ক্যালিফর্নিয়ার ‘টমাস ফায়ার’ এক সর্বনাশী, সর্বগ্রাসী দাবানল ছাড়া আর কিছু নয়৷ ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা ছবিগুলো দেখলে কিন্তু রবীন্দ্রনাথের ‘রাজা’ নাটকের সেই অন্ধকারের রাজার ভয়ানক, ভয়াবহ মূর্তির কথা মনে পড়ে যায়৷
দু’সপ্তাহ লড়াই-এর পর মাত্র ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে
দমকলকর্মীরা অবশেষে কিছুটা প্রগতি করতে পেরেছেন৷ কিন্তু দাবানল এখন শুকনো ঝোপঝাড়ের ভিতর দিয়ে পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে৷
বিপুল ক্ষয়ক্ষতি
দাবানল শুরু হয় ডিসেম্বরের চার তারিখে৷ আগুনে এ পর্যন্ত ৯২০টি বাড়ি বিনষ্ট হয়েছে, তার মধ্যে ৭০০টি বসতবাড়ি৷ সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ মানুষকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে – ফলে এই টমাস ফায়ার এখন ক্যালিফর্নিয়ার ইতিহাসে পঞ্চম বৃহত্তম দাবানল৷
ক্যালিফর্নিয়ায় দাবানল নতুন কিছু নয়
১৯৩২ সাল থেকে প্রদেশটিতে দাবানলের হিসেব রাখা হচ্ছে, কিন্তু চলতি শতাব্দীতেই যেন তার প্রকোপ বেড়েছে৷ ২০১২ সালের ‘রাশ ফায়ার’ ছিল বৃহত্তম; ১,২৭৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে সেই অগ্নিকাণ্ড চলে৷ ২০০৩ সালের ‘সেডার ফায়ার’-এ ১,১৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা ধ্বংস হয়৷ মানুষের অসাবধানতা থেকে শুরু দাবানলগুলির মধ্যে এই সেডার ফায়ার ছিল বৃহত্তম৷ চলতি টমাস ফায়ারের গ্রাসে পড়েছে মোট ৯৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা৷
দাবানলের পক্ষে আদর্শ আবহাওয়া
নিদারুণ খরা আর তথাকথিত স্যান্টা অ্যানা বাতাসের দরুণ দক্ষিণ ক্যালিফর্নিয়ায় এবার দাবানলের প্রকোপ এতো বেশি, বলছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা৷ উপকূল অঞ্চলে এ বছর অনাবৃষ্টি চরমে পৌঁছেছে৷
আগুন কীভাবে শুরু হল
টমাস ফায়ার নাম দেওয়া হয়েছে এই দাবানল যেখানে শুরু হয়, সেই টমাস অ্যাকুইনাস কলেজের নামে৷ কলেজ ক্যাম্পাসটি স্যান্টা পলা শহরের উত্তরে অবস্থিত৷ গোড়ায় কিছু ঝোপঝাড়ে আগুন লেগেছিল৷ পরে তা ভীষণ আকৃতি ধারণ করে পশ্চিমের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে৷
বাতাসে দম নেওয়া ভার
আগুনের ফলে বাতাস ধোঁয়া আর মিহি ছাই-এ ভরে গিয়েছে – কর্তৃপক্ষ তাই অনেক জায়গায় দূষিত বাতাস সম্পর্কে সাবধান করে দিচ্ছেন৷ স্থানীয় লোকজনদের ঘরের ভিতরে থাকার, দাবানল এলাকায় গাড়ি না চালানোর ও প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সন্ধ্যার পর সাগরের ভেজা বাতাস ধোঁয়াকে ঠেলে ডাঙার দিকে নিয়ে আসছে৷
ব্যাপক ত্রাণ
ক্যালিফর্নিয়ার দমকলকর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য রাজ্যের দমকল বিভাগের সাহায্য পাচ্ছেন৷ শুধুমাত্র অরেগন থেকে দমকলকর্মীদের ১০টি দল এসেছে৷ এছাড়া অ্যারিজোনা, ওয়াশিংটন, আইড্যাহো, মন্টানা, নিউ মেক্সিকো, নেভাডা, কলোরাডো ও উটা থেকে আসা দমকলকর্মীরাও অকুস্থলে দাবানলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত৷ সৌজন্যে : ডয়েচেভেলে