বিভিন্ন প্রাণী ও ইকোসিস্টেমের মধ্যে সম্পর্কের কারণে প্রকৃতিতে ভারসাম্য বজায় থাকে। আজকের ফিচারে থাকছে এমন কয়েকটি উদাহরণ।
দু’জনেরই লাভ
ছবিতে হাঙরের নীচে চারটি ছোট্ট মাছ দেখতে পাচ্ছেন? নাম রেমোরা। তারা হাঙরের শরীরে থাকা খাবারের উচ্ছিষ্ট খায়। হাঙর খাবার খাওয়ার পর সেই উচ্ছিষ্টগুলো তৈরি হয় যা তার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে হাঙরের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার বিনিময়ে রেমোরারা হাঙরের শরীরে চেপে অনেকদূর যায়। এমনিতে রেমোরার শরীরে অন্য মাছের মতো ‘সুইম ব্লাডার’ না থাকায় চলাফেরা করতে একটু সমস্যাই হয়। নিচে দেখুন ভিডিওতে।
https://youtu.be/ByEe2G5lfzk
খাবারের বিনিময়ে নিরাপত্তা
ছোট্ট যে পাখিটি দেখতে পাচ্ছেন তার নাম অক্সপেকার। মহিষের সঙ্গে থেকে সে মহিষের শরীরে থাকা খুশকি সহ অন্যান্য ময়লা পরিষ্কার করে, এমনকি কানের ময়লাও৷ তাতে অক্সপেকারের লাভ? অমন বড় মহিষের সঙ্গে থাকলে কার সাধ্য তার বিনষ্ট সাধন করে! অক্সপেকারের বাস সাব-সাহারা আফ্রিকায়।
সিমবায়োসিস সম্পর্ক
দেয়াল, পাথর বা গাছের গুঁড়িতে শৈবালের মতো দেখতে এই ছত্রাকটি অনেকে হয়ত দেখেছেন। এর নাম লিচেন। শেওলা আর ব্যাঙের ছাতার মধ্যে সিমবায়োসিস (পারস্পরিক সুবিধা দিয়ে ও নিয়ে বেঁচে থাকা) সম্পর্কের মাধ্যমে এটির জন্ম হয়। শেওলা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে, আর ব্যাঙের ছাতা পরিবেশ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে শেওলাকে বাঁচিয়ে রাখে। ফলে লিচেন বেশ রোগ প্রতিরোধী ও বিভিন্ন ইকোসিস্টেমে বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে তার।
পরাগায়নে সহায়তা
ছবিটি বেশ পরিচিত। ফুলের উপর বসে আছে প্রজাপতি। সে মধু সংগ্রহ করছে। তা করতে গিয়ে প্রজাপতির শরীরে ফুলের পরাগরেণু লেগে যায়। এরপর প্রজাপতিটি যখন আরেকটি ফুলে গিয়ে বসে তখন তার শরীরে লেগে থাকা পরাগরেণু নতুন ফুলে গিয়ে পড়ে। এভাবে পরাগায়ন হয়ে থাকে।
সাহারার ধূলা খেয়ে বেঁচে থাকে অ্যামাজন
প্রথমে ছবিটি একটু বর্ণনা করা দরকার। উপগ্রহ থেকে পাওয়া এই ছবিতে সাগরের পানির উপর ধূলার উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন? হ্যাঁ এই ধূলা সাহারা মরভূমির ধূলা। সেগুলো বাতাসে ভেসে যাচ্ছে অ্যামাজন অরণ্যের দিকে। এই ধূলা খেয়েই বেঁচে আছে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ বলে পরিচিত অ্যামাজন।
এখানেও লেনদেন
ছবিটি ‘হার্মিট ক্র্যাব’-এর। বাংলায় যাকে অনেকে সন্ন্যাসী কাঁকড়া বলে থাকেন। তারা তাদের সম্পদ লুকাতে ও শিকারের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তাদের খোসায় ‘অ্যানেমোনি’ নামের একপ্রকার সামুদ্রিক প্রাণীকে থাকতে দেয়। বিনিময়ে অ্যানেমোনি ওই কাঁকড়ার ফেলে দেয়া খাবার থেকে উপকৃত হয়।
ক্লাউনফিশ
হ্যাঁ৷ নিমো। অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘ফাইন্ডিং নিমো’-র নিমো চরিত্রটি আসলে একটি ক্লাউনফিশ। তারাও অ্যানেমোনির মধ্যে বাস করে। বিষাক্ত অ্যানেমোনি ক্লাউনফিশকে শিকারির হাত থেকে রক্ষা করে। বিনিময়ে ক্লাউনফিশ অন্য মাছদের প্রলোভন দেখিয়ে অ্যানেমোনিদের কাছে নিয়ে আসে।
শেওলা থেকে পুষ্টি
মধ্য ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় দেখা পাওয়া এই প্রাণীটির নাম স্লোথ। তারা সাধারণত পাতা খায়৷ কিন্তু সেখান থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না তারা। এই অভাব মেটাতে তারা নিজেদের লোমে থাকা শেওলা খায়৷ আর শেওলা স্লোথের শরীরে বাস করা গুবরে পোকাসহ অন্যান্য পোকার মল খেয়ে বেঁচে থাকে। সৌজন্যে : ডয়চে ভেলে