে উপরের দিকে উঠছে। সে কারণে গাড়ির ভেতরে নিঃশ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। কানেও কিছুটা কম শোনা যাচ্ছে। বমি বমি ভাবও আসছে। হয়তো হঠাৎ করে অনেক ওপরে উঠার কারণে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু যখন গাড়ির কাচের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি অনেক ওপরে আমরা, আর নিচে রাস্তাগুলো অনেকটা অজগর সাপেরমতো প্যাঁচানো। তখন এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চার মনে হল, এক ধরনের ভালোলাগাও বটে। আর ভালোলাগার এ যাত্রাটি ছিল মক্কা থেকে তায়েফের উদ্দেশে। যাত্রার সঙ্গী বন্ধু রাজু।

কয়েকদিন হল মক্কায় এসেছি ওমরাহ করার জন্য। হজ সম্পন্নও করেছি। ঠিক করলাম একদিন তায়েফে যাব। তাই এক সকালে দুই জন গাজ্জার সেবা আমির থেকে ট্যাক্সিতে উঠলাম। আমরা ছাড়াও যাত্রী ছিল আরও একজন।

Tayef

মক্কা নগরী পার হওয়ার পরই শুরু হল তায়েফের রাস্তা। রাস্তাগুলো পাহাড়ের পাড় ঘেঁষে তৈরি করা। সে জন্য রাস্তার বামপাশে পাহাড় আর ডানপাশে খাদ। একটু এদিক-সেদিক হলেই গাড়ি সোজা কয়েক হাজার ফুট নিচে। পাহাড়ের সেই পাদদেশে তাকালেও ভয় লাগে। শুধু পাহাড় ঘেঁষে রাস্তাই নয়, এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় যেতে উড়াল সেতুও আছে। আর রাস্তাও দুটি। একটি যাওয়ার, অন্যটি আসার। পাহাড় ঘেঁষে প্যাঁচানো বলে এ রাস্তার নাম- রিং রোড।

চোখে পড়ল পাহাড়ের কোলে তৈরি চমৎকার সব স্থাপনা রিসোর্ট, পার্ক আর অবকাশ যাপন কেন্দ্র। কিন্তু মানুষজন তেমন দেখলাম না। হয়তো এখন পর্যটনের ঋতু নয়, তাই। দেখলাম অনেক ক্যাবল কার। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে যেতে স্থানীয়রা এ ক্যাবল কার ব্যবহার করেন। এছাড়া বেড়াতে আসা পর্যটকরাও এ ক্যাবলকারে চড়ে আনন্দ পান। ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে রাসূল (সা.) মক্কা থেকে এ পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটেই তায়েফ এসেছিলেন ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে।

প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা পর গাড়ি এসে থামল তায়েফ নগরীতে। ভাড়া দিলাম প্রতিজন ২০ রিয়াল করে। চালক জানাল মক্কা থেকে তায়েফ নগরের দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। এর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬ হাজার ফুট। আর পুরো শহরটিই যেনো গড়ে উঠেছে পাহাড়ের ওপর। জানা যায়, এ শহরেই ইসলাম প্রচার করতে এসে রাসূল (সা.) প্রায় ১০ দিন অবস্থান করেছিলেন। তারপর ফিরে গেছেন শহরবাসীর নানা নির্যাতন সহ্য করে। এ শহরেই এক ইহুদি বুড়ি রাসূলের (সা.) রাস্তায় কাঁটা বিছিয়ে রাখতেন তাকে কষ্ট দেয়ার জন্য। বুড়ির সে বাড়ির চিহ্ন এখনও আছে। যেখানে ইহুদিরা রাসূলকে (সা.) রক্তাক্ত করেছিল সে চিহ্ন আজও আছে এ শহরে।

Tayef2

চমৎকার সাজানো-গোছানো শহর। শহড়জুড়েই রয়েছে নানা ভাস্কর্য। আমরা গাড়ি থেকে নেমে প্রথমে এলাম আল আকসা নামের প্রাচীন এক মসজিদে। মসজিদটি বিশাল। এ মসজিদের পাশে আরও একটি প্রাচীন মসজিদ দেখলাম। তারপর কিছুক্ষণ ঘুরলাম শহরে। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা তাই আশ্রয় নিলাম বাসস্ট্যান্ডে। দুই জন দুই কাপ চা নিয়ে চেয়ারে বসলাম। চা শেষ করতে না করতেই জেদ্দা থেকে রাজুর মামা আবদুল আজিজের ফোন এলো। তিনি আমাদের জেদ্দা যেতে বলেছেন।
তখনও বৃষ্টি ঝরছে। জানা গেলে সৌদি আরবের অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে তায়েফে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। আমরা চা শেষ করে জেদ্দার ট্র্যাক্সিতে উঠলাম। ভাড়া জনপ্রতি ৬০ রিয়াল। তবে মক্কা থেকে তায়েফ যে রাস্তায় এসেছি, জেদ্দায় ফিরছি অন্য রাস্তা দিয়ে। ফিরতে ফিরতেই এক ধরনের তৃপ্তি অনুভব করলাম তায়েফ দেখার জন্য। যে শহর একই সঙ্গে ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দের্যের লীলাভূমি। ছবি : লেখক
সূত্র : যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *