Skip to content

প্রকৃতির বিছানা বিছানাকান্দি

শওকত আলী রতন
বাংলাদেশের সীমান্তে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠাণ্ডা পানির প্রবল স্রোত থরে থরে সাজানো পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলে। ঠিক যেন একটি পাথুরে নদী।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বপ্রথম আপনাকে প্রকৃতির অপরূপ হাতে সাজানো সিলেট শহরে আসতে হবে। সিলেট শহরে টুরিস্টদের থাকার জন্য অনেক হোটেল রয়েছে। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত রুম ভাড়া পাওয়া যায়। নিরাপত্তাও ভালো। দরগা গেটে কয়েকটি ভালো হোটেল আছে। বিছানাকান্দি যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে।

Bichanakandiসিএনজি হাদারঘাট পর্যন্ত রিজার্ভ করে গেলে ভালো হয়। পাঁচজন মিলে ৪০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেয়া হয়। তবে মানুষ কম থাকলে ৮০ টাকা জনপ্রতিও যাওয়া যায়। বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তা অনেক সুন্দর। চার পাশে শুধু সবুজ চা বাগান। নীল আকাশ আর সবুজ কার্পেটের ওপর যেন তাঁবু টানিয়েছে। বিমানবন্দর থেকে সালুটিকর রাস্তা চরম খারাপ। পিচঢালা কালো রাজপথে একটু পরপরই ভাঙা গর্ত। মনে হয় একটু আগেই যেন এ পথে গডজিলা হেঁটে গেছে। ভারী বালুর ট্রাকগুলো রাস্তার এ দশা করেছে।

খারাপ রাস্তা পার হয়েই আপনি একদম গ্রামের ভেতর ঢুকে যাবেন। সিলেটের গ্রামগুলো যেমন সবুজ বৃষ্টিতে ধুয়ে রেখেছে। চিকন রাস্তাগুলো সাপের মতোই আঁকাবাঁকা হয়ে গ্রামের মাঝ দিয়ে গেছে। একটু পরপর দেখা যায় ছেলেরা ফুটবল খেলছে।

গ্রাম দেখতে দেখতে হাদারঘাট পৌঁছে যাবেন। হাদারঘাট বাজারটি খুব একটা বড় নয়, আবার ছোটও নয়। মোটামুটি সবই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। তবে খাবার না নিয়ে যেতে অনুরোধ করব। বিছানাকান্দি প্রকৃতির কোলে জেগে উঠেছে। সেখানে পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি ফেলে কেন জায়গাটি অপরিষ্কার করবেন?

হাদারপার বাজারেই বিছানাকান্দি যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়। সুন্দর বেশভূষা দেখে মাঝিরা দুই হাজার টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না।

নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হলে ভালো। দরাদরি করে এর চেয়ে কমে পেলে ভালো, তবে অবশ্যই এর বেশি দামে যাবেন না। এর চেয়ে হেঁটে যাওয়া ভালো। কারণ অ্যাডভেঞ্চার করতে চাইলে হেঁটে যাওয়ার বিকল্প নেই।

ওই দেখা যায় মেঘের সারি ওই দেখা যায় মেঘালয়… মেঘালয়ের টানেই আপনি হাঁটবেন… শত পরিশ্রমেই আপনি হাঁটবেন…। যদি হেঁটে বিছানাকান্দি যান তাহলে আপনাকে এ রকম কয়েকবার নৌকা দিয়ে পার হতে হবে। খালগুলো আগে শুকনো থাকে। তবে বৃষ্টি পানির অভাব নেই।

‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে…’- ছোটবেলার কবিতার সাথে ছবির অনেক মিল। বৃষ্টি হলে বিছানাকান্দি যেতে অনেক কষ্ট হবে। কারণ বৃষ্টিতে হাঁটুপানির খালগুলো সাঁতারপানি হয়ে যাবে। আবার বৃষ্টির দিনে নৌকা পাওয়া মুশকিল।

তবে যত কষ্টই হোক, যেতে পারবেন। একটু কষ্ট না করলে অপরূপ সুন্দর উপভোগ করাই বৃথা।
বাংলাদেশের শেষ প্রান্ত। বিজিবির একটি অফিস আছে একদম শেষ মাথায়। বিছানাকান্দি নামার আগে অবশ্যই তাদের সাথে পরামর্শ ও অনুমতি নিয়ে নেবেন।

যারা হেঁটে বিছানাকান্দি যাবেন তারাই একমাত্র সুন্দর ঝরনাটি দেখতে পাবেন। মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা। অনুমতি না নিয়ে ভারতের মাটিতে চলে যাওয়া- অবশ্যই বিপজ্জনক হতে পারে। তা ছাড়া এখানে ছবি তোলা অপরাধ।

বিছানাকান্দি। এত সুন্দর! খুশিতে সাত-পাঁচ না ভেবে নেমে পড়লে বিপদে পড়তে পারেন। স্রোতের শক্তি কল্পনা করতে পারবেন না। ধপাস করে পাথরে আছাড় খেতে পানে। তাই সাবধান। তবে শীতল জলের পরশে কান্তি ভুলে যাবেন। স্রোত যেদিন বেশি থাকে সেদিন পানিতে নামা অবশ্যই বিপজ্জনক। যদিও অপরূপ পাথুরে নদীতে নামার ইচ্ছে দমিয়ে রাখা মুশকিল। সাঁতার জানলেও পাথরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সুতরাং বেশি স্রোতের সময় বিছানাকান্দিতে সাবধানে নামুন।

সত্যি সত্যিই মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খেতে পারবেন এখানে। কারণ ভারতীয় কাঁঠাল খুব সহজলভ্য। মাদক নেয়ার জন্য দালালেরা এসে আপনাকে সাধতে পারে। সাবধান! ভুলেও কাজটি করবেন না। একটু পরপর বিজিবি-বিএসএফ চেক হয় এখানে। ধরা পড়লে জেল-জরিমানাসহ হয়রানির শিকার হতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, মাদক থেকে দূরে থাকুন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থাকুন। উপভোগ করুন জীবন ও প্রকৃতি। সূত্র : নয়া দিগন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *