Skip to content

পেয়ারায় হাসি

শিরিনা আফরোজ
পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার পেয়ারার পরিচিতি দেশজুড়ে। সুমিষ্ট এ পেয়ারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। এবারের মৌসুমে পেয়ারার ফলন বেশ ভালো। স্থানীয় কৃষকদের দীর্ঘদিনের দাবি, সেখানে যেন হিমাগার গড়ে তোলা হয়। তাহলে পেয়ারা সংরক্ষণ করে তারা ভালো আয় করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শ্রাবণের এ সময়ে পেয়ারার ভরা মৌসুম। পুষ্টিমানের দিক থেকে একটি পেয়ারা চারটি আপেলের সমান বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। এলাকার শত শত পেয়ারাচাষি পরিবার ও ব্যবসায়ীরা বংশ পরম্পরায় এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এ এলাকার অন্তত ৫০টি গ্রামে বর্তমানে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়ন, সমুদয়কাঠি, জলাবাড়ীসহ তিন ইউনিয়নে এক হাজার ৩৪৫টি পরিবার পেয়ারা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এ উপজেলায় কাঠের ব্যবসার পর পেয়ারা চাষকে আয়-রোজগারের দ্বিতীয় উপায় মনে করা হয়। প্রতিবছর এ মৌসুমে ইউনিয়নের বিভিন্ন শাখা খাল ও খাল তীরবর্তী স্থান ব্যবসায়ী, আড়তদার, পাইকারদের ট্রলার ও চাষিদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে।

Guava

এ এলাকায় প্রতিবছর ১০-১২ হাজার মেট্রিক টন পেয়ারা বিক্রি করে ৮-৯ কোটি টাকা উপার্জন হয়। এ তথ্য জানিয়েছে স্থানীয় পেয়ারাচাষিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ পেয়ারা সংরক্ষণ, বিপণন, পরিবহন সংকটের কারণে ভালো ফলন হলেও কৃষকরা এর ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে হিমাগার গড়ে তোলা হলে এর সুফল পাবে তারা। আষাঢ় থেকে শুরু করে ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত চলে পেয়ারা মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে পেয়ারার দাম ভালো থাকলেও শ্রাবণের শেষ সময়ে এসে এর দাম অনেক কমে যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্বরূপকাঠি উপজেলায় ৬৪৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে আটঘর কুড়িয়ানাতেই রয়েছে ৫২২ হেক্টর বাগান। প্রতি হেক্টর জমিতে ৮-৯ টন পেয়ারা ফলে। উপজেলায় দুই হাজার ২৫টি পেয়ারা বাগান রয়েছে। স্থানীয় পেয়ারাচাষি মো. মোস্তফা কামাল জানান, তাঁর কয়েকটি বড় পেয়ারার বাগান রয়েছে। আষাঢ়ের প্রথমে তিনি প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি করেছেন ৭০০ টাকা পর্যন্ত। তবে শ্রাবণে এসে এর দাম অনেক কমে গেছে। গত শুক্রবার আটঘরের পেয়ারা হাটে ২০ মণ পেয়ারা এনে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন তিনি। শ্রাবণের শেষে গিয়ে এর দাম ৩০-৪০ টাকা মণে নেমে আসে। পেয়ারা দিয়ে উৎকৃষ্টমানের জেলি তৈরি সম্ভব হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোনো শিল্প গড়ে ওঠেনি।

উপজেলার কুড়িয়ানার ইউপি চেয়ারম্যান শেখর কুমার সিকদার বলেন, এলাকার অর্ধশত গ্রামের চাষিরা যুগ যুগ ধরে পেয়ারার চাষ করে আসছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও উদ্যোক্তার অভাবে হিমাগারসহ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা নির্মিত হচ্ছে না।

কুড়িয়ানার পেয়ারাচাষি বিশ্বজিৎ চৌধুরী মনে করেন, বড় আকারের পেয়ারা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে এনজিও ফোরামের সভাপতি জিয়াউল আহসান বলেন, বহুবার সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের একটি হিমাগার ও জ্যাম-জেলি প্রস্তুত কারখানার প্রস্তাব দিলেও তাতে লাভ হয়নি।

কৃষিবিদ জগৎপ্রিয় দাস বিশু জানান, বিভিন্ন সময়ে আসা গবেষকরা উন্নত পেয়ারা চাষের বিষয়ে সচেতন করায় আগের চেয়ে ফলন বেড়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে চাষিরা আরো মুনাফা অর্জন করতে পারত।

এ ব্যাপারে বিসিক কর্মকর্তা গোবিন্দ চন্দ সরকার বলেন, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এখানে একটি হিমাগার ও জ্যাম-জেলি প্রস্তুত কারখানা স্থাপন করা যেতে পারে।

স্বরূপকাঠি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রিফাত সিকদার জানান, সরকার স্বরূপাঠিতে দুটি কৃষিপণ্য বিপণন কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী বছরই এর কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি আতাউর রহমান আলম বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ পেয়ারা বাঁচাতে এখনই একটি হিমাগার ও জ্যাম-জেলি প্রস্তুতকারী কারখানা গড়ে তোলা দরকার। অন্যথায় বেশি দিন এ অঞ্চলের মানুষ এ পেশায় টিকে থাকতে পারবে না। সূত্র : কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *