Skip to content

প্রকৃতি আমায় টানে : বিপাশা হায়াত

Bipasha

বিপাশা রায়
সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি। সংগ্রহ করেন বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র। নিয়মিত ছবি আঁকেন, বই পড়েন আর গান শোনেন। তিনি অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াত। জামদানি, মসলিন আর তাঁতের শাড়ি তাঁর বিশেষ পছন্দ।

‘দেশভেদে সংস্কৃতি, জীবনাচরণ, ধর্ম, দর্শনের যে বৈচিত্র্য, এটা খুব টানে আমাকে’—বললেন অভিনেত্রী ও চিত্রশিল্পী বিপাশা হায়াত। প্রতিটি দেশের মানুষের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির উপাদানগুলো সংগ্রহে অপার আনন্দ খুঁজে পান তিনি। বিপাশা বলেন, ‘যখন যেখানে ঘুরতে যাই সেখানকার হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।’ হতে পারে সেটা ঘর সাজানোর কোনো শৌখিন সামগ্রী, নয়তো কোনো শিল্পকর্ম। জানালেন, বিভিন্ন দেশের ভাষার বর্ণমালাখচিত স্কার্ফ বা শালের প্রতি একটা বিশেষ আগ্রহ বোধ করেন। ‘একবার সিউলের এক দোকানে কোরীয় বর্ণমালার একটি স্কার্ফ খুব পছন্দ হয়ে গেল। কিনে নিলাম সেটি। এখন যখন সেই স্কার্ফটা গায়ে জড়াই, তখন মনে হয় সেখানকার স্মৃতি যেন ধারণ করে আছি।’ বিপাশার এ রকম সংগ্রহে আরও আছে নানা দেশের মানুষের মূর্তি, মুখোশ, পুতুল, মাথার টুপি, গলার মালা ইত্যাদি।

বিপাশা হায়াতের সঙ্গে কথা হচ্ছিল ঢাকায় তাঁর নিউ ডিওএইচএসের বাসায়। আলাপচারিতায় জানালেন, জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই খুব বেশি বাহুল্য পছন্দ নয় তাঁর। অভ্যস্ত সাদামাটা জীবনযাপনে। পোশাক-আশাকেও থাকে সেই সাদামাটা ভাব। নিজের কাছে পরে আনন্দ লাগে, আরাম লাগে—এমন পোশাকেই তিনি স্বচ্ছন্দ।

Bipasha2শাড়ি তাঁর প্রথম পছন্দের পোশাক। সালোয়ার–কামিজ পরতে হয় প্রয়োজনে। এ ক্ষেত্রে ছোট বোন নাতাশা হায়াতের বুটিক আইরিসেসের নকশা করা পোশাক পছন্দ বিপাশার। আর পছন্দ জিনস, সঙ্গে ফতুয়া ও স্কার্ফ জড়িয়ে স্বচ্ছন্দে বেরিয়ে পড়া। পছন্দ করেন দেশি শাড়ি। কোনো ফিউশন বা কাজ কাপড়ের মূল সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। খাঁটি মসলিন, জামদানি বা তাঁতের সুতি তাঁর প্রথম পছন্দ। বিশেষ কোনো দিনে এমন শাড়িই বেছে নেন। ভালোবাসেন হাতে তৈরি দেশি গয়না পরতে। একবার খুব পছন্দ করে মুঘল মিনিয়েচার দেখে হুবহু তৈরি করে নিয়েছিলেন একটি মুক্তার গয়না। আরেকবার প্রাচীন রোমান গয়না দেখে বানালেন পাথরের গয়না। বললেন, সবই নিজেকে সেই সময়ের সঙ্গে, সেই মানুষদের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য। তবে দেশি সাজপোশাকে নিজের অস্তিত্ব আর শিকড়টাকে খুঁজে পান এই শিল্পী। সাজগোজে স্বাভাবিক চেহারাটা ধরে রাখতে ভালোবাসেন। চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক—এতেই পরিপূর্ণ হয় বিপাশার সাজ।

‘আসলে আমার কাছে বাহ্যিক সৌন্দর্যের চেয়ে মনের সৌন্দর্যটাকেই আসল বলে মনে হয়। অনেক ভুলত্রুটির মধ্যেও নিজের মন বিশালতা খুঁজে পায়, এমন বিষয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করি।’ বললেন বিপাশা। বেশির ভাগ সময় পার হয় ছবি আঁকা, বই পড়া আর গান শোনায়।

দিনের শুরুতে ছেলে আরীব আর মেয়ে আরীশাকে স্কুলের জন্য তৈরি করেন। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পর কিছুটা সময় ঘুমিয়ে নেন। এরপর ব্যস্ত হন ছবি আঁকায়। বেশ খানিকটা সময় ধরে চলতে থাকে এই চর্চা। ছবি আঁকার চর্চাটা তো করতেই হয় এই চিত্রশিল্পীকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন পেইন্টিংয়ে। ৮ আগস্ট থেকে গুলশানের বেঙ্গল লাউঞ্জে শুরু হয়েছে তাঁর একক চিত্র প্রদর্শনী—স্মৃতির রাজ্যে। ২৯ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। তাই এখন নিয়মিত যান নিজের চিত্র প্রদর্শনীতে।

এমনিতে ছেলেমেয়ে স্কুল থেকে ফিরে এলে তাদের সঙ্গেই কাটে বিপাশা হায়াতের বাকিটা সময়। সবাই মিলে কখনো স্টার সিনেপ্লেক্স, কখনোবা বাসায় বসে যান ছবি দেখতে। অবসর পেলে স্বামী অভিনেতা ও স্থপতি তৌকীর আহমেদ এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে চলে যান রাজেন্দ্রপুরের নক্ষত্রবাড়িতে। নিজেদের গড়ে তোলা এই রিসোর্টে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটিয়ে আসেন কয়েকটা দিন। আবার দেশের বাইরেও একেবারে প্রকৃতির মধ্যে কাটিয়ে আসেন এক বা দুই সপ্তাহ বিপাশা বলেন, প্রকৃতির বিশালতার মধ্যে মানুষ বোঝে সে কত ক্ষুদ্র। তখন নিজের ভেতরকার অন্ধকারগুলো যেন হারিয়ে যায়। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা যায়।

ছেলেমেয়েদের নিয়ে বৃষ্টির পানিতে ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ, গাছের সবুজ পাতার স্পর্শ, ফুলের ঘ্রাণ, পূর্ণিমার চাঁদ দেখাতেই যেন জীবনের সব রং খুঁজে পান বিপাশা হায়াত। সূত্র : প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *